ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শেরপুরে মাঠজুড়ে আগাম সবজি

প্রকাশিত: ২৩:০২, ২৮ নভেম্বর ২০১৬

শেরপুরে মাঠজুড়ে আগাম সবজি

নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর ॥ কৃষি, খাদ্য ও শস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত শেরপুরের নকলা উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন আগাম সবজির সমারোহ। এ উপজেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া ৫ টি নদীর চরাঞ্চলসহ সর্বত্র এবার শাক সবজি চাষ হয়েছে। যে কারণে ওইসব নদীর দু’তীরের যেদিকেই চোখ যায়, সেদিকেই শুধু আগাম শাক সবজির সমারোহ চোখে পড়ে। উৎপাদিত সবজির মধ্যে বেগুন, লাউ, করলা, সীম, গাজর, টমেটো, মূলা, ফুলকপি, বাধাঁকপি, শসা, বরবটি ও বিভিন্ন জাতের শাক এলাকার চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলা-উপজেলাসহ রাজধানী ঢাকাতেও সরবরাহ হচ্ছে। ফলে আগাম সবজির বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় ভাগ্যও খুলছে কৃষকদের। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৭শ ৫০ একর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তার মধ্যে কেবল আগাম জাতের সবজি চাষ হয়েছে ৬'শ একর জমিতে। শীতকালীন শাক সবজি চাষির সংখ্যা ২৫ হাজার হলেও আগাম চাষির সংখ্যা ৫/৬ হাজার জন। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, চিথলিয়া, জালালপুর, গজারিয়া, বাছুরআলগা, চকবড়ইগাছি, ভূরদী, বানেশ্বর্দী, ছোট মোজারবাজার, কান্দাপাড়া, গরেরগাও, লাভাসহ প্রায় ২০টি গ্রামেই সবুজ সবজির সমারোহ। আর ওইসব সমারোহ এনে দিয়েছে আগাম সবজির চাষ। কথা হয় বাছুরআলগা গ্রামের সবজি চাষি রাজু মিয়ার সাথে। তিনি জানান, বর্ষা মৌসুমে উপজেলার ৫ টি নদী পানিতে ভরা থাকে। ফলে পলি মাটির তলানি পড়ে, যা শাক সবজি চাষের জন্য অতি উপযোগি মাটি। ওই জমিতে ধান আবাদ করা না গেলেও শাক সবজি চাষ করলে অন্য যেকোন ফসলের চেয়ে ৩/৪ গুন লাভ বেশি পায় কৃষকরা। মৌসুমের সময় সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় শাক সবজির দাম একটু কম থাকে। কিন্তু আগাম শাক সবজির দাম অনেক বেশি থাকায় কৃষকরা আগাম শাক সবজি চাষে ঝুঁকছে। আগাম সবজি চাষি মোকসেদ বলেন, বর্তমানে প্রতি মণ বেগুন ১৭শ থেকে ১৮শ টাকা, শসা ৭শ টাকা থেকে ৮ শ' টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আগাম গুটি করলা চাষি নুরে আলম সিদ্দিক রাজু বলেন, বর্তমানে প্রতি মণ করলা ১৭শ' থেকে ১৮ শ' টাকা করে বিক্রি করছেন। ভরা মৌসুমে যার মূল্য হয় প্রতি মণ ৫শ' থেকে ৬শ' টাকা করে। আগাম টমেটো চাষি সালাম ও আক্তার জানান, যে টমেটো ভরা মৌসুমে প্রতি মণ বিক্রি হয় ১২০ টাকা থেকে ২শ' টাকা করে, সে টমেটোই এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা করে মন। সরেজমিন ঘুরে এ তথ্যও জানা যায়, নকলা উপজেলায় গত বছরের চেয়ে শাক সবজি চাষির সংখ্যা না বাড়লেও বেড়েছে আগাম চাষির সংখ্যা। আগাম সব কিছুর দাম বেশি থাকায় আগামিতে আগাম শাক সবজি চাষির সংখ্যাও অনেক বেড়ে যেতে পারে। আগাম সবজি উৎপাদনে স্থানীয় কৃষকদের পরামর্শ দানসহ সহায়তা করা হচ্ছে এমন তথ্য জানিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর বলেন, ভরা মৌসুমের তুলনায় আগাম ফসলের উৎপাদন অনেক কম হয়। কিন্তু আগাম ফসলে দাম বেশি পাওয়ায় অল্প শ্রমে, কম পুঁজি ও স্বল্প জমিতে লাভ বেশি পায় কৃষকরা। তাই দিন দিন কৃষকরা যে কোন ফসল আগাম করার দিকে ঝুঁকছে।
×