ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আরও ৩টি পার্ক করার ঘোষণা মেয়র আনিসুলের

শ্যামলীর শিশুমেলা অবৈধ দখলমুক্ত, সিলগালা

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৭ নভেম্বর ২০১৬

শ্যামলীর শিশুমেলা অবৈধ দখলমুক্ত, সিলগালা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রায় এক যুগ অবৈধ দখলে থাকার পর অবশেষে রাজধানীর শ্যামলীর বেসরকারী শিশু বিনোদন কেন্দ্র ‘শিশুমেলা’ দখলমুক্ত করে সিলগালা করে দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। একই সঙ্গে নাগরিকদের সুবিধার্থে ডিএনসিসি এলাকার বনানী, মগবাজারের নয়াটোলা ও উত্তরায় নতুন আরও তিনটি আধুনিক পার্ক তৈরিরও ঘোষণা দিলেন সংস্থাটির মেয়র আনিসুল হক। শনিবার শিশুমেলার স্থানটি দখলমুক্ত করার সময় মেয়র এ ঘোষণা দেন। এ সময় আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই ডিএনসিরি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় শিশুমেলা পুনরায় চালু করারও ঘোষণা দেন তিনি। এর মাধ্যমে ডিএনসিসি প্রথমবারের মতো কোন প্রকার বাধা ছাড়াই কয়েক শ’ কোটি টাকার সম্পত্তি অবৈধ দখলমুক্ত করল। মেয়রের উপস্থিতিতে ডিএনসিসির দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাজিদ আনোয়ার ও অঞ্চল-৫-এর নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম অজিয়র রহমানের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত শিশুমেলার স্থানটি দখলমুক্ত করেন। এ সময় বিনোদন কেন্দ্রটির বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দুটি প্রবেশপথ সিলগালা করার মাধ্যমে তা দখলমুক্ত করা হয়। এদিকে শিশুমেলা কর্তৃপক্ষের দাবি, তাদের কোন প্রকার নোটিস প্রদান ছাড়াই সিটি কর্পোরেশন তাদের প্রতিষ্ঠানটি দখল করে সিলগালা করে দিয়েছে। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটির পাশাপাশি শিশুমেলার ভেতরে অবস্থিত ১২টি দোকানের মালিক আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। অপরদিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাজিদ আনোয়ার ও অঞ্চল-৫-এর নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম অজিয়র রহমান জনকণ্ঠকে জানান, সিটি কর্পোরেশন থেকে ‘মালিকপক্ষকে’ নোটিস দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা দোকানদারদের বিষয়টি অবহিত করেননি। শনিবার বেলা সোয়া ১১টায় ডিএনসিসি মেয়র আনিসুল হক উপস্থিত হন। এ সময় ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আনোয়ারুল ইসলাম, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ কুদরতুল্লাহ, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোঃ আমিনুল ইসলাম, আইন কর্মকর্তা এসএম মাসুদুল হক, মহাব্যবস্থাপক (পরিবহন) লে. কর্নেল এমএম সাবের সুলতান, মোহাম্মদপুরের ওয়ার্ড কমিশনার তারেকুজ্জামান রাজিব, কাউন্সিলর মোঃ ফোরকান হোসেন, মোঃ নূরুল ইসলাম রতন, মোঃ আবুল হোসেন, মোঃ মোবাশ্বের চৌধুরী, মোঃ মফিজুর রহমান ও মহিলা কাউন্সিলর শামীমা রহমান উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, সিটি কর্পোরেশনের উর্ধতন কর্মকর্তা ও উচ্ছেদ সংশ্লিষ্ট কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন। উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কয়েক প্লাটুন পুলিশ, সিটি কর্পোরেশনের লোডার মেশিন ও বুলডোজার মেশিন শিশুমেলার সামনে সকাল থেকেই প্রস্তুত রাখা হয়। এ সময় মেয়র বলেন, সমাজের প্রভাবশালীদের অনেকেই দখলদার। তারা অন্যের জমি অবৈধভাবে দখল করে নিজের আয়ত্তে রাখে। আমরা বলি এরা চোর, প্রকৃতপক্ষে এসব প্রভাবশালী দুর্বৃত্ত। এদের হাত থেকে কর্পোরেশনের জমি রক্ষা করতে হবে। সাধারণ মানুষের জমি আর দখলে যেতে দেয়া হবে না। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে যে কোনক্রমেই জনসাধারণের জমি অবৈধ দখলকারদের কাছে রাখা যাবে না। তিনি বলেন, শিশুমেলা আজ থেকে বন্ধ। তবে ডিএনসিসির নিজস্ব উদ্যোগে দ্রুত তা খুলে দেয়া হবে। আমরা একটা ‘সিজার লিস্ট’ তৈরি করব। মালামালের কোন ক্ষতি হবে না। আপনারা সাধারণ মানুষের জমি দখল করে আছেন। আজ থেকে আপনাদের এখানে কোন অধিকার নেই। মেয়র বলেন, দীর্ঘ এক যুগ ধরে প্রতি তিন বছরের জন্য এক লাখ ৪৫ হাজার টাকার বিনিময়ে পার্কটি ইজারা দেয়া হচ্ছিল। ইজারা চুক্তি শেষে আমরা পার্কটি দখলের সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু আদালতে একের পর মামলা আর রিটের কারণে আমরা দখলে যেতে পারিনি। এখন আমাদের পক্ষে রায় এসেছে। আমরা জয়ী হয়েছি। তাই পার্কটি দখলে নিয়েছি। ডিএনসিসি জানায়, ১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবর শ্যামলীর শিশু হাসপাতালের পাশে প্রায় ১ দশমিক ৪০ একর ভূমি গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে শিশুপার্ক হিসেবে পরিচালনার জন্য ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নিকট হস্তান্তর করা হয়। পরবর্তীতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন গুলশান-২-এ অবস্থিত একটি পার্ক ও শ্যামলীর একটি পার্কে নিজ খরচে আধুনিক খেলার যন্ত্রাংশ স্থাপন করার জন্য ইজারা দেয়া হয়। এরপর ২০০২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি মেসার্স ভায়া মিডিয়া বিজনেস সার্ভিসেসের পক্ষে গুলশানের ওয়ান্ডারল্যান্ডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জিএমএম রহমানের সঙ্গে এক লাখ ৪৫ হাজার ৭৫৬ টাকার বিনিময়ে তিন বছরের জন্য চুক্তি করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। এছাড়া প্রতি বছর লিজ দেয়া মোট অর্থের শতকরা ১০ ভাগ অর্থ বাড়তি হিসাবে ডিএনসিসিকে প্রদান করতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়। এরপর ২০১২ সালে শিশুমেলা কর্তৃপক্ষ মামলায় হেরে যায়। কিন্তু কর্পোরেশনকে কোন প্রকার ইজারা ফি প্রদান বন্ধ করে দেয়। চুক্তির সময় শেষে চুক্তি নবায়ন না করে ইজারা বাতিল করে শিশুপার্কটি উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয় সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু চুক্তিকারী প্রতিষ্ঠান আদালতে একটি রিট মামলা দায়ের করে। দীর্ঘদিন কোন ইজারার অর্থ প্রদান না করায় সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ আদালতে গিয়ে জানতে পারে যে, মামলাটি শুনানির জন্য আদালতে তালিকাভুক্ত রয়েছে। তবে এ বিষয়ে আদালতের কোন নিষেধাজ্ঞা বা স্থগিতাদেশ নেই। এরপরই ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ স্থানটি দখলমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। এদিকে শিশুমেলার দোকানিরা জানান, উচ্ছেদ বিষয়ে তাদের কোন নোটিস দেয়নি কর্তৃপক্ষ। পার্কের দোকানি নাহার আক্তার জনকণ্ঠকে বলেন, সিটি কর্পোরেশন পার্ক নিয়ে যাচ্ছে এটা আমরা সকালে টেলিভিশনে দেখেছি। অভিযানের বিষয়ে আমাদের কেউ জানায়নি। সিটি কর্পোরেশন তার জমি নিয়ে নেবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের ক্ষতি হবে কেন? আমরা তো দোকানি। তিনি দোকানের মালামাল ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান। অন্যথায় তার কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকার মালামালের ক্ষতি হবে। ইকবাল নামে অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, পার্কের এ দোকানটিই আমার পরিবারের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম। এ দিয়েই আমার ঘরসংসার চলে। দোকানে তিন লক্ষাধিক টাকার মালামাল রয়েছে। এগুলো পচনশীল। ফ্রিজে রাখা হয়েছে। দ্রুত বের না করলে নষ্ট হয়ে যাবে। এ বিষয়ে অবৈধ দখলে থাকা মেসার্স ভায়া মিডিয়া বিজনেস সার্ভিসেসের ম্যানেজার নুরুল হুদা জনকণ্ঠকে বলেন, তিন বছর চুক্তিতে পার্কটি করার জন্য এ জায়গাটি আমরা লিজ নিয়েছিলাম। এরপর শিশুদের উপযোগী করে কোটি কোটি টাকার মালামাল দিয়ে আমরা পার্কটি সাজিয়েছি। তিন বছর পরপর চুক্তি নবায়ন করার কথা থাকলেও সিটি কর্পোরেশন আমাদের চুক্তি নবায়ন করেনি। পরে আমরা আদালতে একটি রিট করি। তিনি আরও বলেন, তখন আদালত পার্কটির মালিক যেহেতু সিটি কর্পোরেশন তাই সিটি কর্পোরেশন চাইলে চুক্তি নবায়ন করতে পারে মর্মে মতামত দেয়। প্রশাসক থাকাকালীন আমরা একাধিকবার সিটি কর্পোরেশনে গেলেও এ বিষয়ে কোন প্রকার উত্তর পাওয়া যায়নি। এখন মেয়র সকালে এসে হঠাৎ পার্ক বন্ধ করে দিয়েছেন। আমরা এ পার্কটি ইজারার বকেয়া অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে পরিচালনার জন্য মেয়রের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
×