বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ৬১ জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তৃণমূলের সুপারিশের পাশাপাশি তিন স্তরের গোপন জরিপের ভিত্তিতে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে দলটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা টানা দু’দিন দীর্ঘ বৈঠক শেষে শুক্রবার রাতে সাংবাদিকদের সামনে চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
প্রার্থী তালিকায় চমক রয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র পদে দলীয় সমর্থন বঞ্চিত মহানগর নেতা আনোয়ার হোসেন। তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের মনোনয়ন পেয়েছেন। বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাইকে গণভবনে ডেকে এনে পরবর্তীতে ভাল মূল্যায়নের আশ্বাস দিয়ে তাঁকে ম্যানেজ করা হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
ব্রিফিংকালে ওবায়দুল কাদের বলেন, সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় সর্বস্মতিক্রমে নানা বিচার বিশ্লেষণ করে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখানে মনোনয়নের বিষয় নয়, আমরা সিলেকশন করেছি। সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সদস্য বা সংরক্ষিত সদস্যপদে আমরা সিলেকশন করছি না। এটা চূড়ান্ত করবেন জেলা আওয়ামী লীগ, সংশ্লিষ্ট উপজেলা-পৌরসভা আওয়ামী লীগের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনটি জরিপের ভিত্তিতে আমরা প্রার্থী সিলেকশন করেছি। এই তালিকা থেকে যারা কেন্দ্রের কাছে আবেদন করেছেন তাদের নাম যাচাই বাছাই করেই প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। বেশ কিছু জেলা থেকে ব্যক্তিগতভাবে, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও খোঁজ-খবর নিয়েছেন। সব মিলিয়ে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে, ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের সম্পর্কে তিনি বলেন, আগে দেখা যাক কী হয়।
আগের দিনের বৈঠকে ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও রংপুর বিভাগের জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করা হয়। শুক্রবার চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনা শেষে তা চূড়ান্ত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে সাড়ে নয়টা পর্যন্ত বৈঠকে মনোনয়ন বোর্ডের অধিকাংশ সদস্যই উপস্থিত ছিলেন।
এবারই প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। সংসদ, সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যবস্থা থাকলেও জেলা পরিষদে প্রত্যক্ষ ভোটের বিধান নেই। পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন পরোক্ষ ভোটে। ভোট দেবেন ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। তাদের ভোটে এক জন চেয়ারম্যান, ১৫ সদস্য ও সংরক্ষিত ৫ নারী সদস্য নির্বাচিত হবেন।
যারা মনোনয়ন পেলেন ॥ রংপুর বিভাগ- পঞ্চগড়ে আবু বকর সিদ্দিক, ঠাকুরগাঁওয়ে মুহাম্মদ সাদেক কোরাইশী, নীলফামারীতে মমতাজুল হক, কুড়িগ্রামে মো: জাফর আলী, গাইবান্ধায় সৈয়দ শামসুল আলম, লালমনিরহাটে মতিয়ার রহমান, দিনাজপুরে আজিজুল ইমাম চৌধুরী ও রংপুর জেলায় ছাফিয়া খানম।
রাজশাহী বিভাগে ॥ পাবনায় মোহাম্মদ রেজাউল করিম লাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জে মো: মাইনুদ্দিন ম-ল, বগুড়ায় ডাঃ মকবুল হোসেন, নাটোরে মোঃ সাজেদুর রহমান খান, জয়পুরহাটে আরিফুর রহমান রকেট, রাজশাহীতে মাহবুব জামান ভুলু, নওগাঁয় এ কে এম ফজলে রাব্বী এবং সিরাজগঞ্জে আব্দুল লতিফ বিশ্বাস।
খুলনা বিভাগ ॥ বাগেরহাটে শেখ কামরুজ্জামান, খুলনায় শেখ হারুন অর রশীদ, মেহেরপুরে এ্যাডভোকেট মিয়াজান আলী, কুষ্টিয়ায় হাজী রবিউল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গায় মাসুদুর রহমান মঞ্জু, মাগুড়ায় পঙ্কজ কুমার কু-ু, যশোরে শাহ হাদীউজ্জামান, নড়াইলে সৈয়দ আইয়ুব আলী, বাগেরহাটে শেখ কামরুজ্জামান টুকু, ঝিনাইদহে কনক কান্তি সাহা ও সাতক্ষীরায় মুনসুর আহমেদ।
বরিশাল বিভাগ ॥ বরিশালে আলতাফ হোসেন, ভোলায় আব্দুল মোমিন টুলু, ঝালকাঠিতে সরদার শাহ আলম, পিরোজপুরে শাহ আলম, বরগুনায় দেলোয়ার হোসেন ও পটুয়াখালীতে আলহাজ খান মোশাররফ হোসেন।
ঢাকা বিভাগ ॥ ঢাকায় মাহবুবুর রহমান, টাঙ্গাইলে ফজলুর রহমান খান ফারুক, মানিকগঞ্জে গোলাম মহীউদ্দিন, ফরিদপুরে লোকমান হোসেন, মুন্সিগঞ্জে আলহাজ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, গাজীপুরে আখতারুজ্জামান, নরসিংদীতে এ্যাডভোকেট মোঃ আসাদুজ্জামান, কিশোরগঞ্জে জিল্লুর রহমান, ফরিদপুরে লোকমান হোসেন মৃধা, রাজবাড়ীতে ফকীর আবদুল জব্বার, মাদারীপুরে মিয়াজউদ্দিন খান, শরীয়তপুরে ছাবেদুর রহমান (খোকা শিকদার), গোপালগঞ্জে চৌধুরী এমদাদুল হক এবং নারায়ণগঞ্জ জেলায় আলহাজ আনোয়ার হোসেন।
ময়মনসিংহ বিভাগ ॥ ময়মনসিংহে ইউসুফ খান পাঠান, শেরপুরে চন্দন কুমার পাল, জামালপুরে এইচ আর জাহিদ আনোয়ার ও নেত্রকোনায় প্রশান্ত কুমার রায়।
সিলেট বিভাগ ॥ সিলেটে লুৎফর রহমান, হবিগঞ্জে ডাঃ মুশফিক হুসেন চৌধুরী, সুনামগঞ্জে এনামুল কবীর ইমন ও মৌলভীবাজারে আজিজুর রহমান।
চট্টগ্রাম বিভাগ ॥ চট্টগ্রাম জেলায় মোহাম্মদ আবদুস সালাম, নোয়াখালীতে ডাঃ এবিএম জাফরউল্লাহ, কক্সবাজারে মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সৈয়দ একেএম এমদাদুল বরী, লক্ষ্মীপুরে শামছুল ইসলাম, কুমিল্লায় আবু তাহের, ফেনীতে আজিজ আহমেদ চৌধুরী এবং চাঁদপুরে এম আবু ওসমান চৌধুরী।
নির্বাচন কমিশন গত ২০ নবেম্বর দেশের তিন পার্বত্য জেলা (বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি) ব্যতিত ৬১ জেলা পরিষদের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ১ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ৩ ও ৪ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ১১ ডিসেম্বর এবং প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ করা হবে ১২ ডিসেম্বর। ২৮ ডিসেম্বর জেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে।
আওয়ামী লীগের দফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেতে ৭০৩ জন আবেদন করেছেন। ৮ বিভাগের মধ্যে সব থেকে বেশি আবেদন এসেছে খুলনা বিভাগ থেকে। এ বিভাগে আবেদন পড়েছে ১৩৩। আর সবচেয়ে কম ৩২ আবেদন পড়েছে সিলেট বিভাগ থেকে। জেলা পর্যায়ে সর্বাধিক আবেদন পড়েছে পাবনা জেলা থেকে। এরপর শেরপুর থেকে ২৫, নোয়াখালীতে ২৩, চাঁদপুর ও পঞ্চগড় থেকে ২২ আবেদন পড়েছে।
