ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর

আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্র ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন

প্রকাশিত: ০৩:১৯, ২৯ নভেম্বর ২০১৬

আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্র ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন

গত ২২ ও ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের ২০তম অধিবেশনে দলটির ঘোষণাপত্র উপস্থাপিত ও সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। এর আগে ২৯ ডিসেম্বর ’১২ সালে ১৯তম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। সেই কাউন্সিলে গৃহীত ঘোষণার ধারাবাহিকতা অনুসরণে এবারকার ঘোষণাপত্রটি তৈরি করা হয়। তেমনি ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচনকে সামনে রেখে গৃহীত আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত আর্থ-সামাজিক লক্ষ্যাদির সঙ্গে সাযুজ্য রেখে এবারের ঘোষণাপত্রটি অধিকতর তথ্য-উপাত্ত বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করে সুনির্দিষ্ট অবয়বে প্রণয়ন করা হয়। জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রথম প্রধানমন্ত্রিত্বকালকে (১৯৯৬-২০০১) বাংলাদেশের স্বর্ণযুগ হিসেবে ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহার বৈশিষ্ট্যায়িত করে। এই বছরের ঘোষণাপত্রে এই পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ থেকে এখন পর্যন্ত সময়ের উন্নয়ন কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে আগামীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের লক্ষ্য ও করণীয় সকল বিষয় উপস্থাপিত হয়। ঘোষণাপত্রে বলা হয়, বঙ্গবন্ধুর আমৃত্যু লালিত স্বপ্ন সোনার বাংলা এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করে জ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার অগ্রগতি অব্যাহত রাখা এবং এই প্রক্রিয়ায় ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের সমপর্যায়ে বাংলাদেশকে দাঁড় করানোই হবে আওয়ামী লীগের মৌল লক্ষ্য। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে সঠিক দূরদৃষ্টিতে এদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণ ও তার ভিত্তিতে সামুদ্রিক সম্পদ জনগণের কল্যাণে আহরণের যে আইনী ভিত্তি ও রূপরেখা দিয়েছিলেন তার ভিত্তিতে এই প্রথমবার এ সম্পদ আহরণ ও ব্যবহার দেশের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। ঘোষণাপত্রে বলা হয়, এসব লক্ষ্য অর্জনের জন্য অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার বার্ষিক বর্তমান শতকরা ৭.১১ ভাগ হতে নূ্যূনপক্ষে শতকরা ৮ ভাগে উন্নীত করা হবে। নীল অর্থনীতি বা ব্লু ইকোনমির আওতায় সমুদ্র সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার অর্জন করতে হবে। এই ঘোষণার অর্থবাহনে প্রকাশ হয় দেশের সার্বিক সঞ্চয় হার মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপির বিদ্যমান শতকরা ৩২ ভাগ থেকে ৩৬-এ উন্নীত করতে হবে এবং এর সঙ্গে সাযুজ্য রেখে বিনিয়োগের হার মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের এখনকার শতকরা ২৮ থেকে ৩৪ ভাগে উঠাতে হবে। সরকারের বিনিয়োগ বিদ্যমান মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের শতকরা ৭.৬ ভাগ থেকে শতকরা ১০ ভাগে উন্নীত করে ব্যক্তি-বিনিয়োগ যথাযথ মাত্রায় ও গতিতে প্রসারিত করার জন্য সকল ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক অবকাঠামো সৃষ্টি করতে হবে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ৭ বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ও প্রগতি পৃথিবীর ‘উন্নয়ন বিস্ময়’ হিসেবে যেভাবে পরিচিতি লাভ করেছে, তার উত্তরসূরি হিসেবে আমাদের সকলকে আরও ব্যপ্ত, গতিশীল ও সাম্যধর্মী আর্থ-সামাজিক প্রক্রিয়া ক্রমাগতভাবে ও গতিতে সামনে নিয়ে যেতে হবে। ঘোষণাপত্রে বলা হয়, আগামী বছরগুলোতে প্রবৃদ্ধির এই মাত্রায় বাড়াকে ভিত্তি করে সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জনগণের মৌলিক চাহিদা যথাÑ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবা, কর্মসংস্থান, যথার্থ মজুরি ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এসব লক্ষ্য অর্জনে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের বিস্তৃতির সঙ্গে গত বছর জাতিসংঘে গৃহীত টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যাদি অনুসরণ করতে হবে। এই প্রক্রিয়া হবে সর্বজন অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, যা জনগণকে এই পরিবর্তনের অন্তর্ভুক্ত ও অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করবে। বাংলাদেশ ২০১৫ সালে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য নিশ্চয় গ্রহণ করেছে। এসব লক্ষ্য নির্ধারণে ড. কাজী খলীকুজ্জমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ২০১৫ পর্যন্ত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ক্ষুধা ও দারিদ্র্য নিরসন এবং অন্যান্য সামাজিক সূচকের অধিকাংশকে লক্ষ্য হিসেবে অর্জনের ধারাবাহিকতায় টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য নিশ্চয় ২০৩০ সালের মধ্যে অর্জন করে বাংলাদেশ নিজেকে সকল দেশের জন্য অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণাপত্রে ব্যক্ত করা হয়। সহস্রাব্দ উন্নয়ন কার্যক্রমের সমাপনে বাংলাদেশ অন্যতম প্রধান অর্জনকারী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে (গত ২১ নবেম্বর বাংলাদেশের পরিকল্পনা কমিশন এই বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছে)। এ স্বীকৃতির বলে ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যকে গ্রহণ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এর ভিত্তিতে জননেত্রী শেখ হাসিনার ভাষায় বাংলাদেশ হবে একটি ‘শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ ও উন্নত জনপদ’। শেখ হাসিনার ভাষায় বিবৃত দেশের এই লক্ষ্য আওয়ামী লীগ কাউন্সিল অধিবেশনে সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করেছে। ঘোষণাপত্রের নির্যাস হিসেবে বলা যায়, সরকার পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ ২০১৬ থেকে শুরু করে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে সামষ্টিক উপলব্ধির ভিত্তিতে দারিদ্র্য বিমোচনমূলক মুদ্রাস্ফীতিবিহীন উঁচু প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য গ্রহণ করেছে। ঘোষণাপত্রের রচয়িতারা যেমনটি বলেছেন, এই লক্ষ্য বক্ষ্যমাণ সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ইতোমধ্যে সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম হিসেবে অববায়িত হয়েছে। এই পরিকল্পনায় দারিদ্র্য বিমোচনকে লক্ষ্য হিসেবে অনুসরণ করার প্রক্রিয়ায় প্রবৃদ্ধি ও প্রযুক্তির সঙ্গে কর্মসংস্থানের বিস্তৃতি ঘটানোর কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সকলের জন্য স্বাস্থ্যসেবা পরিব্যপ্ত করে জনগণকে কর্মক্ষম জীবনের নিশ্চয়তা প্রদান এবং সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা ও মেধার আলোকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক বিস্তৃত উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে সকলের জন্য মেধা ও পরিশ্রমের নিরিখে নিজেকে বিকশিত করার সুযোগ অবারিতকরণ। বলা হয়েছে অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় বাড়িয়ে প্রবাসীদের থেকে অধিকতর অর্থ প্রেরণ আকর্ষিত এবং সার্বিক সঞ্চয়কে নিপুণ বিনিয়োগে রূপান্তর করে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও বর্ধিত রফতানি আয়কে অব্যাহতভাবে এবং ক্রমবর্ধনশীল হারে অধিকতর ও নিপুণতর বিনিয়োগ ও উৎপাদন, ফলত সকল জনগণের কুশলে সমৃদ্ধির উপকরণ এনে দেয়ার সক্ষমতা দেয়া হবে। এই প্রক্রিয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থার নিবিড়তা বাড়িয়ে ও তথ্যপ্রযুক্তির সর্বাত্মক বিস্তারণ ঘটিয়ে এবং সারাদেশকে এই প্রক্রিয়ায় একটি তথ্য-সমুজ্জ্বল সদা স্পন্দনশীল ও সম্প্রসারণক্ষম একক বাজারে রূপান্তর করা হবে। এই পথে অধিকতর উৎপাদন যাতে অযৌক্তিকভাবে অভ্যন্তরীণ ভোগ বা অবক্ষয় না বাড়ায় সেদিকে দৃষ্টি রেখে সঞ্চয়ের ক্রমবর্ধমান অংশকে উৎপাদনশীল বিনিয়োগে অববায়িত করে পুরো প্রক্রিয়াটিকে ক্রমবর্ধনশীলতা দেয়া কর্মানুগ হবে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও সম্পূরক কার্যক্রম হিসেবে যোজিত হবে ২০১৪ সালে গৃহীত আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার। ঐ ইশতেহার অনুসরণ করে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি, কৃষি উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনা, কৃষি গবেষণা ও কৃষির আধুনিকায়নে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া, দেশজ সকল প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদের মিতব্যয়ী আহরণ, সর্বাত্মক ব্যবহার ও সুষম উন্নয়ন এবং এ সকল অর্জনের সহায়ক শক্তি হিসেবে দেশের সর্বত্র সুশাসন, গণতন্ত্রায়ন ও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের আলোকে শান্তি ও স্থিতিশীলতা সময় ব্যপ্তভাবে অর্জন করা হবে। ২০১৪ সালের এই নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ২০১৯ পর্যন্ত এই সকল লক্ষ্য অর্জনে আওয়ামী লীগ জাতির কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই প্রক্রিয়ায় অন্যতম ভিত্তি হিসেবে ২০২২ সালের মধ্যে ন্যূনপক্ষে ২৫০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন নিশ্চিত করা হবে। এই মাত্রায় বিদ্যুত উৎপাদন ও সরবরাহকরণ যথার্থভাবে সেচ সম্প্রসারণকরণে, শিল্প উৎপাদন বিস্তৃতকরণে এবং সর্বোপরি একটি আত্মশক্তিতে বিশ্বাসী কুসংস্কার ও গোঁড়ামিমুক্ত আলোকোজ্জ্বল সমাজ প্রতিষ্ঠিত করবে। এই শেষোক্ত লক্ষ্য অর্জনে বিদ্যুত উৎপাদনকে বেসরকারী বিনিয়োগের জন্যে উন্মুক্তকরণ আওয়ামী লীগ সরকারের এক যুগান্তকারী এবং দ্রুত ফলদায়ক সিদ্ধান্ত হিসেবে ইতোমধ্যেই প্রতিভাত হয়েছে। ঘোষণাপত্রে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ঘাত-অভিঘাতসমূহের সময়ান্তরিক বিশ্লেষণ করে বলা হয়েছে দেশের উন্নয়ন মূলত রাজনৈতিক অঙ্গীকার, নেতৃত্ব ও সাযুজ্যপূর্ণ নীতিমালার গভীর সংমিশ্রণ। এই প্রেক্ষিতে দেশের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের প্রধান সম্পদ হিসেবে শিরোপা দেয়া হয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। কার্যকরণ সূত্র অনুযায়ী বলা হয়েছে, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার পথে প্রধান সম্পদ হিসেবে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সর্বজনীন স্বীকৃতি দেয়া তার সৎ, ন্যায়নিষ্ঠ ও প্রাজ্ঞ নেতৃত্বের মোড়কে সংঘবদ্ধ হয়ে সকলের এগিয়ে যাওয়া ঘোষণাপত্রে বিবৃত আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মৌল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবে। এর জন্য প্রয়োজন হবে সকল পর্যায়ে আলোচনাভিত্তিক ঐকমত্য গড়ে তোলা এবং দেশের উন্নয়নে নিবেদিতপ্রাণ কর্মী হিসেবে সকলের এগিয়ে আসা। সম্মেলনের শেষ দিন জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সর্বসম্মত ও সর্বজনীন সমর্থনভিত্তিক সভাপতি হিসেবে পুনর্নির্বাচন এবং তার নেতৃত্বে মুষ্টিবদ্ধ হাজার হাজার নেতাকর্মীর সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি উন্নয়নের এই শর্ত পূরণ করেছে বলা চলে। ঘোষণাপত্রে অবলিখিত অবয়বে নির্দিষ্টকৃত আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে ন্যূনপক্ষে ৪টি শর্ত পূরণের কথা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা যায়। এক, অর্থনীতির দ্রুত ও বিস্তৃত উন্নয়নের জন্যে প্রয়োজন হবে অভ্যন্তরীণ সঞ্চয়কে অধিকতর নিপুণতার সঙ্গে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগের জন্য সঞ্চালন। সমকালে এ দায়িত্বটি অধিকতর সম্যকভাবে পালন করার পরিধি বিস্তৃত। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানাদি কর্তৃক আর্থিক মাধ্যমায়নের কাজ অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে মহার্ঘ বলে প্রতীয়মান। আমানতের ওপর প্রদানীয় সুদের হার সাধারণভাবে উঁচু। প্রদত্ত ঋণের ওপর ধার্যকৃত সুদ অধিকতর উঁচু এবং আমানতের ওপর প্রদানীয় সুদ ও প্রদত্ত ঋণের ও বিনিয়োগের ওপর আদায়করণীয় সুদ বা ফিরতির মধ্যে বিদ্যমান বিস্তৃতি বা ফারাক ব্যাংক ও আর্থিক ব্যবস্থার কর্মকরণে আপেক্ষিক অনিপুণতার পরিচয় বহন করছে। এই বিস্তৃতি কমিয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাজ নিপুণতর করতে হবে। এই লক্ষ্যে পুরো ব্যাংকিং ও আর্থিক ব্যবস্থাকে যথাযথভাবে পরিমার্জন করতে হবে। একই সঙ্গে শেয়ারবাজার ও বন্ড বাজার প্রসারিত করতে হবে এবং নতুন উদ্যমকে সমর্থন দেয়ার জন্য ঝুঁকি মূলধন (াবহঃঁৎব পধঢ়রঃধষ) প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। দুই. সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অন্তর্নিহিত অনুকল্প হিসেবে ক্রমবর্ধমান মূলধন উৎপাদন হার (রহপৎবসবহঃধষ পধঢ়রঃধষ ড়ঁঃঢ়ঁঃ ৎধঃরড়) ৪.৪-এ অনুকল্পিত হয়েছে (সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, পরিচ্ছেদ-২)। সামষ্টিক বিশ্লেষণে এই হার যথা ঈপ্সিত দক্ষতার প্রতিফলক নয়। জাতিগতভাবে সিঙ্গাপুর কিংবা জার্মানির অনুসরণে দক্ষতা বাড়ানোয় দেশের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কাঠামো যথাযথভাবে সাজিয়ে এই ক্রমবর্ধমানীয় মূলধন উৎপাদ হার ন্যূনপক্ষে ৩-এ নামিয়ে এনে অর্থাৎ মূলধনের উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে অর্থনীতির সার্বিক উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। সমকালে বাংলাদেশে ১৫-৬০ বছর বয়স্ক বা কর্মক্ষম জনশক্তি উচ্চতর ক্রমবর্ধমানীয় উৎপাদনশীলতা অববায়িত দক্ষতা অর্জন করার সক্ষমতা নিয়ে সাম্প্রতিককালে যে জনমিতিক সুবিধা অর্জন করেছে বলে বলা হয় তা সর্বাত্মক মাত্রায় প্রযুক্ত করতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় অধিকতর সংখ্যায় নারী শ্রমিকের সার্বিক উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের মাত্রা বাড়াতে হবে। এর ফলে একই মাত্রায় বিনিয়োগ থেকে উৎসারিত অধিকতর উৎপাদন তথা প্রবৃদ্ধির হার উচ্চতর হবে। তিন. সাম্প্রতিককালে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদনে (মাছ ও মাংসসহ) অভূতপূর্ব পারদর্শিতা ও সাফল্য দেখিয়েছে। এক্ষেত্রে কৃষি বিষয়ক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ এবং গবেষণা আশাতীতভাবে ফলবতী হয়েছে। ওয়াকিফহাল মহলের ধারণা উফশী বীজ ও সুষম সারের ব্যবহারের প্রক্রিয়ায় চাষীরা আশাতিরিক্ত সচেতনতা ও নিপুণতা দেখিয়ে ফলত কৃষি ক্ষেত্রে সবুজ বিপ্লবের প্রায় শেষপ্রান্ত সীমা অতিক্রমের পথে রয়েছে। এই প্রেক্ষিতে সীমিত চাষযোগ্য ভূমির কারণে সবুজ বিপ্লব-উত্তর কৃষি গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও দ্রুত গতিতে প্রয়োগ করার প্রয়োজন দেশের সামনে দাঁড়িয়ে গেছে। এর সঙ্গে প্রয়োজনীয় উপকরণ হিসেবে যোগ হয়েছে কৃষি ক্ষেত্রে উৎপাদিত পণ্যাদির প্রযুক্তিভিত্তিক প্রক্রিয়াজাতকরণ, মূল্যের স্থিতিশীলতা অর্জন, পণ্য বিনিময়াগার ও ভবিষ্যত বাজার সৃজন এবং রফতানি বাজার বাড়ানো। কৃষির সাম্প্রতিক সফলতার প্রেক্ষিতে উপরোক্ত ক্ষেত্রে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পরিকল্পনা ও কৃষিবিদদের অগ্রসর হতে হবে। চার. ব্যক্তি-খাতকে উন্নয়নের সারথী হিসেবে প্রযুক্ত করে সফলতা অর্জনের পথে ন্যূনপক্ষে ২ ক্ষেত্রে আইনী নিশ্চয়তা দেয়া এবং প্রসারিত করা প্রয়োজন। আইন এবং আইনের শাসন প্রক্রিয়ায় ব্যক্তি-সম্পদ রক্ষাকরণ এবং ঠিকা সম্পর্কিত সকল দায়-দায়িত্ব নির্বিঘেœ, প্রায় নিখরচায় এবং দ্রুততার সঙ্গে বলবৎ করা ব্যক্তি-উদ্যোগ বিস্তৃত ও সফলকরণের জন্য প্রয়োজন। এই প্রয়োজনের দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের আইন, বিচার ও প্রশাসন ব্যবস্থা ও প্রক্রিয়াকে অধিকতর সচেতন ও সক্রিয় হতে হবে। এ কাজটি করার জন্য চেতনাবোধ সৃষ্টি করা এবং বিচার ও প্রশাসন প্রক্রিয়াকে নিপুণতর করা একটি অদৃশ্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচনা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এই প্রেক্ষিত ও লক্ষ্যে ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত আর্থ-সামাজিক লক্ষ্যাদি বাস্তবায়নে জাতিকে, বিশেষত বিচার ও প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা পালনে অধিকতর সচেতনভাবে এবং দ্রুততার সঙ্গে অগ্রসর হতে হবে। বর্ণিত ৪টি শর্ত পূরণের কথা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে ঘোষণাপত্রে পরোক্ষভাবে উল্লিখিত হয়েছে। পরোক্ষভাবে উল্লেখ করার কারণে এই ৪ ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার প্রয়োজনীয়তা কম- এ কথা স্বীকার করার কোন যুক্তিগত কারণ নেই, বরং ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত এবং গৃহীত আর্থ-সামাজিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা পূর্ণাঙ্গভাবে ও দ্রুততর গতিতে অর্জনের উদ্দেশ্যে এদিকে নীতিনির্ধারক ও কর্মীরা যথা প্রয়োজন দৃষ্টি দেবেন বলে আশা করা যায়। বাংলাদেশে ৬০-এর দশক হতে শুরু করে আওয়ামী লীগই একমাত্র রাজনৈতিক দল যা সময়ান্তরে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও কল্যাণ কার্যক্রম তার কর্ম-পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করে এসেছে। (দ্রষ্টব্য: নূহ-উল-আলম লেনিন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ: সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও নির্বাচিত দলিল ১ম ও ২য় খণ্ড) এই অন্তর্ভুক্তি অন্যান্য রাজনৈতিক দলের তুলনায় আওয়ামী লীগের চেতনাবোধ ও দৃঢ় সংকল্প প্রতিভাত করেছে। এর আলোকে নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, সকল প্রকার চ্যালেঞ্জকে সফলতার সঙ্গে মোকাবেলা করার লক্ষ্যে ও দায়িত্ব থেকে আওয়ামী লীগ কোনদিনই সরে যাবে না। প্রাজ্ঞ নিরিখ, গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রাইস, ওয়াটার হাউস ও কুপারসের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে বাংলাদেশ তার প্রক্ষেপিত পথে এগিয়ে গেলে ২০৫০ সালের মধ্যে মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়াকে পেছনে ফেলে পৃথিবীর ২৩তম বৃহৎ অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হবে। লেখক : সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক মন্ত্রী
×