ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পল্লবী বাড়ৈর ফল বাতিল করে অন্য এক পরীক্ষার্থীকে দায়ী করল কর্তৃপক্ষ

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৬ নভেম্বর ২০১৬

পল্লবী বাড়ৈর ফল বাতিল করে অন্য এক পরীক্ষার্থীকে দায়ী করল কর্তৃপক্ষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভর্তি পরীক্ষা না দিয়েও ভর্তির জন্য শিক্ষার্র্থীর মনোনীত হওয়ার ঘটনা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টির পর ফল সংশোধন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রকাশ করা হয়েছে সংশোধিত ফল। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর) ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এ অবস্থার জন্য দায়ী করেছে নাসরিন হোসাইন নামের এক শিক্ষার্থীকে। এর আগে ভর্তি পরীক্ষা না দিয়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়ে গেছেন এক ভাগ্যবান শিক্ষার্থীÑ এমন খবর দুদিন ধরে গণমাধ্যমে প্রকাশের পর তোলপাড় সৃষ্টি হয়। প্রশ্নের মুখে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম। ঘটনা টের পেয়েই উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক তদন্ত করে এর রহস্য উদ্ঘাটনসহ এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার ঘোষণা দেন। বলেন, এটা সুখবর; যে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছে বলে ফল প্রকাশ হয়েছে তার পক্ষ থেকেই অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছে। শিক্ষার্থী সৎ বলেই বিষয়টি জানিয়েছে। তবে অবশ্যই এর রহস্য বের করা হবে। কারণ এত বড় ঘটনা তো হতে পারে না। জানা গেছে, ভর্তির এ কেলেঙ্কারীরই জন্ম দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউট বা আইইআর। ইনস্টিটিউটের অধীন এমএড (ইভিনিং) ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৮ নবেম্বর। এখানে ভর্তির জন্য আবেদন করেছিলেন পল্লবী বাড়ৈ নামের এক প্রার্থী, যার রোল নম্বর ২৫৫৩। তবে আবেদন করলেও অসুস্থতার জন্য বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের এ সদস্য ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। অথচ ফল প্রকাশ করার পর দেখা গেল মেধা তালিকায় পল্লবী বাড়ৈর নাম। আইইআরের নোটিস বোর্ডে ফল টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে পল্লবী বাড়ৈর মেরিট স্কোর ৭৬ এবং মেরিট পজিশন ৪১। বিষয়টি প্রথম নজরে এসেছে পরীক্ষায় অংশ নেয়া ওই প্রার্থীর কয়েক পরিচিত ব্যক্তির। তারাই তাকে ফোন করে জানান যে, মেধা তালিকায় নাম উঠে এসেছে। এরপর ঘটনার রহস্য উন্মোচনে তার পরিবারের পক্ষ থেকে উপাচার্যের কাছে আবেদন করা হয়। এদিকে ঘটনাটি নিয়ে যখন সমালোচনা শুরু হয়েছে ঠিক তখন শুক্রবার ঘটনার পুরো দায় তৃতীয় এক শিক্ষার্থীর ঘাড়ে চাপিয়ে গণমাধ্যমে ব্যাখ্যাসহ সংশোধিত ফল প্রকাশ করেছেন আইইআরের পরিচালক অধ্যাপক হোসনে আরা বেগম ও মাস্টার্স অব এডুকেশন (সান্ধ্য) ভর্তি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। ‘একজন পরীক্ষার্থীর ভর্তি পরীক্ষার সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ’ শিরোনামে এক ব্যাখ্যায় ভর্তি কমিটির সভাপতি ও পরিচালক বলেছেন, ১৮ নবেম্বর অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষায় আবেদনকারী নাসরিন হোসাইন (রোল-২৫৫৮) অংশগ্রহণ করেন। আইইআর ভবনের ২০৭ নম্বর কক্ষে তার আসন নির্ধারিত ছিল। কিন্তু প্রবেশপত্রে ২৫৫৮ শেষ অঙ্ক ৮ অস্পষ্টতার কারণে তার নিকট ৩ প্রতীয়মান হওয়ায় তিনি ভুলক্রমে ২১৮নং কক্ষের রোল নম্বর ২৫৫৩-এর আসনে পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন। রোল ২৫৫৩-এর পরীক্ষার্থী পল্লবী বাড়ৈ অনুপস্থিত থাকায় নাসরিন হোসাইন উপস্থিত পত্রে ২৫৫৩ রোলের বিপরীতে স্বাক্ষর করেন। পরবর্তীকালে ফল প্রস্তুতকালে কম্পিউটারের স্বয়ংক্রিয় প্রোগ্রামে রোল ২৫৫৩-এর নামে নাসরিন হোসাইনের ফল প্রকাশিত হয়। আইইআর কর্তৃপক্ষ আরও দাবি করেছে, নাসরিন হোসাইন (রোল-২৫৫৮) ভর্তি পরীক্ষার উত্তরপত্রে নিজের ভুল রোল লেখার বিষয়টি বুঝতে পেরে তা সংশোধনের আবেদন করলে তা যাচাই-বাছাই করে ভুল সংশোধন করা হয়। সংশোধিত ফল অনুসারে অনুপস্থিত পরীক্ষার্থী পল্লবী বাড়ৈর (রোল-২৫৫৩) নামে প্রকাশিত ফল বাতিল করা হয় এবং নাসরিন হোসাইনের (রোল-২৫৫৮) প্রাপ্ত স্কোরের ভিত্তিতে তাকে উত্তীর্ণ ঘোষণা করা হয়। কর্তৃপক্ষ তাদের দেয়া ব্যাখ্যায় বিভ্রান্তি দূর হবে দাবি করে বলেছে, সংবাদে জালিয়াতির বিষয়ে যে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে তা অমূলক ও ভিত্তিহীন। আশা করি সংশোধিত ফলাফলের বিববণ সংশয় দূর করবে। প্রয়োজনে সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত নথি দেখে যাওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন পরিচালক ও পরীক্ষা কমিটির প্রধান। এদিকে বিতর্কের মুখে ফলে ভুলের প্রমাণ পাওয়ায় বিষয়টিতে তদন্তের দাবি উঠেছে।
×