স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ কলেজ জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত ফুলবাড়িয়া ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রবিবার দুপুরের দিকে পুলিশের ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও বেধড়ক লাঠিচার্জের এক পর্যায়ে সংঘর্ষে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আবুল কালাম আজাদ (৫২) এবং সফর আলী (৫৫) নামে এক পথচারী নিহত হয়েছেন। এ সময় শিক্ষকসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কয়েক জনকে আটক করেছে। ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার সৈয়দ নূরুল ইসলামের দাবি, পুলিশের লাঠিচার্জে আবুল কালাম আজাদ ও সফর আলীর মৃত্যু হয়নি।
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এলাকায় র্যাব ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে ময়মনসিংহ ফুলবাড়িয়ার বিভিন্ন পয়েন্টে টায়ার দিয়ে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। কাঠের গুঁড়ি ও বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। রাস্তা ঘাট ফাঁকা হয়ে গেছে। রাতে এ রিপোর্ট লেখার সময় এলাকায় থমথমে ভাব বিরাজ করছিল। আন্দোলনরত শিক্ষকরা জানায়, পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচী অনুযায়ী রবিবার দুপুরে কলেজ থেকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টাধাওয়া থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় পথচারী সফর আলী রাস্তার ওপর পড়ে গিয়ে মারা যান। নিহতের বাড়ি ফুলবাড়িয়ার কুশমাইল কড়ইতলী গ্রামে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আন্দোলনকারীদের ওপর বেধড়ক লাঠিচার্জ করলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা কলেজে অবস্থান নেয়। অভিযোগ, পুলিশ কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। পুলিশের হামলায় উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আবুল কালাম আজাদসহ ১০ শিক্ষক আহত হন। গুরুতর আহত আবুল কালাম আজাদকে চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ কমিউনিটি বেজ্ড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। শিক্ষকদের দাবি, আহত শিক্ষক আবুল কালাম আজাদকে এ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নেয়ার পথে পুলিশ বাঁধা দেয়। পরে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ভ্যানে করে ময়মনসিংহ কমিউনিটি বেজড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সময় মতো তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে না পারায় আবুল কালাম আজাদ মারা গেছেন অভিযোগ আন্দোলনকারী শিক্ষকদের।
এ নিয়ে ফুলবাড়িয়ায় চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে র্যাবসহ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয় এলাকায়। ফুলবাড়িয়া ডিগ্রী কলেজ জাতীয়করণের দাবিতে গত ৪৪ দিন ধরে হরতাল অবরোধ বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ মানববন্ধনসহ স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচী পালন করে আসছে কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলনের সঙ্গে ইতোমধ্যে যোগ দিয়েছে আওয়ামী লীগের একাংশ, মুক্তিযোদ্ধাসহ এলাকার নানা শ্রেণী পেশার মানুষ।