ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ে বাধ্য করছে স্কুল কর্তৃপক্ষ

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ২৭ নভেম্বর ২০১৬

চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ে বাধ্য করছে স্কুল কর্তৃপক্ষ

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ দৈনিক জনকণ্ঠে সংবাদ প্রকাশের পর টনক নড়েছে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। তবে শিক্ষাবোর্ডের নিয়ম মানা তো দূরের কথা বরং গত বুধ ও বৃহস্পতিবার আবারো নির্বাচনী পরীক্ষায় ফেল করাদের কাছ থেকে পুনরায় পরীক্ষা নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর কারণ হচ্ছে গত ২২ নবেম্বর প্রকাশিত সংবাদটিকে মিথ্যা বানাতে কর্তৃপক্ষের আরেক ধরনের পাঁয়তারা। এছাড়াও শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গে প্রতারণা করতেই এ ধরনের পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। প্রতিদিন মাত্র ২ ঘণ্টায় ৩টি বিষয় করে মোট ৬টি বিষয়ের পরীক্ষা নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। তবে এ পরীক্ষায় আবার বই দেখে লিখেছে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা। কিন্তু বই দেখে লিখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে স্কুল পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে। অপরদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের কোচিং সেন্টারের দিকে ধাবিত করার মতো ঘটনাও ঘটছে পাহাড়তলী বালিকা বিদ্যালয়ে। স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ফজলুল করিম ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অর্থ সম্পাদক ওমর ফারুক সুমন। এই অনিয়ম করছেন এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী অভিভাবকদের। ওই স্কুলের ৫ম থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে শতকরা ৭৫ ভাগ শিক্ষার্থী স্কুল কমিটির অর্থ সম্পাদক কর্তৃক পরিচালিত লার্নিং পয়েন্ট নামক কোচিং সেন্টারে ভর্তি করতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এছাড়াও এই কোচিং সেন্টারটি একটি মাদ্রাসায় পরিচালিত হচ্ছে অনেকটা জোরপূর্বক। কারণ মাদ্রাসা কমিটির ওপর প্রভাব খাটিয়ে কোচিং সেন্টারটি পরিচালিত হচ্ছে এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। আরও অভিযোগ রয়েছে, স্কুল পরিচালনা কমিটির অর্থ সম্পাদক ও অভিভাবক কমিটির সদস্য ওমর ফারুক সুমন শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করে খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের যেমন নাজেহাল করেন শত শিক্ষার্থীর মাঝে, তেমনি শিক্ষকদেরও শ্রেণীকক্ষে নাজেহাল করেন। এছাড়াও কমিটি এই সদস্যের কোন মেয়ে এই স্কুলে অধ্যয়ন না করলেও তিনি কীভাবে অভিভাবক কমিটির সদস্য হয়েছেন তা প্রশ্নবিদ্ধ। তবে এক দিনমজুর পরিবারের সন্তানকে এতিম ও নিজের পোষ্য দেখিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ের অভিভাবক কমিটির সদস্য হয়েছেন এমন তথ্য রয়েছে। তবে মেয়েটিকে এতিম দেখানো হলেও তার বাবা-মা সকলেই রয়েছেন বলে অভিযোগ। জানা গেছে, পাহাড়তলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালের এসএসসি পরীক্ষায় এবার অংশ নিচ্ছে ১৭৯ জন শিক্ষার্থী। শিক্ষা বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচনী পরীক্ষায় এক বিষয়ে ফেল করা শিক্ষার্থীকেও চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিতে দেয়ার নিয়ম না থাকলেও নির্বাচনী পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ৮ বিষয়ে ফেল করাদের যোগ্য বলা হয়েছে। কিন্তু বোর্ডের নিয়ম উপেক্ষা করেই অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের মাধ্যমে বাণিজ্যের দুয়ার খুলে শিক্ষার্থীদের ধ্বংসের পথে ধাবিত করছে কর্তৃপক্ষ। অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের ফলে অনেক শিক্ষার্থী জরিমানা দিয়েও চূড়ান্ত পরীক্ষার ফরম পূরণ করেছে। এ ব্যাপারে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর শাহেদা ইসলাম জানান, চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেয়াদের নিয়ে স্কুল কর্তপক্ষ কোন ধরনের পাঁয়তারা করলে তা খতিয়ে দেখা হবে। অভিভাবকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত স্কুলের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত অর্থ নেয়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে স্কুল কমিটির সভাপতি ও ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জানান, স্কুলের ৩৯ শিক্ষক-শিক্ষিকার মধ্যে মাত্র ১৭ জন এমপিওভুক্ত। বাকি ২২ জনের বেতন স্কুল ফান্ডে চলে বিধায় অতিরিক্ত অর্থ নিতে হচ্ছে।
×