স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল টি২০) শেষ হওয়ার পরপরই অস্ট্রেলিয়া সফরে যাবে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। মূলত নিউজিল্যান্ড সফরের আগে ২২ জনের প্রাথমিক দল নিয়ে সেখানে কন্ডিশনিং ক্যাম্প করাই লক্ষ্য। কিন্তু এর মাত্র ১২ দিন আগেই আরেকটি ধাক্কা লেগেছে ঘোষিত দলে। দলে থাকা পেসারদের মধ্যে অন্যতম মোহাম্মদ শহীদ। ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে ফিল্ডিং করার সময় শনিবার রাতে পায়ে আঘাত পান চলমান বিপিএলের দি¦তীয় সর্বাধিক উইকেট শিকারি এ পেসার। রবিবার এমআরআই স্ক্যানে তার হাঁটুতে এ্যান্টেরিয়র ক্রুশিয়েট লিগামেন্ট (এসিএল) ইনজুরি শনাক্ত হয়েছে। জাতীয় দলের চিকিৎসক ডাঃ দেবাশীষ চৌধুরী জানিয়েছেন এ ধরনের ইনজুরির কারণে অন্তত ২/৩ সপ্তাহ পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হয়। এরপর পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে। তাই বিপিএল শেষ হয়ে গেছে তার এবং নিউজিল্যান্ড সফরের ব্যাপারে দুই সপ্তাহ পর নিশ্চিতভাবে জানান যাবে। তবে দেবাশীষ জানিয়েছেন অপরিহার্য পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ও নবাগত এবাদত হোসেনের যে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চলছে তা সন্তোষজনক। দেবাশীষ দাবি করেছেন এভাবে অগ্রগতি করতে থাকলে এ দুই পেসারের নিউজিল্যান্ড সফর নিয়ে কোন শঙ্কাই নেই। অবশ্য শহীদ নিজে আশা প্রকাশ করেছেন কিউইদের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে ফেরার ব্যাপারে।
সফরকারী ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সর্বশেষ টেস্ট সিরিজে খেলতে পারেননি শহীদ। সে সময় সাইড স্ট্রেইন থাকার কারণে বাইরে থাকতে হয়েছে। তিনি গত বছর থেকেই জাতীয় দলের টেস্টে নিয়মিত সদস্য। তবে এবার বিপিএল দিয়ে ভালভাবেই ফিরেছেন। ডায়নামাইটসের হয়ে খেলেছেন টানা ৮ ম্যাচ। পূর্ণ ছন্দে বোলিং করে ১২.৪৬ গড়ে ১৫ উইকেট নিয়ে আছেন আসরে বোলারদের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে। কিন্তু হুট করে ইনজুরি আবার হানা দিল। শনিবার বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিরুদ্ধে ম্যাচে ফিল্ডিংয়ের সময় পায়ে আঘাত পেলে মাঠের বাইরে চলে যান তিনি। এরপর আর ফেরেননি। রবিবার এমআরআই করানোর পর তার ইনজুরি সম্পর্কে জেনেছেন বিসিবি চিকিৎসক দেবাশীষ। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে হাঁটুর লিগামেন্টে প্রসারণ ঘটেছে তার। তবে ছিঁড়ে গেলে সেটা বড় ইনজুরি হতো। দেবাশীষ বলেন, ‘গতকাল শহীদ পায়ে আঘাত পায়। আজ (রবিবার) পায়ে স্ক্যান করি। অফিসিয়াল রিপোর্ট এখনও আমরা হাতে পাইনি। তবে আমাদের প্রাথমিক যে পর্যবেক্ষণ তাতে ধারণা করছি এসিএল আংশিক আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। আপাতত আমরা আগামী দুই সপ্তাহের জন্য পুরোপুরি বিশ্রামে রাখব। পরে আমরা পরীক্ষা করে জানাতে পারব কতদিন লাগতে পারে।’
শহীদের ইনজুরির কারণে নিউজিল্যান্ড সফরের জন্য ঘোষিত প্রাথমিক দলে সংখ্যাটা দাঁড়াল চারে। তরুণ মুস্তাফিজের পর এবাদত ও তানভীর হায়দার ইনজুরিতে পড়েছিলেন। তবে ইতোমধ্যেই পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু করেছেন তারা এবং অগ্রগতিও বেশ ভাল। এ বিষয়ে দেবাশীষ বলেন, ‘মুস্তাফিজের সন্তোষজনক অগ্রগতি হচ্ছে। মুস্তাফিজের অগ্রগতি থেকে আমরা খুশি। এবাদতও ৬০/৭০ ভাগ ইনটেনসিটি নিয়েই বোলিং করছে। তানভীর গত পরশু থেকে বোলিং শুরু করেছে। ৭০/৮০ ভাগ অগ্রগতি হয়েছে। এটা ধরে রাখতে পারলে নিউজিল্যান্ড সফরে কোন আশঙ্কা থাকবে না এদের কারও।’ তবে টানা খেলার মধ্যে থাকা ক্রিকেটারদের ইনজুরির পেছনে একটি প্রভাব ফেলে। এ বিষয়ে দেবাশীষ বলেন, ‘খেলায় অংশ নেয়ার কারণেই ইনজুরিগুলো হয়। নিয়মিত খেলার কারণে হয়তো পুরোপুরি ফিরে আসতে কিছুটা সময় বেশি লাগছে। কিন্তু বর্তমান সময় এগুলো খেলার অংশ।’ ৯/১০ তারিখে অস্ট্রেলিয়া সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে জাতীয় দলের। সেক্ষেত্রে শহীদ নিশ্চিতভাবেই দলের সঙ্গে যেতে পারছেন না। কারণ বিশ্রাম নিতেই তার ১০ তারিখ পেরিয়ে যাবে। এরপর পুনর্বাসন প্রক্রিয়া। শুরুতেই তিনি নিউজিল্যান্ড সফরে খেলতে পারবেন কিনা এ বিষয়ে দেবাশীষ বলেন, ‘ইনজুরি থেকে সেরে ওঠার ব্যাপারটি অনেক সময় খেলোয়াড়ের ওপর নির্ভর করে। এটা একেকজনের কিন্তু একেক রকম। অনেকে দ্রুতই রিকোভার করেÑ যেমন মুস্তাফিজ, এবাদত দারুণ অগ্রগতি দেখিয়েছে। আমরা এটা দুই সপ্তাহ পর বলতে পারব শহীদের ঠিক কতদিন লাগবে পুরোপুরি খেলার জন্য প্রস্তুত হতে।’ তবে শহীদ আশাবাদী তিনি ফিরতে পারবেন নিউজিল্যান্ড সফরের টেস্ট সিরিজে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দুই সপ্তাহ আপাতত বিশ্রামে থাকব। এরপর চার সপ্তাহ কাজ করব। আশা করছি নিউজিল্যান্ড সফরে টেস্ট সিরিজে ফিরতে পারব। নিউজিল্যান্ড সিরিজের আশা ছাড়ছি না। আমার হাতে যথেষ্ট সময় আছে। সে লক্ষ্যেই আমি কাজ করব। ইংল্যান্ড সিরিজ মিস হয়েছে এটা মিস করতে চাই না।’