ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাতিলের পক্ষে চাষীরা

ব্রিটিশ নিলাম পদ্ধতি সমতলে চা চাষে অন্তরায়

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২৭ নভেম্বর ২০১৬

ব্রিটিশ নিলাম পদ্ধতি সমতলে চা চাষে অন্তরায়

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট ॥ ব্রিটিশ শাসন আমলের নিলাম পদ্ধতিতে চা পাতা বিক্রি সমতলে চা চাষে অন্তরায় সৃষ্টি করেছে। নিলাম পদ্ধতি বাতিলের পক্ষে সমতলের চা চাষীরা। নিজেদের বাগানের চা নিজেরাই প্রসেসিং ও প্রক্রিয়াজাত করে স্থানীয় বাজারে এবং দেশে-বিদেশে বাজারজাতকরণের সুযোগ চায় সমতলের চা বাগান মালিক ও চা প্রসেসিং কারখানাগুলো। উত্তরের জেলা লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী জেলায় বেশ কয়েকটি চা বাগান রয়েছে। লালমনিরহাট জেলায় চা বাগান রয়েছে প্রায় এক শ’ একর জমিতে। বছরে নয় মাস চা বাগান হতে চা সংগ্রহ করা যায়। ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এই তিন মাস চা বাগানের গাছ ছাঁটাই করে পরিচর্যা করতে হয়। চা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বছরে সমতলের বাগান হতে প্রতি একরে ৬ হাজার কেজি চা উৎপন্ন হয়। ব্যক্তি মালিকানায় লালমনিরহাটে ১২ একরের একটি বাগান রয়েছে যা সোমা টি এস্টেট নামে পরিচিত। এই চা বাগানের মালিক নিজে চা চাষী। একই সাথে উৎপাদন ও চা প্রসেসিং করে থাকে। তার নিজস্ব চা প্রসেসিং মেশিন রয়েছে। এই মেশিনে প্রতিদিন এক হাজার কেজি চা প্রসেসিং হচ্ছে। কিন্তু প্রসেসিং মেশিনের সক্ষমতা রয়েছে দৈনিক দুই হাজার কেজি চা পাতা প্রসেস করার। সোমা টি এস্টেট ছাড়াও ছোট ছোট ৫-৭টি চা বাগান রয়েছে। লালমনিরহাট সোমা টি এস্টেটের মালিক মোঃ ফেদৌস আলম জানান, ১২ একর বাগান ও প্রসেসিং মেশিন স্থাপনে তার প্রায় ১৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছে। ২০০৩ সালে বাগান স্থাপন করা হয়। বাগান হতে পুরোদমে উৎপাদন শুরু হয় ২০০৭ সালে। ২০১৬ সালের নবেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে তার নিজস্ব বাগান ও চাষীদের বাগান হতে চা সংগ্রহ করে প্রসেসিং করে চট্টগ্রামে চা নিলামে পাঠাই। নিলামে তার ৯ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। চাষীদের কাছে বাগান হতে ২৪ টাকা দরে প্রতিকেজি কাঁচা চায়ের পাতা কিনে নেয়া হয়। পরে সেই চা পাতা প্রসেস করতে হয়। ৫ কেজি চা পাতা প্রসেস করে এক কেজি চা পাওয়া যায়। এককেজি চা উৎপাদনে সব মিলে খরচ পড়ে ১৭৫ টাকা। কিন্তু চট্টগ্রামে চা নিলামে নবেম্বর মাসে বিক্রি করতে হয়েছে প্রতি কেজি এক শ’ পাঁচ টাকা হতে এক শ’ ২৫ টাকা পর্যন্ত। চা প্রসেসিংয়ের পর তিন প্রকারের চা উৎপাদন হয়। উন্নতমানের, মধ্যমানের ও নি¤œমানের। নিলাম প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে চা বিক্রি করে চা চাষীরা ক্ষতির মুখে পড়েছে। চা প্যাকেটজাত ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো লাভবান হচ্ছে। প্রতি কেজি চা পাতা কোম্পানিগুলো ৩-৪শ’ টাকা করে বিক্রি করে থাকে। সমতলে নিলাম পদ্ধতি তুলে দিলে চা বাগান মালিক ও কারখানা মালিক নিজেরাই স্থানীয় বাজারে চা বিক্রি করতে পারবে। লালমনিরহাট চা বোর্ডের তথ্য মতে, জেলায় আগামী বছর প্রায় দেড় হাজার একর জমিতে চা বাগান স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ২৪ লাখ চা গাছের চারা নার্সারিতে তৈরি হয়েছে। যারা চা বাগান স্থাপন করবে সরকার ও চা বোর্ড চা গাছের চারা, সেচ পাম্প ও টেকনিক্যাল সাপোর্ট বিনামূল্যে দিবে। এতে টি বোর্ড প্রায় কোটি ৮০ লাখ টাকা খরচ করবে। লালমনিরহাট ক্ষুদ্র চা আবাদ প্রকল্পের পরিচালক মোঃ আরিফ খান জানান, লালমনিরহাটে চা বাগান সম্প্রসারণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। তামাক চাষের বিকল্প হিসেবে চা বাগান ও চা চাষ লাভজনক হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম লালমনিরহাট জেলার সোমা টি এস্টেটসহ জেলায় থাকা প্রায় সব কয়টি চা বাগান পরিদর্শন করে গেছেন। চা উত্তরের জেলায় সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসল হিসেবে দেশ ও বিদেশে স্থান করে নেবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
×