ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

থাকছে খেলার মাঠও

ধূপখোলা মাঠে শিশু পার্ক হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ২৬ নভেম্বর ২০১৬

ধূপখোলা মাঠে শিশু পার্ক হচ্ছে

মশিউর রহমান খান ॥ দেশের সর্বাধুনিক ও সব ধরনের শিশুবান্ধব সুযোগ-সুবিধা সংবলিত প্রযুক্তি সম্পন্ন শিশুপার্ক নির্মাণ করবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) কর্তৃপক্ষ। রাজধানীতে বসবাসকারী নাগরিকদের শিশু সন্তানদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের স্বার্থে শিশুদের পড়ালেখার পাশাপাশি কিছুটা বিনোদন প্রদানের লক্ষ্যে রাজধানীর পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ধূপখোলা মাঠে এ পার্কটি নির্মাণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে নাগরিকদের সেবাদানকারী এ সংস্থাটি। ইউরোপীয় দেশগুলোর আদলে এ অত্যাধুনিক শিশুপার্কটি নির্মাণ করা হবে। ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকনের মতে, পরিকল্পনাধীন এ ধরনের শিশুপার্ক বাংলাদেশে তো নয়ই বরং মালেশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত কিংবা বিশ্বের অনেক দেশেই দেখা মেলে না। নির্মিত হলে এটি হবে উন্নত বিশ্বের ন্যায় দেশের প্রধান সর্বাধুনিক শিশুপার্ক। এজন্য একটি বিশেষ মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে ডিএসসিসি। আগামী মাসের মধ্যেই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে এ শিশুপার্কটির নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করে নির্মাণকাজ শুরু করা সম্ভব হবে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। প্রায় ২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে এ শিশুপার্কটি তৈরি করা হবে। তবে প্রকল্পে শুধু শিশুপার্কই নয় ৭ একর জমির ওপর স্থাপিত বিশাল এ মাঠটির পুরো স্থানটিকে কাজে লাগাতে নেয়া হয়েছে নানা প্রকল্প। প্রকল্পটির পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করা গেলে ধূপখোলা শিশুপার্কটিই হবে দেশের প্রধান আধুনিক শিশুপার্ক। ডিএসসিসি সূত্র জানায়, প্রকল্পে শিশুপার্কের বাইরে খেলার মাঠও থাকবে। তবে এই মাঠটিকে কাজে লাগাতে কি কি প্রকল্প নেয়া যায় তা জানতে এলাকায় বসবাসকারী নাগরিকদের সঙ্গে আলোচনা করবেন ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। এরপর নাগরিকদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে চূড়ান্ত নক্সা প্রণয়ন করবে ডিএসসিসির পরিকল্পনা ও নক্সা বিভাগ। সূত্র আরও জানায়, শিশুপার্কটি নির্মাণের জন্য পরিকল্পনা বিভাগের কাজ অনেক আগেই সম্পন্ন করেছে। এরপর কনসালট্যান্ট নিয়োগ করে প্রকল্প এলাকার শিশুপার্কসহ বিভিন্ন স্থাপনার নক্সা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। নক্সা প্রণয়নের ক্ষেত্রে আধুনিকতার পাশাপাশি এলাকাবাসীর চাহিদা ও মতামতকেও গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন ডিএসসিসি মেয়র। ধূপখোলা মাঠটিকে কাজে লাগাতেই স্থানীয়দের মতামত নেয়া হচ্ছে। বর্তমানে রাজধানীতে প্রধান শিশুপার্কটি শাহবাগ এলাকায় অবস্থিত। ১৯৭৯ সালে রাজধানীতে শহীদ জিয়া শিশুপার্ক নামে প্রধান শিশুপার্কটি প্রতিষ্ঠিত হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য পাবলিক সেক্টরে এটিই প্রথম কোন শিশুপার্ক। তবে এই শিশুপার্কটি ১৯৮৩ সাল থেকে বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে যাত্রা শুরু করে। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের উদ্যোগে ১৫ একর জায়গার ওপর গড়ে উঠা এ পার্কটির মূল তত্ত্বাবধান করে ডিএসসিসি। এ শিশু পার্কটিতে বর্তমানে ১২টি রাইড রয়েছে। এতে একটি খেলনা ট্রেন, একটি গোলাকার মেরি গো রাউন্ড রাইড ও একাধিক হুইল রাইড রয়েছে। ১৯৯২ সালে এ পার্কে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে সৌজন্য হিসেবে একটি জেট বিমান দেয়া হয়। এ পার্কটিতে প্রতি রাইড ৮ টাকা হারে ৬টি রাইড ব্যবহার করতে দেয়া হয়। প্রতি শুক্রবার পার্কটি ২.৩০-৭.৩০ মিনিট পর্যন্ত চালু থাকে। রবিবার ছাড়া শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার ২টা-৭টা পর্যন্ত রাইডগুলো চালু থাকে। এ পার্কটিতে ঢাকার এই শিশুপার্কে প্রতিদিন ছয় হাজারের অধিক মানুষ এসে থাকে। আর ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদ-উল-আযহায় এর পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। রাজধানীতে শিশুদের জন্য সরকারী-বেসরকারীভাবে তেমন কোন বিনোদন পার্ক নেই। শাহবাগের শিশুপার্কটিও এখন অনেক পুরনো হয়ে গেছে। এর বাইরে যা আছে তাও অত্যন্ত জরাজীর্ণ। এখানে আধুনিকতার তেমন কোন ছোঁয়া নেই। আর রাজধানীর পুরান ঢাকা অত্যন্ত জনবহুল আবাসিক এলাকা। এ এলাকায় শিশুদের বিনোদনের জন্য পার্ক তো দূরের কথা, হাঁটার জায়গাও পর্যন্ত নেই। এসব বিবেচনায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের বিশাল চাহিদার কথা চিন্তা করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ধূপখোলা মাঠে যুগোপযোগী ও আধুনিক পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। তবে নতুন শিশু পার্কটিতে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় পরিবর্তন করা হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া রাইডের সংখ্যাও অনেক বাড়ানো হবে। সূত্র জানায়, আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন প্রস্তাবিত এ পার্কটিতে রাজধানী তথা সারাদেশের সকল শিশুদেরই অন্যতম বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত করতে প্রয়োজনীয় সবকিছুই রাখা হবে। এজন্য বর্তমানের শাহবাগের পার্কটির তুলনায় রাইডের ব্যয়ও বাড়বে। ডিএসসিসি সূত্র জানায়, পুরান ঢাকার ৭ একর জমির ওপর ধূপখোলা খেলার মাঠটিতে প্রস্তাবিত শিশুপার্কটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ১০টি রাইডার থাকবে। এসব রাইডার দেশের সরকারী-বেসরকারী কোন শিশুপার্কে এখনও ব্যবহার হয়নি। সূত্র জানায়, পার্কে প্রবেশের পর শিশুদের পরিপূর্ণ উচ্চ প্রযুক্তি সম্পন্ন বিনোদনের পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর ন্যায় সর্বাধুনিক রাইডার ব্যবস্থা রাখা হবে। আর এজন্য ব্যয় হবে ১৩৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এছাড়াও অফিস, গেট, দেয়ালসহ বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। প্রকল্প সূত্র জানায়, দেড় বছর মেয়াদে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে এ প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ২০১৮ সালের জুনে শেষ হবে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কনসালট্যান্ট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। শিশুপার্কটির ডিজাইনের কাজও ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে। ডিজাইন যাচাই-বাছাইয়ের পরই জানুয়ারিতে টেন্ডার আহ্বানের মাধ্যমে কাজ শুরু করা সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে শিশুপার্কটি তৈরিতে পুরান ঢাকার স্থানীয় নাগরিকদের মতামতকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। উল্লেখ্য, এর আগে গত ২৯ মার্চ পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার সোহরাওয়ার্দী সরকারী কলেজ মিলনায়তনে কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠানে ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন আগামী ৬ মাসের মধ্যে শিশুদের বিনোদনের জন্য পুরান ঢাকার ধূপখোলা মাঠে অত্যাধুনিক শিশুপার্ক নির্মাণকাজ শুরু করা হবে বলে ঘোষণা দেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন জনকণ্ঠকে বলেন, সময়ের সঙ্গে ও চাহিদার প্রেক্ষিতে রাজধানীর পুরান ঢাকার ধূপখোলায় দেশের সর্বাধুনিক ও প্রযুক্তি সম্পন্ন শিশুপার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে এ পার্কটি তৈরির নক্সা প্রণয়নের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এজন্য এলাকার স্থানীয় নাগরিকদের মতামত নেয়া হবে। ইউরোপীয় দেশগুলোর আদলে শিশুবান্ধব এ অত্যাধুনিক শিশুপার্কটি নির্মাণ করা হবে। পরিকল্পনাধীন এ ধরনের শিশুপার্কটি বাংলাদেশে তো নয়ই বরং মালেশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত কিংবা বিশ্বের অনেক দেশেই দেখা মেলে না। নির্মিত হলে এটি হবে উন্নত বিশ্বের ন্যায় সর্বাধুনিক শিশুপার্ক। প্রায় ২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে বিশ্বের অত্যাধুনিক এ শিশু পার্কটিতে শিশুদের জন্য পরিপূর্ণ বিনোদনের সব রকমের ব্যবস্থা থাকবে। আশা করি ২০১৭ জানুয়ারি থেকে এ পার্কটির নির্মাণকাজ শুরু করা সম্ভব হবে। তৈরির পর রাজধানীতে বসবাসকারী নাগরিকদের শিশু সন্তানদের জন্য এটিই হবে প্রধান বিনোদনের স্থান।
×