ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাণিজ্যমন্ত্রীর আশাবাদ

ট্রাম্প সরকারের সময়ে দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা বাণিজ্য বাড়বে

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৮ নভেম্বর ২০১৬

ট্রাম্প সরকারের সময়ে দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা বাণিজ্য বাড়বে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নবনির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকে ওবামা সরকার জিএসপি স্থগিত করেছিল, কিন্তু এই সুবিধা পুনর্বহালে ট্রাম্প সরকারের কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকবে না। আগামী মার্চ-এপ্রিলে টিকফা ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকে যোগ দিতে ট্রাম্প সরকারের নিয়োগকৃত ইউএসটিআরের উর্ধতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সফরে আসবেন। তবে জিএসপি ইস্যুতে বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকে জিএসপি স্থগিত করা হয়নি। কী কারণে বাতিল করা হয়েছিল, কী সমস্যা রয়েছে সেটা আমরা খতিয়ে দেখছি। তিনি বলেন, নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং শ্রম অধিকার ইস্যুতে বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে, তবে আরও অগ্রগতি প্রয়োজন। রবিবার সচিবালয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বিনিয়োগ সহযোগিতা কাঠামো চুক্তি-টিকফার বৈঠক আগামী বছরের মার্চ কিংবা এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। গত বছর ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত টিকফার দ্বিতীয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিসেম্বরে ঢাকায় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত করা হয়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত টিকফা বৈঠক তিনমাস পিছিয়ে দেয়াসহ পরবর্তী তারিখ নতুন করে জানানো হবে বলে বাণিজ্যমন্ত্রীকে অবহিত করেন। আগামী ১৩ ডিসেম্বর শুরু হয়ে দু’দিনব্যাপী রাজধানী ঢাকায় টিকফা ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠানের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়েছিল। বৈঠকটি এসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। তোফায়েল আহমেদ বলেন, জিএসপি নিয়ে ট্রাম্পের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকবে না। কিন্তু বর্তমান মার্কিন সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে জিএসপি সুবিধা বাতিল করেছিল। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশের কোন কোন নেত্রীও (খালেদা জিয়া) যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্যের অবাধ বাজার সুবিধা-জিএসপির বিরোধিতা করেছিলেন বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, জিএসপি থেকে আমরা যে খুব বেশি লাভবান হই তা নয়, এটা দেশের একটি সম্মান। জিএসপি না থাকা সত্ত্বেও গত অর্থবছরে ৬ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি বলেন, জিএসপি পুনর্বহালের জন্য ১৬টি শর্ত দেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ তা পূরণ করেছে। স্থগিত জিএসপি ফেরত না পাওয়ার কোন কারণ নেই। রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে আমরা যখন বাংলাদেশের বিভিন্ন কারখানায় যাই, শ্রমিকেরা বলেন, আমরা ভাল আছি। আমার কাছে শ্রম অধিকারের বিষয়টি একটি অস্পষ্ট বিষয় বলে মনে হয়। তবে এ্যাকর্ড এবং এ্যালায়েন্স আমাদের কারখানার কর্মপরিবেশ ভাল বলে সার্টিফিকেট দিয়েছে। তিনি বলেন, জিএসপির জন্য যে শর্তগুলো ছিল আমরা সেটা পূরণ করেছি। কারখানাগুলো ভালভাবেই চলছে। শ্রমিকদের কোন সমস্যা নেই। আমরা কারখানায় যাচ্ছি, শ্রমিকরা কোন সমস্যার কথা বলছে না। অনেক দেশ আছে যাদের জিএসপি পাওয়ার কোন যোগ্যতা নেই অথচ তারা জিএসপি সুবধা পাচ্ছে। আশাকরি, আগামীতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকবে না। যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সরকার গঠন হতে যাচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে। টিকফার সভা হয় মার্কিন বাণিজ্য দফতরের (ইউএসটিআর) সঙ্গে। মার্চ বা এপ্রিলে সুবিধাজনক সময়ে এই সভা হবে। আমরা নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছি। সরকার পরিবর্তন হলেও নীতির খুব একটা পরিবর্তন হয় তা নয়। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার যে ১০০ দিনের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে তার মধ্যে টিপিপি বাতিল করার কথা আছে, এটা ভাল সংবাদ। শ্রমিক সংগঠন নিয়ে আমাদের ওপর সব সময় প্রচ- চাপ থাকত। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভাল। আগামীতে এই সম্পর্ক আরও উন্নত হবে, ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে এবং আমরা আরও রফতানি করতে পারব বলেও আশাকরি। যে উদ্দেশে টিকফা গঠন করা হয়েছিল সেটা এগিয়ে যাবে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেন, বাংলাদেশের সব ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে। উন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাই বাংলাদেশের উন্নয়নের আরও সুযোগ আছে। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পাবে। এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বার্নিকাট বলেন, শ্রমিক সংগঠন কতগুলো আছে সেটা দেখার বিষয় না। দেখতে হবে শ্রমিকরা সংগঠন করতে গিয়ে কোন সমস্যা হচ্ছে কি না। সমস্যা হলে তার সমাধান করতে হবে। বার্নিকাট বলেন, ডিসেম্বরে টিকফা বৈঠক হচ্ছে না। আগামী বছর মার্চ-এপ্রিলে সুবিধাজনক সময়ে এটা হবে। এই সময় নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণে ব্যস্ত থাকবে।
×