ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

যাত্রা শুরু করল ব্রিকস ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ২৮ নভেম্বর ২০১৬

যাত্রা শুরু করল ব্রিকস ব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর নানা শর্ত আর কর্তৃত্বপরায়ণ নীতির প্রয়োগ ঘটায় বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের মতো ঋণদাতা সংস্থাগুলো। এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সেই সঙ্গে এ অঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়নে ঋণের চাহিদা পূরণেও পুরোপুরি সক্ষম নয় এসব প্রতিষ্ঠান। এর বিপরীতে কিছুটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আর ঋণ চাহিদার প্রয়োজন মাথায় রেখে অবশেষে যাত্রা শুরু করেছে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা ব্রিকস ব্যাংক। তবে উদ্যোক্তা দেশ ভারত-চীনের ভূ-রাজনীতি কিংবা রাশিয়ার মতো দেশের আঞ্চলিক মোড়লিপনাকে পাশ কাটিয়ে কতটুকু স্বাধীন ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে কার্যক্রম চালাতে পারবে এ ব্যাংক? সত্তরের দশক থেকেই উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দেয় ঋণ কার্যক্রমে একক আধিপত্য বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের। ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে শর্ত ও অভ্যন্তরীণ সংস্কারের নানা পরামর্শ মানতে বাধ্য হয় গ্রহীতা দেশগুলো। অভিযোগ আছে, পশ্চিমা প্রভাবশালী কিছু দেশের রাজনৈতিক নানা প্রেসক্রিপশনও চাপিয়ে দেয়া হয় ঋণের শর্ত হিসেবে। তার ওপর বিশ্বের উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর উন্নয়ন কার্যক্রমে যে পরিমাণ ঋণ সহায়তা দরকার, সে চাহিদাও সম্পূর্ণ মেটাতে পারছে না এসব সংস্থা। শুধু এশিয়ার দেশগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নের জন্যই যেখানে দরকার ৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, সেখানে ২ ট্রিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়া যায় এসব সংস্থা থেকে। এ প্রেক্ষাপটেই সমমর্যাদার ভিত্তিতে একজোট হয় দ্বিতীয় সারির উদীয়মান অর্থনীতির পাঁচ দেশ। চীনের নেতৃত্বে রাশিয়া, ভারত, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। চীনে স্থাপন করা হয়েছে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়। প্রথম প্রেসিডেন্ট হয়েছেন একজন ভারতীয়। বোর্ড অব গবর্নেন্সের প্রথম চেয়ারপার্সন হয়েছেন একজন রাশিয়ান। দক্ষিণ আফ্রিকায় স্থাপন করা হয়েছে আঞ্চলিক কার্যালয়। তবে দক্ষিণ এশিয়ার আধিপত্যের রাজনীতিতে ভারত-চীন-রাশিয়ার মতো প্রতিদ্বন্দ্বীর রাজনৈতিক মারপ্যাঁচে কতটুকু সফল হবে এ ব্যাংকের কার্যক্রম? এ বিষয়ে প্রশ্ন আছে অর্থনীতি বিশ্লেষকদেরও। সানেমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘রাজনৈতিক বিরোধ যে কতটা অর্থনৈতিক বিরোধকে প্রভাবিত করতে পারে এ জায়গাটা দক্ষিণ এশিয়াতেই বেশি দেখা যায়। পাকিস্তানকে কেন্দ্র করে ভারত এবং চীনের মধ্যে একটা অস্থিরতা আছে। তারপরও তারা বুঝতে পারছে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ছাড়া তারা কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারবে না।’ বিশ্লেষকদের আশাবাদ, পেশাদারিত্বের সঙ্গেই এশিয়া-আফ্রিকার অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর টেকসই উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে নতুন এ ব্যাংক। সেই সঙ্গে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানদের উচিত কিভাবে সুবিধা নিতে পারে, সে ব্যাপারে যথেষ্ট সুযোগ আছে।
×