ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ছড়িয়ে পড়েছে জাজিরা পর্যন্ত, পদ্মা সেতুর কর্মযজ্ঞে নতুন গতি

মাওয়ায় ভারি যন্ত্রপাতি

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ২৭ নভেম্বর ২০১৬

মাওয়ায় ভারি যন্ত্রপাতি

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ মাওয়ায় ভারি যন্ত্রপাতির ভিড় বেড়েছে। তা ছড়িয়ে পড়েছে জাজিরা পর্যন্ত। চারদিকে এখন কাজ আর কাজ। কাজের প্রসার আরও বেড়ে যাওয়ায় দৃশ্যপটও পাল্টাতে শুরু করেছে। মূল সেতুর কাজ এতদিন পানির নিচেই ছিল বেশি, এখন দৃশ্যমান হতে চলেছে। সেতুর জাজিরা প্রান্তে ভয়াডাক্টের পাইল বসছে হরদম। আর নদীতে পাইলের পাশাপাশি এখন পিলারও হচ্ছে। সেতু বুননের কাজে পেয়েছে এখন নতুন গতি। তাই রাতদিন এখন ভারি ভারি যন্ত্রপাতির নানা রকম শব্দে বিশেষ পরিবেশ তৈরি করেছে আশপাশে। এসব শব্দ যেন এই এলাকার আশীর্বাদ। তাই আশপাশের এলাকার মানুষের নানা রকম অভিজ্ঞতা এই নিয়ে। লৌহজং উপজেলার কনকসার নতুনকান্দি গ্রামের রেজাউল করিম (৪৮) বলেন, সেতু তৈরির এসব যত শব্দ ভেসে আসে, ততই ভাল লাগে। মনে হয় এটি আমাদের বাঙালীর বীরত্বের এক দৃষ্টান্ত তৈরি হচ্ছে। তার মা বৃদ্ধ রাজিয়া সুলতানা (৭০) বলেন, সেতু নির্মাণের শব্দগুলো আমাদের এখন সব সময়ের সাথী, এই শব্দ না শুনলেই বরং খারাপ লাগে। খোঁজ নেই কেন, শব্দ হচ্ছে না কেন। এই গ্রামটি সেতুর নির্মাণস্থলের প্রায় চার কিলোমিটার দূরে। আর প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরের শ্রীনগর উপজেলার কুকুটিয়া ইউপির টুনিয়া মান্দ্রা গ্রাম। এই গ্রামের জামিল ব্যাপারী, আজাহার হোসেন (৫২) বলেন, হ্যামারের শব্দে ছন্দ রয়েছে। এই শব্দের সাথে আমাদের অর্জনের নানা ছন্দও শুনতে পাই। সেই ছন্দে যে কত প্রশান্তি দেয় তা বুঝাতে পারব না। এই কৃষক বলেন, ‘কোনদিন চিন্তাও করিনি পদ্মায় এত বড় ব্রিজ হইতে পারে। আর এখন দেখছি এই ব্রিজ হইতাছে আমাগো নিজেগো টাকায়। আর এইহানে এলাহি কা-। কত রকমের যন্ত্রপাতি দেখলেই বুঝা যায় বিরাট কিছু হইতাছে। তয় এই ভাললাগা কেমনে বুঝাইমু।’ সেতুর চারদিকে সাফাল্য গাথা নানাভাবে ধারণ করছে মানুষ। শুধু দিন গুনছে কবে পদ্মা সেতু হবে। বলতে বলতেই এগিয়ে চলেছে কাজের গতি। মূল সেতুর কাজে এখন নতুন গতি পেয়েছে। মূল সেতুর কাজ প্রায় ৩৪ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে এই অগ্রগতির অনেকটাই দৃশ্যমান হবে। আর এই দৃশ্যমান প্রক্রিয়ার কাজ এখন চলছে পুরোদমে। পদ্মা সেতুর প্রথম সুপার স্ট্রাকচার বসবে জাজিরা প্রান্তের ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে। তাই এই দু’ পিলারের কাজের দিকে সকলের নজর বেশি। ৩৭ নম্বর পিলারের কাজ বেশি এগিয়ে রয়েছে। এই পিলারের ছয়টি পাইলই স্থাপন হয়েছে। এখন বাকি কংক্রিটিং এবং পিয়ার তৈরি। আর ৩৮ নম্বর পিলারে চারটি পাইল স্থাপন হয়েছে। বাকি কাজ করতে দেশী-বিদেশী কর্মীরা নদীর মাঝে হরদম ব্যস্ত। এই পিলারে এখন দুই হাজার কিলোজুল ক্ষমতার নতুন জার্মানি হ্যামার কাজ করছে। এই দুই পিলারের উপরে সুপার স্ট্রাকচার বসবে। সেটির কাজ চলছে মাওয়ার কুমারভোগের ওয়ার্কশপে। এদিকে সংযোগ সেতুর কাজও এগিয়ে চলেছে। জাজিরা প্রান্তে ভয়াডাক্টের ১৮টি পাইল স্থাপন হয়েছে। এদিকে শুষ্ক মৌসুমে উভয় প্রান্তে নদী শাসনসহ সেতুর অন্যান্য প্যাকেজের কাজেও নতুন গতি এসেছে। মাওয়ায় পদ্মা সেতুর উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ভাসমান ক্রেন টিনায়ইহাও বুধবার পৌঁছার পর এটি দেখতে মানুষের ভিড় বাড়ছে। এই প্রকল্পে সবচেয়ে ভারি যন্ত্র এটি। আর এটি পৌঁছে যাওয়ায় সেতুর কাজের অগ্রগতিও সহজর হচ্ছে। ভাসমান এই ক্রেনই স্থাপন করবে সেতুর সুপার স্ট্রাকচার। মাওয়ার কুমারভোগের কনস্ট্রাকশন এলাকা সংলগ্ন পদ্মায় এটি নোঙ্গর করে রাখা হয়েছে। ৩ হাজার ৬শ’ টন ক্ষমতাসম্পন্ন ক্রেনটি এখানে ব্যবহারের আনুষাঙ্গিকতাও প্রস্তুত করা হচ্ছে। এখন দেশের সবচেয়ে উচ্চ ক্ষমতার ভাসমান ক্রেন এটি। পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের জানান, এই ক্রেন প্রায় ২ হাজার ৯শ’ টন ওজনের স্প্যানটি (১৫০ মিটার দীর্ঘ সুপার স্ট্রাকচার) তুলে নিয়ে স্থাপন করবে। এতেই বোঝা যায় কত বিশাল কাজ হচ্ছে এখানে।
×