ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

হোসাইন ইমরান

বুয়েট নাট্যোৎসবে এক টুকরো চর্যাপদ ॥ শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২৭ নভেম্বর ২০১৬

বুয়েট নাট্যোৎসবে এক টুকরো চর্যাপদ ॥ শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

কাহিনীর শুরু বারো শ’ বছর আগে, যার পটভূমি চর্যাপদের সময়কাল। তখন এ ভূখ-ে একদিকে ছিল বৌদ্ধ রাজাদের প্রবল প্রতাপ, অন্যপ্রান্তে দুর্বল প্রাকৃতজন বাঙালী। ব্রাহ্মণ্যবাদের কায়েমি শাসনে বাঙালীর প্রাণ ওষ্ঠাগত। অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীর আলঙ্কারিক ভাষা সংস্কৃত দিয়ে বাঙালীর মাটির ভাষাকে দাবিয়ে রাখার অশুভ পাঁয়তারা। ভাষা ও ভূখ- রক্ষায় অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সমাজের শোষিত শ্রেণীর প্রতিবাদমুখর এমন কাহিনী নিয়ে চর্যাপদের অবয়ব তৈরি হয়েছে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের ‘নীল ময়ূরের যৌবন’ নাটকে। যেখানে ফুটে উঠেছে কানুপা, লুইপা, ভূসুকুর মতো কবিদের সুখ-দুঃখ গাথা জীবনকাহিনী। এভাবেই ‘নীল ময়ূরের যৌবন’ হয়ে ওঠে যেন এক টুকরা চর্যাপদ। সম্প্রতি বুয়েট ড্রামা সোসাইটি আয়োজিত ‘আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় নাট্যোৎসব-২০১৬’-এর তৃতীয় দিন এ নাটকের চতুর্থ প্রদর্শনী করেছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যসংগঠন ‘দিক থিয়েটার’। দিক থিয়েটার ছাড়াও এ নাট্যোৎসবে নিজেদের নাটক ‘এ ট্রেন টু পাকিস্তান’ নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও ‘মুল্লুক’ নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি রেপার্টারি অংশগ্রহণ করেছিল। চার দিনব্যাপী নাট্যোৎসবের চতুর্থদিন ছিল বুয়েট ড্রামা সোসাইটির নিজস্ব নাটক ‘এ লেটার টু এ চাইল্ড নেভার বর্ন’। নীল ময়ূরের যৌবন নাটকের নাট্যরূপ দিয়েছেন সুনন্দ বাশার ও নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন বিজিত চক্রবর্তী পলাশ আর পুনঃনির্দেশনা দিয়েছে দিক থিয়েটারের কনিষ্ঠ সদস্য দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মায়া বিশ্বাস। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন তনু দীপ, তাহুরা ফেরদৌস হিয়া, আরিফা জেসমনি রুমি, জয়ন্ত দাশ, মোদাব্বের হোসেন সাব্বির, জোহান জাকারিয়া, জুঁই দাশ, মনীষা ধর, বিকু আকাশ দাশ, পাপ্পু রায়, মুন্তাকিম আহমেদ সমিত, জুয়েল রানা, সায়েম তামজীদ অপূর্ব, মায়া বিশ্বাস, আল আমিন টুটুল, অনিক ধর। আলোকসজ্জা ও মঞ্চসজ্জায় এহসান শুভ ও জিলফাজা মিশনা। চর্যাপদের সঙ্গে বর্তমান সময়ের সেতুবন্ধন নিয়ে দিক থিয়েটারের সভাপতি তনু দ্বীপ বলেন, হাজার বছর আগেও উঁচু শ্রেণী যেভাবে দাবিয়ে রাখত নিচু শ্রেণীকে, হাজার বছর পরেও বিলুপ্ত হয়নি সেই ধারা। এরই মধ্যে শোষিত শ্রেণীর কোন কোন প্রতিনিধি হয়ে উঠে প্রকট দৃষ্টির অধিকারী, যার কাছে ধরা পরে মুখোশের খেলা, কায়েমি স্বার্থ হাসিল করার শিল্পকলা। বর্তমান সময়ে শোষণের ধরনের পরিবর্তন হলেও হয়নি মাত্রার পরিবর্তন। কাহিনী ও চরিত্র একই আছে, পরিবর্তন হয়েছে শুধু কুশীলব আর রঙ্গশালার। ‘নাটক হোক সত্য ও ন্যায়ের শৈল্পিক হাতিয়ার’- এই মূলমন্ত্রকে সঙ্গে নিয়ে চলা বুয়েট ড্রামা সোসাইটি বিশুদ্ধ নাট্যচর্চাকে উৎসাহিত করে যাচ্ছে প্রায় দেড় যুগ ধরে। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতি বছরের মত এবারও আয়োজন করেছে ‘আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় নাট্যোৎসব-২০১৬’ বলছিলেন বুয়েট ড্রামা সোসাইটির সভাপতি ফাহিম ফায়সাল খান। নাটক শেষে নাট্যকার ও নাট্যনির্দেশক বাকার বকুল বলেন, শাবিপ্রবির নাট্য সংগঠন দিক থিয়েটারকে ধন্যবাদ এত দূর থেকে এত পরিশ্রম করে এসে এত সুন্দর একটি নাটক উপহার দেয়ার জন্য। দিক থিয়েটারের ২-৩ জন কর্মীকে নিয়ে বিভিন্ন কর্মশালায় কাজ করানোর অভিজ্ঞতা আমার পূর্বেও হয়েছে। নাটকের প্রদর্শনী শেষে দিক থিয়েটারের সভাপতি তনু দ্বীপের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন বুয়েট ড্রামা সোসাইটির মডারেটর শেখ আনোয়ারুল ফাত্তাহ।
×