ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বরেন্দ্র অঞ্চলে আলু চাষে ধুম পড়েছে, তবে শুরুতেই বীজে হোঁচট

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৮ নভেম্বর ২০১৬

বরেন্দ্র অঞ্চলে আলু চাষে ধুম পড়েছে, তবে শুরুতেই বীজে হোঁচট

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে আলু চাষের ধুম পড়েছে। তবে শুরুতেই বীজ নিয়ে হোঁচট খাচ্ছেন চাষীরা। চাহিদার সুযোগে হিমাগার কর্তৃপক্ষ ও বহুজাতিক বীজ কোম্পানিগুলো বীজের দাম বেশি নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট দেখিয়ে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী দ্বিগুণ দামে আলু বীজ বিক্রি করছেন বলে চাষীরা অভিযোগ তুলেছেন। গত মৌসুমের মতো এবারো অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করায় আলুর বাম্পার ফলন ও বাজার দর ভাল পাওয়ার আশায় মাঠে নেমেছেন চাষীরা। জেলার মোহনপুর, তানোর, পবা, বাগমারা এলাকার মাঠে মাঠে আলু চাষ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষক। তবে চাষীরা এ বছর শুরুতেই বীজ সঙ্কট রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন। মোহনপুরের আলু চাষী তোজাম্মেল শেখ বলেন, সরকারী রেটে কোথাও বিএডিসি আলু বীজ পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, নিয়ম অনুসারে বিএডিসি বীজ প্রতিকেজি আলু দর ২৮ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করার কথা থাকলেও বিক্রি করছেন প্রতিকেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। আর ব্যবসায়ীরা বীজ সঙ্কট রয়েছে বলে চাহিদা অনুসারে সরবরাহ করছেন না। অপরদিকে স্থানীয় চাষীদের উৎপাদিত আলু বীজ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা দরে। এ বছর ডায়মন্ড আলুর চাহিদা বেশি থাকায় বাজারে এ বীজের দাম আরও বেশি। এছাড়াও ব্র্যাক বীজ, হাইটেক, বায়োটিক, হিরা, শ্যামল বাংলাসহ মালিক সিডস কোম্পানির হল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত বাক্সের বীজ এবং হিমাগার কর্তৃপক্ষ সিন্ডিকেট করে আলুবীজের দাম বৃদ্ধি করেছে। জেলা কৃষি বিভাগের সূত্রমতে, এবছর রাজশাহী জেলায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে ডিলার ও কৃষক পর্যায়ে আলুবীজ বিতরণ শুরু করেছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) আলু বীজ বিভাগ। বিএডিসি রাজশাহীর উপ-পরিচালক (আলুবীজ) কৃষিবিদ জুলফিকার আলী জানান, তাদের হিমাগারে সংরক্ষিত আলুবীজ রয়েছে। ইতিমধ্যে চাষী ও ডিলার পর্যায়ে বিতরণ শুরু হয়েছে। তিনি জানান, বিএডিসির হিমাগারে এবছর ১ হাজার ২৮ টন আলুবীজ সংরক্ষিত রয়েছে। তিনি বলেন, রাজশাহীর হিমাগারে রয়েছে পাঁচ জাতের আলুবীজ। ‘এ’ এবং ‘বি’ ক্যাটাগরিতে এগুলো সংরক্ষণ করা হয়েছে। এ বছর ডায়মন্ড ‘এ’ ৮ হাজার ৩২৩ কেজি, ডায়মন্ড-‘বি’ ৩ লাখ কেজি, কার্ডিনাল- ‘এ’ ৪ হাজার ৩৬০ কেজি, কার্ডিনাল-‘বি’ ২ লাখ ৩৭ হাজার ৮৪০ কেজি, এস্টারিক্স-‘এ’ ৬৮ হাজার ৪৮০ কেজি, এস্টারিক্স-বি ২ লাখ ৩২ হাজার ৪২০ কেজি, কারেজ-এ ১১ হাজার ৪৪০ কেজি, কারেজ-বি ৪৮ হাজার ৬৪০ কেজি, বেলিনি-এ ৬৪০ কেজি, বেলিনি-বি ৪০০ কেজি আলুবীজ রয়েছে। আলুর এসব জাত আগাম, নাবি ও রফতানিযোগ্য। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিকেজি ১৮-১৯ টাকায় চুক্তিভিত্তিক কৃষকের কাছ থেকে এবছর আলুবীজ কিনেছে বিএডিসি। এসব বীজ কৃষক পর্যায়ে বিক্রি হবে প্রতিকেজি ২৮-২৯ টাকায়। সামান্য কমিশনে বীজ বিক্রি করবেন অনুমোদিত ডিলাররা। এসব আলুবীজের সিংহভাগ বিএডিসির মান ঘোষিত। অন্যগুলো বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির প্রত্যয়ন করা। আলুর বস্তায় ট্যাগে এসব উল্লেখ থাকছে। আলু চাষীদের সুবিধায় উচ্চ ফলনশীল আলুচাষের কলাকৌশল সম্বলিত লিফলেট বস্তার ভেতরে দেয়া হচ্ছে। এটি অনুসরণ করলে ভাল ফল পাবেন চাষী। এদিকে, জমিতে আলুবীজ বপনের আগে বীজ শোধনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। কৃষি বিভাগের রাজশাহীর উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালি বলেন, আলু সাধারণত স্বল্পকালীন ফসল। একবার রোগবালাই আক্রান্ত হলে সেরে উঠার আগেই আলু তোলার সময় হয়ে যায়। ফলে আলুবীজ রোপণের আগে শোধন করে নেয়া দরকার। এতে রোগবালাই অনেকাংশে কমে যায়। তিনি বলেন, বিএডিসি ছাড়াও স্থানীয়ভাবে বীজ সংগ্রহ করছেন চাষী।
×