ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এএইচএফ কাপ হকির ফাইনাল আজ ॥ বাংলাদেশ ৮-০ সিঙ্গাপুর

সিঙ্গাপুরকে উড়িয়ে দিয়ে হ্যাটট্রিক ফাইনালে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ২৭ নভেম্বর ২০১৬

সিঙ্গাপুরকে উড়িয়ে দিয়ে হ্যাটট্রিক ফাইনালে বাংলাদেশ

রুমেল খান ॥ ফিল্ড হকি কাকে বলে ও কত প্রকার, সেটা উদাহরণসহ বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে প্রতিপক্ষ সিঙ্গাপুরকে হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দিল বাংলাদেশ। শনিবার ‘এএইচএফ কাপ হকি’র শেষ চারের (প্রাক-স্থান নির্ধারণী পর্ব) দ্বৈরথে সিঙ্গাপুরের গোলপোস্টে গুনে গুনে দুই হালি বার বল পাঠায়। অর্থাৎ খেলার স্কোরলাইন ছিল ৮-০। হংকংয়ের কিংস পার্ক হকি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচের প্রথমার্ধে লাল-সবুজরা এগিয়ে ছিল ২-০ গোলে। এই জয়ে চলমান আসরে ফাইনালে নাম লেখালো অলিভার কার্টজের দল। এটা হবে তাদের হ্যাটট্রিক ফাইনাল খেলা। আগের দু’বারের (২০০৮ এবং ২০১২) ফাইনালেই জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা। বাংলাদেশ আজ রবিবার ফাইনাল খেলবে হংকং ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে বিজয়ী দলের সঙ্গে। সেমিফাইনালে বাংলাদেশের দুটি গোল করেন আশরাফুল ইসলাম। এছাড়া ১টি করে গোল করেন মিলন হোসেন, রোমান সরকার, রাসেল মাহমুদ জিমি, পুস্কর খিসা মিমো, মামুনুর রহমান চয়ন ও কৃষ্ণ কুমার দাস। সিঙ্গাপুরকে গোলের মালা পরালেও বাংলাদেশকে প্রথম গোলের জন্য অপেক্ষা করতে হয় ২৬ মিনিট পর্যন্ত। মিলন হোসেনের ফিল্ড গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। এরপরই ভারিবর্ষণ শুরু হলে মাঠ পানিতে ডুবে যায়। ফলে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। বৃষ্টি থামলে পানি নিষ্কাশন করতে কিছুটা সময় লাগে। ফলে ১০ মিনিট খেলা বন্ধ ছিল। এরপর আবারও খেলা শুরু হলে ২৯ মিনিটে রোমান সরকারের ফিল্ড গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ করে বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হলে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। ৩৭ মিনিটে ফিল্ড গোল করেন অধিনায়ক জিমি (৩-০)। ৪৮ মিনিটে পেনাল্টি কর্নার (পিসি) থেকে গোল করেন ‘পিসি স্পেশালিস্ট’ চয়ন। এর ২ মিনিট পর সিঙ্গাপুরের জালে পঞ্চমবারের মতো বল পাঠান মিমো (ফিল্ড গোল)। ৫৫ মিনিটে ষষ্ঠ গোলটি করেন কৃষ্ণ। আরেক পিসি স্পেশালিস্ট আশরাফুল পিসি থেকে দলের হয়ে শেষ দুটি গোল করেন ৬৬ ও ৬৯ মিনিটে। খেলায় বাংলাদেশ তিনটি পিসি গোল করলেও আর চারটি পিসি থেকে গোল করতে পারেনি। পারলে হয়তো ব্যবধান আরও বড় হতো। প্রথমার্ধে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তুললেও দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের উপর্যুপরি আক্রমণের সামনে অসহায় ছিল সিঙ্গাপুর দল। ‘আজকের খেলায় আমরা সবাই যথেষ্ট ইতিবাচক ও আত্মবিশ^াসী ছিলাম। রবিবারের ফাইনালে আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে পারলে ইনশাল্লাহ্ চ্যাম্পিয়ন হয়েই দেশে ফিরতে পারব। প্রতিপক্ষ যেই হোক (অপর সেমির হংকং-শ্রীলঙ্কা ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শুরুই হতে পারেনি), তা নিয়ে ভাবিত নই। আমাদের জিতবে হবে, এটাই হচ্ছে মূল কথা।’ খেলা শেষে বাংলাদেশ দলের তারকা ফরোয়ার্ড-অধিনায়ক রাসেল মাহমুদ জিমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনকণ্ঠের সঙ্গে আলাপনে এমনটাই জানান। দলের অপর তারকা ডিফেন্ডার চয়নও একইভাবে জনকণ্ঠকে জানান, ‘ফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে যেই আসুক, কোন সমস্যা নেই। আমরা আমাদের সেরাটাই দেব, এটাই জানি। ফাইনালে জিততে অবশ্যই আত্মবিশ^াসী। জেতা ছাড়া আমাদের কোন বিকল্প নেই।’ একদিনও বিরতি নেই। রবিবারই ফাইনাল খেলতে হবে, একদিনও বিশ্রাম পাওয়া যাবে না। ক্লান্তি কোন সমস্যা করবে না তো? ‘না, আমার মনে হয় এতে কোন সমস্যা হবে না।’ চয়নের জবাব। চয়নের মতো অভিন্ন সুর গোলরক্ষক অসীম গোপেরও, ‘ফাইনালে যেই আসুক, নো প্রবলেম। আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করতে চাই। এজন্য দেশবাসীর দোয়া চাই।’ অসীম আরও জানান, ‘আমরা এখন জার্মান স্টাইলে খেলছি। বেশি না, ফাইনালে ৮০ ভাগ পারফর্ম করলেই এবং যে যার দায়িত্বটা ঠিকমতো পালন করলেই আমরা জিতব। অসীম মজা করে বলেন, ‘গত দুটি টুর্নামেন্টে আমি কিন্তু শ্রীলঙ্কাকে একাই রুখে দিয়ে দলকে জিতিয়েছিলাম। এবারও যদি ফাইনালে তাদের পাই, তাহলে ...’ বাক্যটা আর শেষ করেননি তিনি। সবশেষে অসীম জানান, দলের সবাই সুস্থ ও ফিট আছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সিঙ্গাপুরের মোকাবেলা করেছে মোট ১১ বার। এতে বাংলাদেশ জিতেছে ৮ ম্যাচে, সিঙ্গাপুর জিতেছে ১ ম্যাচ। বাকি ২ ম্যাচ ড্র হয়। বাংলাদেশ গোল করেছে ২৮টি, সিঙ্গাপুরের গোল ৮টি। শনিবারই বাংলাদেশ তাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি গোলের ব্যবধানে জিতল। নিজেদের গ্রুপের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক হংকংকে ৪-২ গোলে হারায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে চাইনিজ তাইপেকেও হারায় একই ব্যবধানে। গ্রুপের শেষ ম্যাচে ম্যাকাওকে ১৩-০ গোলে শোচনীয়ভাবে হারিয়ে অপরাজিত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় লাল-সবুজরা। এ পর্যন্ত চার খেলায় বাংলাদেশ মোট গোল করেছে ২৯টি, হজম করেছে ৪টি। সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন আশরাফুল ইসলাম ৮টি। এবারের আসরের নিজেদের শেষ গ্রুপ ম্যাচে দুর্বল ম্যাকাওয়ের বিরুদ্ধে খেলান হয়নি জিমি, চয়ন, অসীম এবং রানাকে। মূলত তরুণদের সুযোগ করে দেয়া এবং সিনিয়রদের বিশ্রাম দেয়াই ছিল এর উদ্দেশ্য। তবে সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে এদের সবাইকে খেলান কোচ অলিভার এবং যথারীতি তারা ঝলসে ওঠেন স্বমহিমায়। সবার সম্মিলিত আক্রমণ-প্রয়াসে খড়কুটোর মতো উড়ে যায় সিঙ্গাপুর। এখন দেখার বিষয়, ফাইনালে জিতে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হতে পারে কি না জিমিরা।
×