ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রেজওয়ানা আলী

আয়না পুরাণ

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৮ নভেম্বর ২০১৬

আয়না পুরাণ

‘আয়নাতে ঐ মুখ দেখবে যখন...।’ নাচের পুতুল ছবিতে রাজ্জাক নায়িকা শবনমকে গানে গানে প্রেম নিবেদন আরম্ভ করেছিলেন এই লাইনটি দিয়ে। আবার ‘মিরর, মিরর অন দ্য ওয়াল, হু’জ দি ফেয়ারেস্ট অফ দেম অল?’ ডিজনীর অমর এ্যানিমেশন রূপকথা তুষারকন্যায় জাদুর আয়নার প্রতি সুন্দরী রানীর প্রশ্ন। আয়নার সঙ্গে রূপ আর রোমান্টিকতা এমনি মিশে আছে। তবে আয়না শুধু সৌন্দর্য চর্চারই না, অন্দরসজ্জারও চমৎকার উপকরণ। ঠিকঠাক ব্যবহারে ঘরের রূপ খুলে দিতে পারে। জেনে নিন অন্দরসজ্জায় আয়নার কিছু ব্যতিক্রমী ব্যবহার- ঘরে জানালার পরিসর কম? জানালার আকারে কাটা আয়নাকে রুমের দেয়ালে এমনভাবে সেট করুন যেন জানালার মতো এফেক্ট আনে। আয়না আলো ও চারপাশের দেয়ালের রং ও দৃশ্য প্রতিফলন এবং একত্রিত করে রুমে দারুণ পরিবর্তন আনে। আবার বাইরের বাগানের সবুজ সৌন্দর্য ঘরেই আনতে চান? বাগানের ঠিক বিপরীত দেয়ালে মেঝে ছোঁয়া বড় আয়না লাগিয়ে নিন। আয়না ছোট ঘরে বড় পরিসরের আবহ আনে। এটি আলোকে প্রতিফলিত করে বাড়তি আরেকটি আলোক উৎস হিসেবে কাজ করে। এ কারণে ডিজাইনাররা সরু জায়গা বা যেখানে বেশি প্রাকৃতিক আলো পড়ে না যেমন খাবারঘর, করিডোর বা প্রবেশপথে আয়না ব্যবহার করে থাকেন। তবে লক্ষ্য রাখুন আয়না যেন সবসময়ই একটি সুন্দর দৃশ্যমান জায়গার বিপরীতে থাকে। তাতে আয়নাতে সেই দৃশ্যই প্রতিফলিত হবে। এই আয়নাটি ফ্লোরলেন্থ পর্যন্ত হলে ভাল হয়। আয়না ঘরের কেন্দ্রবিন্দু বা ফোকাস পয়েন্ট করে সাজানো যায়। বিশেষত এ্যান্টিক ফ্রেমে একটি সাধারণ আয়না ঘরকে অসাধারণ করে তুলতে পারে। আরেকটি কাজ করতে পারেন- কয়েকটি আয়না নিয়ে দেয়ালে জ্যামিতিকভাবে পাখা, ঘুড়ি, ত্রিভূজ, চতুর্ভূজ বা বৃত্তাকারে বসিয়ে নিন। অন্যরকম শৈল্পিক আবহ আনবে। সঠিক ফ্রেমে আয়না ঘরের চেহারাই বদলে দিতে পারে। ফ্রেম বরফি, হৃদয়াকৃতি, ষড়ভূজ, অর্ধচন্দ্র, ঘর, নৌকা, প্রজাপতি, ফুলপাতা কিংবা সূর্য ইত্যাদি ইচ্ছামতো নিরীক্ষায় গড়তে পারেন। অথবা একপাশে গ্লাসপেইন্ট করিয়ে নিন। ফ্রেমের উপাদানেও কাঠের বা ধাতুর বদলে অন্যকিছু দিন যেমন বাঁশ, বেত, রংচঙে হ্যা-মেইড মোটা কাগজ, তাঁতের কাপড়, কুশিলেইস, মোটা রঙিন গুচ্ছসুতা ইত্যাদি। কাগজের ওপরে ইচ্ছেমতো কবিতার পঙ্কতি বা শিশুদের আঁকা ছবি রাখতে পারেন। নিচে পাটের বা রঙিনসুতার মেঝেছোঁয়া টাসেল বা ঝালর লাগান। তাতে কড়িপুতি, ছোট পুতুল ইত্যাদি ঝুলিয়ে দিন। পাশে খোপ করে রাখুন ছোট শোপিস, মোম, শুকনোফুল। এগুলো বেশি মানায় বাঙালী সাজের ঘরে। বড় ঘর হলে ভারি অলঙ্করণের বড় তামাটে বা ক্রিস্টাল ফ্রেম দিতে পারেন। আভিজাত্য আসবে। একটি পুরো দেয়াল বেছে বেশ ক’টি ছোটবড় চারকোনা কাঁচ দিয়ে বোর্ডে অসমান করে বসিয়ে দিন। সুন্দর টাইলসের মতো দেখাবে। অথবা যে কোন একটি দেয়াল পুরো কাঁচমুড়ে মাঝখানে পেইন্টিং লাগান। আবার পাজলের মতো কেটে একটি আরেকটির খাপে আটকে দিতে পারেন। ছাদের কোনাগুলোতে, মাঝখানে বা যে কোন একপাশ কাঁচ দিতে পারেন। সমতলের বদলে কনভেক্স আয়না ব্যবহার করতে পারেন। ভিন্নতা আনতে অসংখ্য ছোটছোট কাঁচ দিয়ে বড় একটি ফ্রেমে ঘন করে উত্তল আয়নার মতো লাগিয়ে নিন। আয়না একটি দেয়ালে একটিমাত্র না লাগিয়ে কয়েকটি লাগাতে পারেন। খেয়াল রাখবেন এগুলোর পারস্পরিক দূরত্ব যেন বেখাপ্পা না লাগে। সুন্দর একটি আয়না লাগিয়েছেন। কিন্তু যতœআত্তি না হলে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি তো করবেই না বরং নিজেই অসুন্দরতার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। জেনে নিন কীভাবে আয়নাকে সবসময় চকচকে রাখবেন তার কিছু সহজ টিপস- অল্পপরিমাণে বেকিং সোডা ভেজা কাপড়ের বা স্পঞ্জের ওপর ছড়িয়ে আয়নাটা মুছুন। তারপর পরিষ্কার কাপড় আর পানি দ্বারা আরেকবার মুছুন। সবশেষে মোছার তোয়ালে দিয়ে শেষবারের মতো মুছে নিন। সমপরিমাণ ভিনেগার ও পানি নিয়ে মিশ্রণটি আয়নাতে স্প্রে করুন ও মোছার তোয়ালে দিয়ে মুছে নিন। এই মিশ্রণের বদলে সেভিংক্রিমও ভাল কার্যকর। কাঁচে পানির বিন্দু বিন্দু দাগ প্রতিরোধে সেভিংক্রিমের ওপর একটি সুরক্ষা স্তর তৈরি করে অনেকদিন পর্যন্ত আয়না ভাল রাখে। সহজতম উপায় হলো দুমড়ানো খবরের কাগজের ব্যবহার। ভিজিয়ে নিয়ে আয়নার উপর ধীরে বৃত্তাকারে ঘষতে হবে। সঙ্গে ভিনিগারও দিতে পারেন। তবে সব পত্রিকার কাগজ-কালি এক রকম না। কোন কোনটি উল্টা কাগজের ছাপ বা কালো দাগ রেখে যেতে পারে। তাই আগেই অল্পজায়গায় দেখে নেয়া উচিত। আয়না পরিষ্কারে সবসময়ই ডিস্টিলড পানি ব্যবহার করুন। সরাসরি ট্যাপের পানিতে খনিজপদার্থ থাকে যেটা ব্যবহার করলে আয়নায় সরু ফাটাদাগ পড়ে।
×