ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

হাভানা ও মায়ামিতে দৃশ্যপটটি ছিল ভিন্ন

ক্যাস্ট্রোর বিদায়ে শূন্যতা

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৮ নভেম্বর ২০১৬

ক্যাস্ট্রোর বিদায়ে শূন্যতা

কিউবার জনগণের জন্য শনিবার সকাল ছিল শোকাবহ। আগের রাতে তারা তাদের অবিসংবাদী নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রোর মৃত্যুর সংবাদটি শুনেছে। অন্যদিকে একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামিতে বসবাসরত প্রবাসী কিউবানরা এ খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে। হাভানার থেকে মায়ামির দূরত্ব অবশ্য বেশি নয়। কিন্তু এই দুই জায়গায় ক্যাস্ট্রোর মৃত্যুর খবরের সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রতিক্রিয়া হয়। ক্যাস্ট্রোর অর্ধশতকের লৌহ কঠিন শাসনামালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কিউবার সম্পর্ক ছিল চরম বৈরী ভাবাপন্ন। খবর এএফপির। ক্যাস্ট্রো ছিলেন আধুনিক কালের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা শাসকদের একজন। ১৯৫৯ সালে এক নায়ক ফুলজেন্সিও বাতিস্তাকে বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করে তার দল ক্ষমতায় এসেছিল। শুক্রবার রাতে তিনি হাভানায় মারা গেছেন। ১০ বছর আগে স্বাস্থ্যগত কারণে ভাই রাউলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন ক্যাস্ট্রো। পুঁজিবাদী আধিপত্য থেকে গত ছয় দশক ধরে কিউবা যেভাবে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছে তার পুরো কৃতিত্বই ছিল বিপ্লবী এই নেতার। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসনে যাওয়া হাজার হাজার কিউবানের দৃষ্টিতে তিনি ছিলেন এক অত্যাচারী কমিউনিস্ট নেতা। বে অব পিগস আক্রমণ, মিসাইল সঙ্কট, কঠোর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, শীতল যুদ্ধ ও শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার দিকে অগ্রসর হওয়া- এগুলো ছিল ক্যাস্ট্রোর সময়কালের উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তবে তিনি আমৃত্যু মার্কিন বিরোধী ছিলেন। আমেরিকার বিরোধিতা থেকে তিনি কখনই সরে আসেননি। ক্যাস্ট্রোর মৃত্যু সংবাদটি যখন তার ভাই কিউবার বর্তমান প্রেসিডেন্ট রাউল ক্যাস্ট্রো শুক্রবার মধ্যরাতে ঘোষণা করেন তার পরপরই মায়ামিতে রাজপথে প্রবাসী কিউবানরা নেমে এসে আনন্দ উল্লাস করে। তারা নেচে গেয়ে পতাকা নেড়ে তার মৃত্যুর খবরটি উদযাপন করে। কিউবান আমেরিকান কমিউনিটির এমন উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ৬৭ বছর বয়সী শিক্ষক পাবলো আরিয়ানসিবো বলেন, ‘ব্যক্তি হিসেবে একজন মানুষের মৃত্যু একটি দুঃখজনক ঘটনা। তবে তার মতো মানুষের আর জন্ম না নেয়াই উচিত। এ রকম লোকের মৃত্যুতে নিকৃষ্ট মানুষগুলোই কেবল দুঃখ করতে পারে।’ কিউবায় জন্মগ্রহণকারী প্রবাসী শিল্পোদ্যোক্তা গ্লোরিয়া এস্তেফান বলেন, ‘আজকের সূর্যটাই নতুন আশা নিয়ে উদিত হয়েছে।’ মায়ামিতে যখন আনন্দে উদ্বেলিত অবস্থা ঠিক তার বিপরীত চিত্রটিই ছিল হাভানায়। সেখানকার মানুষ শোকে প্রায় ভেঙ্গে পড়েছিল। একজন জানালেন ক্যাস্ট্রোর মৃত্যুতে মনে হচ্ছিল যেন তার বাবাকে হারিয়েছেন। ক্যাস্ট্রোর মৃত্যুর পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক কোন দিকে গড়াবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে। বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি প্রথম ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রায় নয় দশক পর এ বছর কিউবা সফরও করেছেন। কিন্তু তার উত্তরসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্প কোন পথে হাঁটবেন তা এখনও নিশ্চিত নয়। কারণ ক্যাস্ট্রোর মৃত্যুর পর তিনি যেভাবে টুইটারে তীর্যক মন্তব্য করেছেন তাতে এটি পরিষ্কার যে হাভানা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে তার কোন আগ্রহ নেই। রিপাবলিকান অনেক কংগ্রেস সদস্যও ক্যাস্ট্রোর মৃত্যুতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আমেরিকার বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করেই ক্যাস্ট্র্রো অনন্য হয়েছেন। সারা বিশ্বে তিনি এক দৃৃষ্টান্ত। বিনা খরচে চিকিৎসা ও শিক্ষার দেশ হিসেবে কিউবার যে পরিচয় সেটিও তার একটি অবদান। এত বড় রাষ্ট্রনায়ক অথচ তার নামে কোন সড়কের নামকরণ করা হয়নি বা তার ভাস্কর্য নেই। পশ্চিম গোলার্ধে প্রথম কমিউনিস্ট রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব ক্যাস্ট্রোর। ক্যাস্ট্রোর শাসনামলে কিউবা একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত হয়, শিল্প-বাণিজ্য রাষ্ট্র্রীয়করণ করার পাশাপাশি পুরো দেশে প্রতিষ্ঠিত হয় সমাজতান্ত্রিক রীতিনীতি।
×