ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘আমি সব সময়েই আপনাকে অনুসরণ করেছি’

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৮ নভেম্বর ২০১৬

‘আমি সব সময়েই আপনাকে অনুসরণ করেছি’

আর্জেন্টিনার বিপ্লবী চে গুয়েভারা ১৯৬৫ সালের ১ এপ্রিল বলিভিয়ার ভয়ঙ্কর জঙ্গল থেকে সবুজ কালিতে বন্ধু ও কিউবার নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রোকে চিঠি লিখেছিলেন। চিঠিতে চে লিখেছিলেন, ‘আমার মৃত্যুটা যদি হয় অন্য কোনো দেশে, তা হলেও আমার শেষ চিন্তাটা থাকবে এই মানুষগুলোকে (কিউবার জনগণ) নিয়ে, বিশেষ করে আপনাকে নিয়েই।’ তখন যাকে বলে, ‘বন্ধু বিচ্ছেদটা হয়েই গিয়েছে ক্যাস্ট্রো আর চে’র। আর বলিভিয়ার জঙ্গল থেকে লেখা সেই চিঠিতেই বন্ধু ফিদেলকে সরাসরি চে জানিয়ে দেন, তিনি আর থাকতে চান না কিউবান কমিউনিস্ট পার্টির কোনো ‘সরকারী’ পদে, বিপ্লবী সরকারের জাতীয় ভূমি সংস্কার প্রতিষ্ঠানের শিল্প দফতরের প্রধানের পদে। একজনের বয়স ৪০, অন্যজনের ২৮। বিত্তশালী পরিবারে জন্ম নিয়ে একজন হাভানা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে পড়তে পড়তেই চলে আসেন কঠিন লড়াকু রাজনৈতিক জীবনে। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান অন্যজন পুরোদস্তুর মেধাবী ডাক্তার হয়েও লোভনীয় জীবনের যাবতীয় হাতছানিকে উপেক্ষা করে বেছে নিয়েছিলেন জল-জঙ্গলের গেরিলা জীবন। বয়সের ব্যবধান, সামাজিক স্তরে দু’জনের পরিবারের অবস্থান, কোনকিছুই রণক্ষেত্রের বন্ধুত্বে চিড় ধরাতে পারেনি। ফিদেলকে সেই চিঠিতে সব ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে চে লিখেছিলেন, ‘আজ আপনার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়ের দিনটির কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। মনে পড়ে যাচ্ছে অনেক কিছুই। মারিয়া আন্তোনিয়ার বাড়িতে আপনার সঙ্গে দেখা হলো। আলাপ-পরিচয় হলো। আপনি বললেন, এসো, এক সঙ্গে লড়ি। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ি। হাত বাড়িয়ে দিলেন আমার দিকে। তার পর আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বটা হয়ে উঠল গাঢ় থেকে গাঢ়তর। কেউ কাউকে ছেড়ে থাকতে পারি না। যেন আত্মার আত্মীয়! তখন আমাদের কোন না কোন কমরেডকে প্রায় প্রতিদিনই যেতে হচ্ছে লাস্ট ফ্রন্টিয়ারে! কে একজন যেন এসে বলল, আমাদের দু’জনের মধ্যে কাকে বেছে নেয়া হবে? আমি আগ বাড়িয়ে বলেছিলাম, আমার নামটাই লিখতে। চেয়েছিলাম, আপনি থাকেন। এখন আমাদের সেই আবেগটা একটু কমেছে, কারণ আমরা আরও পরিণত হয়েছি। কিন্তু আবার সেই একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমি মনে করি, নিজের ভূখণ্ডে কিউবার বিপ্লবে আমার যতটুকু করণীয় ছিল, আমি করেছি। করতে পেরেছি। এখন আপনার কাছ থেকে আমার বিদায় নেয়ার পালা।’ ফিদেলের নেতৃত্ব সম্পর্কে যে তার যে কিছুটা সন্দেহ, সংশয় ছিল, ছিল কিছু মানসিক দ্বিধা-দ্বন্দ্বও, সে কথাও ওই চিঠিতে অকপটেই বন্ধুকে জানিয়েছিলেন চে। লিখেছিলেন, ‘আমার সবচেয়ে বড় ভুলটা ছিল সিয়েরা মায়েস্ত্রার জঙ্গলে গেরিলা যুদ্ধ চালানোর দিনগুলো থেকেই। আপনার ওপর আমি তেমন করে ভরসাটা ধরে রাখতে পারিনি। খুব তাড়াতাড়ি বুঝে উঠতে পারিনি, নেতা ও বিপ্লবী হিসেবে আপনার গুণগুলোও। এখানে আমার কিছু গুরুতর খামতি ছিল।... বলতে লজ্জা নেই, তবে আমি সব সময়েই আপনাকে অনুসরণ করেছি। আর সেটা করার জন্য গর্ব বোধ করেছি। আমি সেই অর্থে তোমার পথেরই পথিক ছিলাম।’ চে মার্কিন সেনাদের হাতে বলিভিয়ার জঙ্গলে প্রাণ হারান ১৯৬৭ সালের ৯ অক্টোবর। Ñআনন্দবাজার পত্রিকা
×