ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যাস্ট্রোর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ কিউবা, বিশ্বের কোটি মানুষ অশ্রুসিক্ত

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২৮ নভেম্বর ২০১৬

ক্যাস্ট্রোর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ কিউবা, বিশ্বের কোটি মানুষ  অশ্রুসিক্ত

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ কিউবান বিপ্লবের মহানায়ক ফিদেল ক্যাস্ট্রোর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ কিউবা। অশ্রুসিক্ত বিশ্বের কোটি মুক্তিকামী মানুষ। রবিবার কিউবানরা প্রিয় ক্যাস্ট্রোকে শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছে। ওই দিন ভোর হওয়ার পরপরই হাতে ফুল ও ক্যাস্ট্রোর ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাস্তায় বের হয়ে আসে শোকার্ত কিউবানরা। নারী, শিশু অনেকেই প্রিয় নেতার জন্য কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। অনেককেই বলতে শোনা যায়, ‘কমরেডের মৃত্যু নেই।’ প্রয়াত ক্যাস্ট্রোর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কিউবায় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। শুরু হয়েছে নয় দিনের শোক পালন। কিউবার বাইরে ভেনিজুয়েলা, ভারত, হন্ডুরাস ও চিলিসহ বিশ্বের অনেক দেশে ক্যাস্ট্রোকে স্মরণ করেছে সাধারণ মানুষ। বিশ্বের বহু দেশের কিউবান দূতাবাসে ক্যাস্ট্রোর স্মরণে ফুল দিয়েছে অনেকে। ফিদেলের মৃত্যুর খবর ছাপতে কিউবার কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র দৈনিক গ্রানমা ও যুব কমিউনিস্ট পার্টির ইউভেনতুদ রেবেলডের শিরোনামের রং বদলে ফেলা হয়েছে। গ্রানমার লাল আর ইউভেনতুদ রেবেলডের নীল শিরোনাম ধারণ করেছে শোকের কালো রং। খবর এএফপি, বিবিসি ও আলজাজিরা অনলাইনের। গত শুক্রবার হাভানায় স্থানীয় সময় রাত দশটা ২৯ মিনিটে ৯০ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ফিদেল ক্যাস্ট্রো। তার ছোটভাই, কিউবার বর্তমান প্রেসিডেন্ট রাউল ক্যাস্ট্রো সরকারী টেলিভিশনে এই মহান নেতার মৃত্যুর খবর প্রকাশ করেন। আর ফিদেলের শেষ ইচ্ছানুযায়ী শনিবার তার দেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। সোমবার থেকে লোকজন প্রিয় নেতার স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাতে পারবেন। কার্যত আজ থেকেই শুরু হবে মূল কর্মসূচী। এ জন্য রাষ্ট্রীয় প্রস্তুতিও সম্পন্ন করা হয়েছে। হাভানা ও সান্তিয়াগোতে বড় রকমের সমাবেশের পরিকল্পনা করা হয়েছে। রাজধানী হাভানার লোকজনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে রেভ্যুলিউশন স্কয়ারে সমবেত হওয়ার জন্য। ক্যাস্ট্রোর দেহ ভস্ম নিয়ে যাওয়া হবে সান্তিয়াগো দে কিউবাতে। মূূলত এখান থেকেই ক্যাস্ট্রো বিপ্লবী আন্দোলন শুরু করেন। ক্যাস্ট্রোর নেতৃত্বে তার গেরিলা দল যে পথ ধরে অগ্রসর হয়েছিল সেই পথ ধরেই নিয়ে যাওয়া হবে তার দেহ ভস্ম। আগামী ৪ ডিসেম্বর ক্যাস্ট্রোর দেহভস্ম সমাহিত করা হবে। খবরে বলা হয়েছে, ক্যাস্ট্রোর মৃত্যুর খবর প্রকাশের পর থেকেই রাজধানী হাভানায় বিরাজ করছে শুনশান নীরবতা। হাভানার পানশালাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি মদ বিক্রির কমিয়ে দেয়া হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে বেসবল খেলা। কারণ এই খেলা ফিদেলের অনেক প্রিয় ছিল। হাভানা বিশ্ববিদ্যালয়ে শত শত শিক্ষার্থীকে রবিবার কিউবার বিশাল পতাকা দুলিয়ে ‘ভিভা ফিদেল’, ‘ভিভা রাউল’ সেøাগান দিতে দেখা যায়। ফিদেল এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র ছিলেন। কিউবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন, স্টুডেন্ট এ্যাসোসিয়েশন এবং উইমেন্স ফেডারেশন ফিদেলের স্মরণে ছোট কয়েকটি সভা করেছে। শিক্ষার্থীদের শোক সমাবেশ বাদ দিলে হাভানার জীবন এখন অনেকটাই চুপচাপ। সেনাবাহিনী বা পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিও তেমনভাবে চোখে পড়েনি। রবিবার সকালে হাভানার রাস্তায় অঝোরে কাঁদছিলেন ৮২ বছর বয়সী অরোরা মেন্দেজ। তিনি বলেন, আর কি বলার আছে? প্রিয় ক্যাস্ট্রো আর আমাদের মাঝে নেই এটাই সত্য। তিনি বলেন, ক্যাস্ট্রো আমার কাছে আমার জীবনের চেয়েও প্রিয়। কারণ তিনি আমাদের মুক্তি দিয়েছেন। ১৯৫৯ সালে বিপ্লবের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, এই বিপ্লবের আগে আমরা কেমন ছিলাম? তিনিই তো আমাদের মুক্তি দিয়েছেন। ক্যাস্ট্রো সারাজীবন গরিবদের পক্ষে লড়াই করেছেন। আবার এখন ক্যাস্ট্রোর পর কিউবার ভবিষ্যত নিয়ে অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সরকারী ব্যাংকের কর্মী ইন্দিয়ানা ভালদেস বলেন, ফিদেল ছিলেন আমার রক্ষাকারী। তিনি আমাদের মাঝে সবসময়ই থাকবেন। ক্যাস্ট্রো ছিলেন আধুনিক কালের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা শাসকদের একজন। ১৯৫৯ সালে এক নায়ক ফুলজেন্সিও বাতিস্তাকে বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করে তার দল ক্ষমতায় এসেছিল। পুঁজিবাদী আধিপত্য থেকে গত ছয় দশক ধরে কিউবা যেভাবে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছে তার পুরো কৃতিত্বই ছিল বিপ্লবী এই নেতার। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসনে যাওয়া হাজার হাজার কিউবানের দৃষ্টিতে তিনি ছিলেন এক অত্যাচারী কমিউনিস্ট নেতা। বে অব পিগস আক্রমণ, মিসাইল সঙ্কট, কঠোর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, শীতল যুদ্ধ ও শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার দিকে অগ্রসর হওয়া- এগুলো ছিল ক্যাস্ট্রোর সময়কালের উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তবে তিনি আমৃত্যু মার্কিন বিরোধী ছিলেন। আমেরিকার বিরোধিতা থেকে তিনি কখনই সরে আসেননি ফিদেল।
×