ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কিউবায় নয়দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা, ৪ ডিসেম্বর শেষ কৃত্য

কিউবান বিপ্লবের মহানায়ক প্রয়াত ॥ বিদায় ফিদেল ক্যাস্ট্রো

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৭ নভেম্বর ২০১৬

কিউবান বিপ্লবের মহানায়ক প্রয়াত ॥ বিদায় ফিদেল ক্যাস্ট্রো

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ সাম্যবাদের স্বপ্নচারী, কিউবান বিপ্লবের মহানায়ক সাবেক প্রেসিডেন্ট ফিদেল ক্যাস্ট্রো আর নেই। শুক্রবার হাভানায় স্থানীয় সময় রাত দশটা ২৯ মিনিটে ৯০ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ক্যাস্ট্রোর ছোটভাই ভাই, কিউবার বর্তমান প্রেসিডেন্ট রাউল ক্যাস্ট্রো প্রথমে সরকারী টেলিভিশনে এই মহান নেতার মৃত্যুর খবর প্রকাশ করেন। কাঁপা গলায় রাউল বলেন, ‘কিউবান বিপ্লবের ‘কমান্ডার ইন চীফ’ আর আমাদের মাঝে নেই। ক্যাস্ট্রোর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার মরদেহ দাহ করা হবে। তার মৃত্যুতে কিউবা, চীন, ভিয়েতনাম, ভেনিজুয়েলা, ভারত, রাশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কিউবাজুড়ে চলছে মাতম। তার মৃত্যুতে কিউবায় নয়দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। খবর এএফপি, বিবিসি ও আলজাজিরা অনলাইনের। যুক্তরাষ্ট্রের একেবারে নাকের ডগায় বসে প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে কিউবায় সমাজতন্ত্রের পতাকা সমুন্নত রেখেছেন ফিদেল ক্যাস্ট্রো। তাকে বহুবার ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করেছে মার্কিন প্রশাসন। শুধু তাই নয় ১৯৫৯ সাল থেকে ১৯৬৩ সালের মধ্যে অন্তত ৬৬৮ তাকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে মার্কিন গোয়েন্দারা। ৪৯ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে আইসেন হাওয়ার থেকে বারাক ওবামা মোট ১১ জন মার্কিন প্রেসিডেন্টের শাসনকাল দেখেছেন ফিদেল। কিন্তু তাকে সরাতে পারেননি কেউই। ফিদেলের অবসরের পরও কিউবা শাসন করছে তারই প্রতিষ্ঠিত কমিউনিস্ট পার্টি। এই মহান বিপ্লবীর মৃত্যুতে বিশ্বনেতারা শোক প্রকাশ করেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক টুইট বার্তায় বলেন, বিংশ শতাব্দীতে ফিদেল ক্যাস্ট্রো ছিলেন একজন আদর্শ ব্যক্তিত্ব। ভারত তাদের একজন মহান বন্ধুকে হারাল। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ফিদেল ক্যাস্ট্রোকে আধুনিক বিশ্ব ইতিহাসে ‘যুগের প্রতীক’ অভিহিত করে বলেন, ফিদেল ক্যাস্ট্রো চলে গেলেও কিউবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অটুট থাকবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিউবার জনগণের প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়াবে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ক্যাস্ট্রোকে বর্বর একনায়ক বলে আখ্যায়িত করেছেন। সাবেক সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভ শনিবার ফিদেল ক্যাস্ট্রোর প্রশংসা করেছেন। তিনি ক্যাস্ট্রোকে ‘শক্তিশালী’ কিউবার জনক বলে অভিহিত করেছেন। রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স গর্বাচেভের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, ‘আমেরিকানদের কঠোর অবরোধ সত্ত্বেও ফিদেল তার দেশকে স্বাবলম্বী ও শক্তিশালী ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করেন। ওই সময় তার ওপর ব্যাপক চাপ ছিল এবং সব ধরনের প্রতিকূলতা অতিক্রম করে তিনি তার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যান। ক্যাস্ট্রো তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কিউবাকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যান।’ মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট এনরিক পেনা নিয়েতো বলেন, ক্যাস্ট্রো মেক্সিকোর বন্ধু ছিলেন। সেইসঙ্গে তিনি ছিলেন সম্মান, সংলাপ ও সংহতির দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রবর্তক। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, ফিদেল ক্যাস্ট্রো চিরদিন অমর হয়ে থাকবেন। তার মৃত্যুতে চীনের জনগণ ভাল ও সত্যিকারের একজন কমরেড হারালো। ইতিহাস ও মানুষ তাকে স্মরণ করবে। এছাড়া ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো, ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরেয়া, জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ, জনপ্রিয় ফুটবল তারকা দিয়েগো ম্যারাডোনা ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাফেদ জারিফসহসহ অন্যান্য বিশ্বনেতা তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন। ২০০৮ সালে তিনি তার ভাই রাউল ক্যাস্ট্রোর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। তার সমর্থকদের মতে, তিনি কিউবাকে জনগণের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। সমর্থকদের কাছে তিনি অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র। রাউল ক্যাস্ট্রো শুক্রবার রাতে জাতীয় টেলিভিশনে মহান নেতার মৃত্যুর ঘোষণা দেয়ার পর বিপ্লবী সেøাগান দেন, ‘বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক’। গত এপ্রিলে ফিদেল ক্যাস্ট্রো দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসের শেষ দিনে ভাষণ দেন। তিনি তার বয়স বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে তিনি বলেন, কিউবায় সমাজতান্ত্রিক মতবাদ এখনও কার্যকর এবং কিউবার জনগণ বিজয়ী হবে। কিউবার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে নেতৃত্ব দেয়ার পর ফিদেল ক্যাস্ট্রো দেশটির ক্ষমতা গ্রহণ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সমাজতান্ত্রিক কিউবা প্রতিষ্ঠাকারী ফিদেল ক্যাস্ট্রো সারাবিশ্বে সমাজতন্ত্রের আন্দোলনকারীদের চোখে ছিলেন বীর। কিউবার অধিকাংশ মানুষ দেশটিকে দেশের মানুষের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার নায়ক হিসেবে দেখেন ফিদেলকে। বাংলাদেশসহ স্বাধীনতাকামী বহু দেশের পক্ষে দাঁড়িয়ে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকারীদের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র ফিদেল ক্যাস্ট্রো। বাংলাদেশ সরকার অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিন বছর আগে তাকে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননায়’ ভূষিত করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী দুনিয়ায় যে সব কমিউনিস্ট নেতা বিশ্ব রাজনীতিতে প্রবলভাবে আলোচিত ফিদেল তাদের অগ্রগণ্য। ১৯২৬ সালের ১৩ আগস্ট কিউবার এক ব্যবসায়ী পরিবারে ফিদেলের জন্ম। ২১ বছর বয়সেই বামপন্থী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৫৯ সালের ১ জানুয়ারি দীর্ঘ গেরিলা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ‘আমেরিকার পুতুল’ বাতিস্তা সরকারের পতন ঘটিয়ে কিউবার ক্ষমতায় আসে ফিদেলের দল। এই বিপ্লবে ফিদেলের প্রধান সহযোগী ছিলেন কিংবদন্তী বিপ্লবী চে’ গুয়েভারা। বিপ্লবের সংগ্রামে ছিলেন ফিদেলের ভাই এবং কিউবার বর্তমান প্রেসিডেন্ট রাউলও। ১৯৫৯ থেকে ’৭৬ পর্যন্ত কিউবার প্রধানমন্ত্রী পদে ছিলেন ফিদেল। ১৯৭৬ থেকে ২০০৮ সে দেশের প্রেসিডেন্ট। ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কিউবার কমিউনিস্ট পার্টি। ২০১১ সাল পর্যন্ত তার কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারি ছিলেন তিনিই। তবে শেষ কয়েক বছর পার্টির কাজে খুব সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারেননি বয়সের ভার আর গুরুতর অসুস্থতার জন্য। গত কয়েক বছরে বেশ কয়েক বার ফিদেল ক্যাস্ট্রো মারা গেছেন বলে খবর রটে। কিন্তু বার বারই ভিডিও বার্তায় ফিদেল তা ভুল প্রমাণ করেছেন। ফিদেল ক্যাস্ট্রোর মৃত্যুতে নয় দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে কিউবা। আগামী ৪ ডিসেম্বর এই নেতার শেষকৃত্যানুষ্ঠান সম্পন্ন হবে। এক বিবৃতিতে বলা হয়, ২৬ নবেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারী ভবন ও সামরিক স্থাপনায় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। মহান নেতার দেহভস্ম দক্ষিণাঞ্চলীয় ঐতিহাসিক সান্টিয়াগো নগরীতে সমাহিত করা হবে। তবে বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন চালানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এদিকে ফিদেলের মৃত্যুর খবর শোনার পর যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের উত্তরে কিউবার নির্বাসিত সম্প্রদায় অধ্যুষিত মায়ামির রাস্তায় রাস্তায় আনন্দ উল্লাস প্রকাশ করেছে। বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। তার ক্ষুরধার এসব মন্তব্যও বারবার আলোচনায় এসেছে। তার বিখ্যাত সব উক্তি ॥ ১.‘আমার নিন্দা করুন। এটা কোন গুরুত্ব পাবে না। ইতিহাস আমাকে অব্যাহতি দেবে।’ ১৯৫৩ সালে সান্টিয়াগোতে মোংকাদা সামরিক ব্যারাকে আত্মঘাতীতুল্য হামলার অভিযোগে চলা বিচারে আত্মপক্ষ সমর্থন করে এ কথা বলেন ক্যাস্ট্রো। ২. ‘আমি ৮২ জনকে নিয়ে বিপ্লব শুরু করি। তা যদি আমাকে আবার করতে হয়, তবে আমি ১০ বা ১৫ জনকে নিয়ে করব এবং সম্পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে করব। সংখ্যায় আপনি কত কম, সেটা কোন বিষয় নয়, যদি আপনার বিশ্বাস ও কর্মপরিকল্পনা থাকে।’ ১৯৫৯ সালে ক্যাস্ট্রো বলেছিলেন এ কথা। ৩. ‘আমি আমার দাড়ি কেটে ফেলার কথা ভাবছি না। কারণ, আমি আমার দাড়িতেই অভ্যস্ত এবং আমার দাড়ি আমার দেশের জন্য অনেক অর্থ বহন করে। সুশাসনের জন্য আমরা যেদিন আমাদের অঙ্গীকার পূরণ করতে পারব, সেদিন আমি দাড়ি কাটব।’ ১৯৫৯ সালে বিপ্লবের ৩০ দিন পর সিবিএসের এ্যাডওয়ার্ড মুরোকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে এ কথা বলেন ক্যাস্ট্রো। ৪.‘আমি অনেক আগেই এ ব্যাপারে উপসংহারে পৌঁছেছি যে ধূমপান ছেড়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে কিউবার জনগণের জন্য আমাকে এই শেষ ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে। আমি আসলেই ধূমপানের তেমন অভাব বোধ করি না।’ ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বরে ধূমপান ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দিতে গিয়ে এ কথা বলেছিলেন ক্যাস্ট্রো। ৫. ‘আমাকে জিঁইয়ে রাখা মতাদর্শ আর ব্যতিক্রমী মূর্তির (যিশুখ্রীস্ট) প্রতীকী মতাদর্শের মধ্যে কখনও কোন তফাত দেখিনি।’ ১৯৮৫ সালে ক্যাস্ট্রো এই উক্তি করেন। ক্যাস্ট্রোর বিপ্লবী জীবন ॥ প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে একদলীয় কিউবার শাসন ক্ষমতায় ছিলেন ফিদেল তিনি। সারাবিশ্বে যখন কমিউনিস্ট সরকারগুলো ধসে পড়ছে ঠিক তখন কমিউনিস্ট ব্যবস্থার বৃহত্তম শত্রু বলে পরিচিত আমেরিকার দোরগোড়াতেই সমাজতন্ত্রের ধ্বজা তুলে ধরে রেখেছিলেন ক্যাস্ট্রো। ১৯২৬ সালের ১৩ আগস্ট জন্ম হয় ফিদেল আলেহান্দ্রো ক্যাস্ট্রো রুৎজের। স্পেন থেকে কিউবাতে আসা একজন ধনী কৃষক আনহেল মারিয়া বাউতিস্তা ক্যাস্ট্রোর সন্তান ছিলেন তিনি। পিতার খামারের ভৃত্য ছিলেন মা লিনা রুৎজ গনজালেজ, যিনি পরবর্তীতে ছিলেন তার পিতার রক্ষিতা। ফিদেলের জন্মের পর তার মাকে স্ত্রীর মর্যাদা দেন তার পিতা। সান্টিয়াগোর ক্যাথলিক স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু হয় ফিদেলের। পরে তিনি যোগ দেন হাভানার কলেজ এল কলেজিও ডে বেলেন-এ। ১৯৪০-এর দশকে হাভানা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়বার সময়ে তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। মার্ক্সবাদে দীক্ষা ॥ ১৯৪৮ সালে কিউবার ধনী এক রাজনীতিবিদের কন্যা মার্টা ডিয়জি বালার্টকে বিয়ে করেন ক্যাস্ট্রো। এই বিয়ের মাধ্যমে দেশটির এলিট শ্রেণীতে যুক্ত হয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল তার, কিন্তু তার বদলে তিনি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যান মার্ক্সবাদে। তিনি বিশ্বাস করতেন কিউবার লাগামহীন পুঁজিবাদের কারণে দেশটির যাবতীয় অর্থনৈতিক সমস্যার উদ্ভব এবং একমাত্র জনগণের বিপ্লবের মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। বিশ্ববিদ্যারয়ের পাঠ চুকানোর পর আইন পেশা শুরু করেন। আক্রমণ ॥ ১৯৫২ সা ফুলগেন্সিও বাতিস্তা একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট কার্লোস প্রিয়়র সরকারকে উচ্ছেদ করেন। বাতিস্তার সরকারের নীতি ছিল মার্কিনপন্থী। যা ছিল ক্যাস্ট্রোর বিশ্বাসের উল্টো। ফলে বাতিস্তা সরকারকে উৎখাতের জন্য তিনি একটি গোপন সংগঠন গড়ে তোলেন যার নাম ‘দ্য মুভমেন্ট’। এ সময় কিউবা পরিণত হয়েছিল উচ্ছৃঙ্খল ধনীদের স্বর্গরাজ্যে। যৌন ব্যবসা, জুয়া ও মাদক চোরাচালান চরম আকার ধারণ করেছিল। সশস্ত্র বিপ্লবের জন্য অস্ত্র সংগ্রহের উদ্দেশে ১৯৫৩-র জুলাই মাসে সান্টিয়াগোর কাছে মোনাকাডা সেনা ছাউনিতে একটি আক্রমণের পরিকল্পনা করেন ক্যাস্ট্রো। আক্রমণটি ব্যর্থ হয় এবং বহু বিপ্লবী নিহত হয়। অনেকে ধরা পড়ে। বন্দীদের মধ্যে ক্যাস্ট্রোও ছিলেন। ১৯৫৩ সালে তার বিচার শুরু হয়। বিচারের শুনানিগুলো ক্যাস্ট্রো ব্যবহার করতেন সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের ঘটনাবলী ফাঁস করে দেয়ার মঞ্চ হিসেবে। এসময় শুনানিগুলোতে বিদেশী সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার ছিল, ফলে ক্যাস্ট্রোর জনপ্রিয়তা এ সময় বেড়ে যায়। ক্যাস্ট্রোকে অবশ্য ১৫ বছরের কারাদ- দেয় আদালত। গেরিলা যুদ্ধ ॥ সাধারণ ক্ষমার মাধ্যমে ১৯৫৫ সালের মে মাসে জেল থেকে ছাড়া পান ক্যাস্ট্রো। জেলে থাকার সময়েই স্ত্রীকে তালাক দেন এবং মার্ক্সবাদে আরও ভালভাবে জড়িয়ে পড়েন। ছাড়া পাওয়ার পর ফের গ্রেফতার এড়াতে মেক্সিকো পালিয়ে যান। সেখানে পরিচয় হয় আরেক তরুণ বিপ্লবী চে’ গুয়েভারার সঙ্গে। ১৯৫৬ সালের নবেম্বরে ১২ জন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ইঞ্জিন নৌকায় ৮১ জন সশস্ত্র সঙ্গীকে নিয়ে কিউবায় ফিরে যান ফিদেল। তারা সিয়েরা মায়েস্ট্রো পাহাড়ে আশ্রয় নেন এবং এখান থেকে হাভানার সরকারের বিরুদ্ধে দুবছর ধরে গেরিলা আক্রমণ চালান। ১৯৫৯ সালের দুই জানুয়ারি বিদ্রোহীরা হাভানায় প্রবেশ করে। বাতিস্তা পালিয়ে যান। এসময় বাতিস্তার বহু সমর্থককে বিচারের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। আদর্শ ॥ কিউবার নতুন সরকার জনগণকে সব জমি বুঝিয়ে দেবার এবং গরিবের অধিকার সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু একই সঙ্গে দেশে একটি এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা হয়। রাজবন্দী হিসেবে বহু মানুষকে কারাগারে এবং শ্রমশিবিরে প্রেরণ করা হয়। হাজার হাজার মধ্যবিত্ত কিউবান বিদেশে পালিয়ে যায়।
×