ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বীর ভবন

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৬ নভেম্বর ২০১৬

বীর ভবন

মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। সারাজীবন এ জাতি মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ঋণী থাকবে। বিভিন্ন দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের সংগ্রামী, বীরযোদ্ধা, গণতন্ত্রের জন্য লড়াকু নেতাকর্মী- রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে বিশেষ মর্যাদা পেয়ে থাকেন। তারা পরিগণিত হন বিশেষ ও বিশিষ্ট নাগরিক হিসেবে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, আমাদের দেশের বাস্তবতা অনেকটাই ভিন্ন। অপ্রিয় হলেও সত্য এখনও সমাজে দেশের এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রাপ্য সম্মান সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। বহু মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবার অবহেলিত এবং সুবিধাবঞ্চিত নাগরিক হিসেবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বহু মুক্তিযোদ্ধা বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন, অর্থের অভাবে খেতে পাননি। বিশেষ করে ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর নির্বিচারে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা, তাদের প্রতি নানাভাবে অসম্মানজনক আচরণ শুরু হয়। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের তোষণ, রাজনীতিতে পুনর্বাসনসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়। ’৯৬ সালে প্রথমবারের শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০০১ সালে জামায়াত-বিএনপি সরকার গঠন করে চিহ্নিত রাজাকারদের মন্ত্রী বানায় এবং নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূলুণ্ঠিত করে। ২০০৮ সালে হাসিনা সরকার আবারও ক্ষমতায় এসে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধিসহ নানা কল্যাণমূলক ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় পদক্ষেপ নেয়। সেই ধারাবাহিকতায় এবার অসচ্ছল ও বাসস্থান নেই এমন মুক্তিযোদ্ধাদের বাসস্থান গড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, দেশের অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের ৯৮২ বর্গফুটের একটি করে ফ্ল্যাট দেবে সরকার। এই ভবনের নাম দেয়া হবে ‘বীর ভবন’। উল্লেখ্য, বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে ভাতা দেয়া হয়। বিশেষ করে যেসব মুক্তিযোদ্ধা অসম্মানজনক পেশায় নিয়োজিত এবং অন্যের জমিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তাদের সবার আগে ফ্ল্যাট দেবে মন্ত্রণালয়। নিজের কোন ভূমি নেই, যাদের নামে আজ পর্যন্ত সরকার কোন খাস জমি বরাদ্দ দেয়নি কিংবা যারা আজ পর্যন্ত সাধারণ সুবিধার বাইরে বিশেষ কোন সরকারী সুবিধা গ্রহণ করেননি, তাদেরও এসব ফ্ল্যাট বরাদ্দে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। এমনকি বীরাঙ্গনা হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্ত্রীদের ফ্ল্যাট বরাদ্দের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে। তবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা পোষ্যগণ আবেদন করতে পারবেন না। দেশের ৪১০টি উপজেলায় খাস জমিতে ৮শ’টি পাঁচতলা ভবনে ফ্ল্যাটগুলো নির্মাণ করে দেবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সরকারী অর্থায়নে ২ হাজার ৪৭২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন মেয়াদে ফ্ল্যাটগুলো নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি ফ্ল্যাটে থাকবে দুটি বেডরুম, দুটি টয়লেট, বাসায় সহজে চলাচলের জন্য দুটি করে ব্যালকনির পাশপাশি গোসলখানাসহ আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা ভবনগুলোর চারপাশে আধুনিক নাগরিক সুবিধা থাকবে। প্রধান সড়কের সঙ্গে ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। আশপাশে থাকবে সকালে হাঁটার রাস্তা, সড়কবাতি ও ফুলের বাগান। ফ্ল্যাট প্রাপ্যদের নির্বাচন ও বরাদ্দে অনিয়ম ঠেকাতে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি নীতিমালাও তৈরি করেছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত সঠিক এবং সময়োপযোগী। সুবিধাবঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধারা এতে উপকৃত হবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। উদ্যোগটি সফলভাবে করা গেলে মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ মূল্যায়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রের সম্মান-মর্যাদা আরও বাড়বে বলে আশা করা যায়। এখন দেখতে হবে বরাদ্দের ক্ষেত্রে যেন কোন অনিয়ম ও হয়রানির ঘটনা না ঘটে। সরকার এবং সংশ্লিষ্টরা এই বিষয়ে গুরুত্ব দেবেনÑ এই প্রত্যাশা সবার।
×