ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

তৃপ্তি বালা

অভিমত ॥ নগরবাসীর স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৩:১৮, ২৯ নভেম্বর ২০১৬

অভিমত ॥ নগরবাসীর স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে

দেশের চিত্র যে কী সঠিকভাবে তা হয়ত বলা যাবে না। কিন্তু রাজধানীর পথ চলতে পরিষ্কার যে প্রশ্নটি মাথায় আসে তা হলো- নগরবাসী কি যক্ষ্মা রোগে ভুগছেন? ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনকালে এ রকমই এক মন্তব্য করেছিলেন এক ইংরেজ কর্তা, হোল ইন্ডিয়া ইজ সাফারিং ফ্রম টিউবারকুলোসিস! চিকিৎসক, অচিকিৎসক, শাসক, আমজনতা নির্বিশেষে যক্ষ্মা রোগের অন্যতম লক্ষণ সম্পর্কে কমবেশি অবগত। কফ, খুকখুক কাশি, হাল্কা জ্বর, আর বুকে ব্যথার সঙ্গে কফ নিষ্কাশন এ জাতীয় রোগীর অন্যতম লক্ষণ হয়ে দাঁড়ায়। নগরীর পথে রাস্তাঘাটে প্রতি মুহূর্তে যে দৃশ্যটি পরিলক্ষিত হয় তাতে তো এ ভাবনা অমূলক নয় যে, নগরবাসী কি যক্ষ্মা রোগে ভুগছেন? চিকিৎসা বিজ্ঞানের দিক থেকে বিষয়টি হয়ত অতখানি গুরুত্বপূর্ণ না-ও হতে পারে, মানে যতসংখ্যক লোক নগরীর পথে দিনে-দুপুরে- রাতে কফ, থুথু ছিটিয়ে যাচ্ছেন- তার বৃৃহৎ একটি অংশই যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত নন। তবে বিষয়টি উড়িয়ে দেয়াও যায় না এবং অসম্ভব নয় যে, এর একটা অংশ সত্যিই রোগটি বহন করে চলেছেন। আমাদের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে অসচেতনতার কারণে এবং অনেক সময়ে সঠিক জরিপের অভাবেও অনেক তথ্য অগোচরে থেকে যায়। সারাবিশ্বে এবং বাংলাদেশে এইচআইভি এইডস ভাইরাসের ক্রমবর্ধমান সংক্রমণে নতুন করে আবার যক্ষ্মা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। জনস¦াস্থ্যের তথা চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়- সন্দেহ নেই। যাত্রাপথে সারাক্ষণই যে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ গলা খাকারি দিয়ে নাক-মুখ ঝেড়ে, কফ- থুথু, পানের পিক ফেলে চলেছেন- তাতে দেশের ভাবমূর্তিও বিনষ্ট হচ্ছে। বেশ ফুরফুরে মন নিয়ে পরিপাটি বেশবাসে হয়ত যাত্রা করেছি অফিসে সকালবেলা। রাস্তায় বেরুতেই দেখা গেল মাঝ বয়সী কোন লোক গলা খাকারি দিয়ে ফেলল খানিক কফ চোখের সামনেই। মনের অবস্থাটা তখন কী দাঁড়ায়, ভাবা যায়? সকালবেলাকার প্রফুল্ল মনটি নিমিষেই দমে যায় নাকি? তারপর অফিসের সারাটা দিনের ঝক্কি তো আছেই। বিশ্বায়নের এই কালে পথিমধ্যে সর্বত্রই আজকাল বিদেশী মানুষজনের বিচরণ। ব্যস্ত নগরীর কর্মব্যস্ত যাত্রাপথে প্রায় সর্বত্রই যদি দৃষ্টিগোচর হয় হোস্ট জনগোষ্ঠীর এবিধ আচরণ.. কোন মতেই তা দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে না। সম্প্রতি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত মেয়রগণ নগরীর সৌন্দর্যবর্ধনসহ নানাবিধ ভাল কাজের উদ্যোগ নিয়েছেন। অনেক প্রতিকূলতার মোকাবেলাও করছেন তাঁরা। সব প্রতিবন্ধকতার মুখেও পড়তে হচ্ছে তাঁদের। কাজ সহজ নয়। এতদিনকার অভ্যাস, বদঅভ্যাস স্বভাবে যে দাঁড়িয়েছে, তার সংস্কার সহজ নয়। যেমন, বদঅভ্যাসের লালন যদি দাঁড়িয়ে যায় আবার অহমে বর্বর অশিক্ষিতের মতো সেটার সংস্কার বড় দুরূহ। কতভাবে কত করেও সোজা আর হয় না। আচার আচরণের পরিবর্তন, মোটিভেশন প্রক্রিয়ার যথার্থ বাস্তবায়নে ন্যূনতম একটা মন এবং মান দরকার। দীর্ঘমেয়াদে সুন্দর অভ্যাসের জন্য শিক্ষার আলোক দরকার। যতদিন না জনগোষ্ঠীকে সে রকম অবস্থায় শিক্ষার আলোকে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে- কঠিন পদক্ষেপের বিকল্প নেই। মনে হয় তাই সুন্দর পরিচ্ছন্ন নগর-দেশ গড়ার জন্য শিক্ষিত সচেতন জনগোষ্ঠীর সহায়তায় নগর পিতাগণকে খানিকটা কঠোর পদক্ষেপের মধ্য দিয়েই যেতে হবে। ভাল কথায় কাজ না হলে কঠোর ব্যবস্থার মধ্য দিয়েই যেতে হবে তাদের। ‘রাস্তায় নোংরা ফেলা যাবে না’-এ জাতীয় প্লাকার্ড, ফেস্টুন, বিলবোর্ড যেমন দরকার, ডাস্টবিনের সংখ্যা বাড়ানো যেমন দরকার, তেমনি দরকার গর্হিত কাজের জন্য শাস্তির বিধান। বাঙালী সকলের মনে-প্রাণে শিক্ষার আলোকপ্রাপ্ত হয়ে ওঠাটা খুবই দরকার। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিটি শিক্ষিতের দেশের উন্নয়ন- বিকাশের কাজে ব্রতী হওয়ার বিকল্প নেই। গর্হিত কাজের জন্য তিরস্কার তথা শাস্তি যেমন দরকার, ভাল কাজের জন্য পুরস্কারেরও বিধান জরুরী। সরকারী-বেসরকারী দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান, কর্তাব্যক্তি থেকে শুরু করে আমজনতার মানোন্নয়নের কাজ এগিয়ে যাক সেই কামনা করি। এ কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষিত সব মানুষ সত্যিই দেশ মাতার কথা ভাবুন এবং সত্যি সত্যিই সাধারণের অভিভাবক হয়ে উঠুন। লেখক : চিকিৎসক
×