ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নির্বাচনের মাঠে অন্য কেউ নেই

৬১ জেলা পরিষদেই আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৭ নভেম্বর ২০১৬

৬১ জেলা পরিষদেই আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি পাচ্ছে জেলা পরিষদ। আর প্রথমবারের মতো আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৬১টি জেলাতেই জয় পেতে চায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। প্রায় প্রতিটি জেলাতেই প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর তুলনায় নিজেদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হওয়ায় সব জেলা পরিষদেই চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের বিজয়ের সম্ভাবনাও অনেকটা নিশ্চিত। কিছু জেলায় দলীয় মনোনয়ন নিয়ে তৃণমূলে কিছু অসন্তোষ থাকলেও মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের স্বার্থেই দল মনোনীত প্রার্থীকেই মেনে নিচ্ছেন। প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি-জামায়াত জোট নিশ্চিত পরাজয় জেনেই জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ কারণেই ৬১টি জেলা পরিষদেই চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বিজয়ী হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হলে কী হবে, সে বিষয়ে কোন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দেয়া হলেও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা বলছেন অন্য কথা। স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা হলে তারা জানান, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নয়, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ভোটে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। আর প্রতিটি জেলার আওতায় থাকা সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচিত মেয়র, কাউন্সিলর, চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। দলের মনোনয়নে নির্বাচিত এসব জনপ্রতিনিধি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত অনিশ্চিত করবে বলে তারা মনে করেন না। দলের বিদ্রোহী প্রার্থী প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘চিল কান নিয়ে গেছে, আমরা কি সেদিকেই দৌড়াব? আগে দেখা যাক কী হয়, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ তিনি বলেন, তিনটি জরিপের ভিত্তিতে আমরা প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছি। বেশকিছু জেলা থেকে ব্যক্তিগতভাবে, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকরাও প্রার্থীদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়েছেন। সব মিলিয়ে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে, ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা টানা দুদিন বৈঠক করে শুক্রবার রাতে ৬১টি জেলা পরিষদে একক প্রার্থিতা ঘোষণা করে, যাতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ থেকে সমর্থন পেয়েছেন পুরনোরাই। ৬১টি জেলা পরিষদের মধ্যে ৪৩টিতেই চেয়ারম্যান পদে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন বর্তমান প্রশাসকরা। বর্তমান প্রশাসকদের মধ্যে বাদ পড়েছেন ১৮ জন। এসব জেলায় নতুন মুখ পেয়েছেন দলীয় সমর্থন। আওয়ামী লীগের দফতর সেল সূত্রে জানা গেছে, দল থেকে আবেদন চাওয়ার পর ৬১টি জেলা পরিষদের বিপক্ষে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে সর্বাধিক ৭১৩ প্রার্থী আবেদন করেছিলেন। এত বিপুলসংখ্যক আবেদনের বিপরীতে একক প্রার্থী বাছাই করতে অনেকটাই হিমশিম খেতে হয় দলটির হাইকমান্ডকে। তবে প্রথম দিনের বৈঠকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূলের প্রস্তাবের সঙ্গে মাঠপর্যায়ের জনমত জরিপের ভিত্তিতেই প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হবে। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা বিশ্লেষণ করলেই স্পষ্ট হয়, জেলার প্রবীণ ও ত্যাগী নেতারাই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। দলের জন্য অনেক ত্যাগ থাকার পরও যারা কোনদিন মন্ত্রী-এমপি বা কোন প্রাতিষ্ঠানিক বড় পদ পাননি, তাদেরই বেছে বেছে দলীয় সমর্থন দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, যে কোন দল তাদের দল থেকে প্রার্থীকে সমর্থন দিতে পারে। তবে দলের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হলেও নির্বাচন দলীয়ভাবে হচ্ছে না। আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জয়ের ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চিত। কারণ তারা হিসাব কষে দেখেছে সারাদেশে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে বিজয়ী আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধির সংখ্যা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। এ কারণে তারা অনেকটাই নির্ভার। কারণ সব জেলাতেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যানের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই নিশ্চিত। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপিও সারাদেশে হিসাব মিলিয়ে দেখেছে জেলা পরিষদে নির্বাচনে প্রার্থী দিলে তাদের বিজয়ের কোন সম্ভাবনাই নেই। প্রতিটি জেলায় আওয়ামী লীগের তুলনায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির সংখ্যা প্রায় তিন ভাগের একভাগ। এত স্বল্পসংখ্যক জনপ্রতিনিধিকে নিয়ে দেশের কোন জেলা পরিষদে তাদের সমর্থিত প্রার্থীর বিজয়ের সম্ভাবনা নেই। এ কারণেই বিএনপি ও তাদের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতে ইসলামী জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও একই কারণে জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী দিচ্ছে না। এসব কারণে ৬১ জেলা পরিষদেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা বিনা বাধায় বিজয়ী হতে যাচ্ছেন, তা এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। নির্বাচন কমিশন গত রবিবার আগামী ২৮ ডিসেম্বর জেলা পরিষদের নির্বাচনের দিন ধার্য করে তফসিল ঘোষণা করেছে। ১ ডিসেম্বর মনোনয়ন জমা দানের শেষ দিন। এ নির্বাচনে প্রত্যেক জেলায় স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। তাদের ভোটে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যরা নির্বাচিত হবেন। প্রতিটি জেলায় ১৫ জন সাধারণ ও পাঁচজন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নির্বাচিত হবেন। এ নির্বাচনে ২৫ বছর বয়সী বাংলাদেশের ভোটার জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। তবে কোন জনপ্রতিনিধি স্বপদে থেকে এতে অংশ নিতে পারবেন না।
×