ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পাবনায় তিনদিনের লালন স্মরণোৎসব শেষ

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ২৮ নভেম্বর ২০১৬

পাবনায় তিনদিনের লালন স্মরণোৎসব শেষ

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা ॥ ‘অনন্তরূপ সৃষ্টি করলেন সাঁই, শুনি মানব রূপের উত্তম কিছু নাই’ প্রতিপাদ্য নিয়ে পাবনায় তিনদিনের লালন স্মরণোৎসব রবিবার শেষ হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল পৌর মিলনায়তন প্রাঙ্গণে হাজার হাজার দর্শক-শ্রোতা বাঁধভাঙ্গা আনন্দে বাঙালীর অসাম্প্রদায়িক চেতনার ধারক লালন স্মরণোৎসব উপভোগ করে। সমাপনী দিবসে কবি এ্যাডভোকেট আজিজুল হকের সভাপতিত্বে আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. আল নকীব চৌধুরী ও পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির প্রমুখ। বক্তারা লালনের ভাববাদী দর্শন বর্তমান অস্থির বিশ্বকে শান্তির বিশ্বে রূপ দিতে পারে বলে মন্তব্য করেন। আলোচনা শেষে স্থানীয় শিল্পীরা ছাড়াও বিশিষ্ট লালন সঙ্গীতশিল্পী টুনটুন বাউল সঙ্গীত পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনের আলোচনায় সভাপত্বি করেন, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট হাবিবুর রহমান স্বপন। প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, প্রবীণ রাজনীতিবিদ কমরেড জসীম উদ্দিন মন্ডল। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, পাবনা চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহ সভাপতি মাহবুব উল হক মুকুল, অধ্যাপক আব্দুদ দাইন, সঙ্গীতগুরু আবুল হাশেম ও আব্দুল মালেক সরকার। জসীম মন্ডল বলেন, মতলববাজরা সব সময়ই তাদের বদ মতলব কার্যকরী করার জন্য সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে থাকে। আমরা যদি লালন দর্শন পালন করি বা মনে-প্রাণে ধারণ করি তা হলে এই দেশ সোনার দেশে পরিণত হবেই হবে। আলোচনা শেষে সঙ্গীত পরিবেশন করেন, বাউল সাহাবুল এবং বাউল জহুরা খাতুন। এছাড়াও স্থানীয় শিল্পীরা লালন সংগীত পরিবেশন করেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশিষ্ট সাংবাদিক আবেদ খান এবং বরেণ্য লালন শিল্পী ফরিদা পারভীন প্রদীপ জ্বালিয়ে উৎসবের শুভ উদ্বোধন করেন। লালন স্মরণোৎসবের আহ্বায়ক জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী দিনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবেদ খান বলেন, লালন চিরদিন মানবতার জয়গান গেয়েছেন, আসাম্প্রদায়িক চেতনার পথ নির্দেশ করেছেন। বর্তমান সমাজ বাস্তবতায় লালন উৎসবের মতো আয়োজন নতুন প্রজন্মকে লালনের দর্শন নিয়ে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করবে। লালন দর্শনই পারে অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়েই এদেশের মুক্তি পাগল মানুষ সব কিছু বিসর্জন দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ফরিদা পারভীন বলেন, লালন আমার আমিত্বকে বিসর্জন দিতে বলেছেন। সহজ মানব ধর্মকে অনুসন্ধানের জন্যে পরামর্শ দেন নতুন প্রজন্মের প্রতি। আমাদের দেশে যে সকল সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটছে লালনের গানকে সঠিক ভাবে বুঝলে কোন মানুষের পক্ষে এ ধরনের কর্মকান্ডে অংশ নেয়া সম্ভব নয়। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক কামরুজ্জামান, লালন গবেষক গোলাম রব্বানী, গাজী আব্দুল হাকিম, রেজাউল করিম মনি, নাসির চৌধুরী প্রমুখ। পরে বিশিষ্ট লালন শিল্পী ফরিদা পারভীনের একক লালন সংঙ্গীত পরিবেশনা উপস্থিত শ্রোতা দর্শকদের মুগ্ধ করে।
×