ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ন্যাপের জাতীয় সম্মেলনে বিশিষ্টজনদের আহ্বান ॥ অডিও বার্তায় অসুস্থ মোজাফফরের কাউন্সিল উদ্বোধন

দেশের বড় শত্রু মৌলবাদ, রুখে দাঁড়ান

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৭ নভেম্বর ২০১৬

দেশের বড় শত্রু মৌলবাদ, রুখে দাঁড়ান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাজনীতিবিদসহ দেশের বিশিষ্টজনরা। তারা বলেছেন, বাংলাদেশের জন্য এখন সবচেয়ে বড় শত্রু হলো মৌলবাদ। রাজনীতি মৌলবাদ তোষণ করে দানবে পরিণত করেছে। যে কোন মূল্যে এই দানবকে রুখতে হবে। সাম্প্রদায়িক হামলার মধ্য দিয়ে মৌলবাদী গোষ্ঠী আগামীতে আরও বড় ধরনের নাশকতা ঘটাতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তারা এসব কথা বলেন। সম্মেলনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, আইনজীবী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। ন্যাপের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অসুস্থ অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদের রেকর্ডকৃত বক্তব্য সম্মেলনে আগত কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের শোনানো হয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় এক অডিও বার্তায় তিনি সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। বার্তায় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকায় ছিল ন্যাপ। এ সংগঠনটি আজও একটি অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখে। এ লক্ষ্যে দলের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলেও নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করেন তিনি। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, দেশে পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে জাতিকে বিভক্ত করার অন্য চেষ্টাও নিচ্ছে। সাম্প্রদায়িক হামলার মধ্য দিয়ে তারা আগামীতে আরও বড় ধরনের আঘাত হানার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় ফিরে আসলে দেশে জঙ্গীবাদ ফিরে আসবে। দুর্নীতি ও লুটপাট বৃদ্ধি পাবে। এর আগে ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে তারা জঙ্গীবাদকে মদদ দিয়েছিল বলেই সে সময়ে জঙ্গীর উত্থান হয়েছিল। সকল প্রগতিশীল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু বলেন, প্রতিক্রিয়াশীল চক্র এখনও দেশবিরোধী চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে। জঙ্গীবাদের মদদদাতারাই এখন জঙ্গী দমনের কথা বলছে। তাই প্রগতিশীল শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে বিদায় করতে হবে। তিনি বলেন, সরকারবিরোধী যারা জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে হাত মিলিয়ে ক্ষমতায় যাবার চক্রান্ত করছিল তাদের দেশের জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি বলেন, দেশের শত্রুদের চিনে রাখুন। তাদের সঙ্গে কোন আপোস হতে পারে না। তারা নানা কায়দায় অসাম্প্রদায়িক মানুষদের সঙ্গে মিলে অপকর্ম করবে। তিনি বলেন, অপরাধ যারাই করুক না কেন, বিচার করতে হবে। মৌলবাদী শক্তি ও সাম্প্রদায়িক কর্মকা-ে কোন আপোস নয়। সম্মেলনের শুরুতে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এ সময়ে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। ন্যাপের কার্যকর সভাপতি আমিনা আহমেদ এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়–য়া, জাতীয় পার্টি জেপির মহাসচিব শেখ সহিদুল ইসলাম, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ডাঃ ওয়াজেদুল ইসলাম, ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট এনামুল হক বক্তব্য রাখেন। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা করতে হবে। না হলে তার স্বপ্ন কখনই বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে আমরা সেই স্বপ্ন থেকে সয়ে গিয়েছিলাম। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমরা সেই স্বপ্ন আবার বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু সম্রাজ্যবাদী ও পুঁজিবাদী মহল দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সৃষ্টি করে সেই স্বপ্ন পূরণে বাধা সৃষ্টি করছে। তাই এদের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, বাম রাজনৈতিক সংগঠনগুলো দেশের গণতন্ত্র রক্ষা ও সাম্প্রদায়িকতা দূর করতে কাজ করছে। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তা ঠিকভাবে করছে না। এজন্য সিপিবি ১৪ দলের সঙ্গে নেই। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যে আওয়ামী লীগ ছিল সেটা লেফট অব সেন্টারে ছিল। কিন্তু বর্তমানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে আওয়ামী লীগ রয়েছ সেটা রাইট অব সেন্টারে। বঙ্গবন্ধুর সময় আওয়ামী লীগ ছিল খেটে খাওয়া আর মধ্যবিত্ত মানুষের দল। বর্তমানে এটা লুটেরাদের দল। বিএনপি সরকারী বা বিরোধী দল হিসেবে ব্যর্থ একটি দল। অন্যদিকে তারা যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যের কথা বলে। তারা সরকারের বিরুদ্ধে কি আন্দোলন গড়ে তুলবে? এ জন্য বাম শক্তির সমন্বয়ে একটি বিকল্প শক্তি তৈরি করা দরকার। দেশে সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদ বন্ধ হয়নি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হিন্দু গ্রামে হামলা ও দেশের বিভিন্ন গ্রামে এখনও হিন্দুর ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। আদিবাসীদের জমি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। বলতে গেলে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা দিন বাড়ছেই।
×