ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর বাজার

কমছে মোটা চাল ও সবজির দাম ॥ বাড়ছে চিনি, লবণের

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৬ নভেম্বর ২০১৬

কমছে মোটা চাল ও সবজির দাম ॥  বাড়ছে চিনি, লবণের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে মোটা চালের দাম। মানভেদে প্রতিকেজি স্বর্ণা ও মোটা চায়না ইরি চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৬-৪০ টাকায়। চলতি মাসের প্রথম দিকে ৪০ টাকার নিচে বাজারে কোন মোটা চাল পাওয়া যায়নি। নতুন আমন ধান কাটা শুরু হওয়ায় এখন দাম কমে আসছে। ব্যবসায়ীরা জানালেন, সামনে দাম আরও কমবে। ধানের ফলনের যে খবর পাওয়া যাচ্ছে তাতে চালে স্বস্তি পাবে সাধারণ মানুষ। যদিও সরু মিনিকেট এবং নাজিরশাইল চালের দাম কমার এখনও কোন ভাল খবর নেই। মানভেদে উন্নতমানের এসব চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৬-৫৬ টাকায়। শীতের সবজিতে ভরে উঠছে রাজধানীর কাঁচা বাজার। ফুলকপি, বাধাকপি, নতুন আলু ও শিমসহ নানা প্রজাতির সবজির সরবরাহ বেড়েছে। দামও কমে আসছে। রসুনের দাম বাড়লেও কমার তালিকায় আছে মসুর ডাল। চিনি ও লবণ আগের মতো বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। ভোজ্যতেল, আটা, ডিম ও মাছ-মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। রাজধানীর কাপ্তান বাজার, কাওরান বাজার এবং পলাশী বাজার ঘুরে নিত্যপণ্যের দরদামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার সকালেই নিত্যপণ্যের বাজারে আসেন ক্রেতারা। কাঁচা বাজার থেকে কিনে নেন শীতের সবজি। অন্যান্য দিনের তুলনায় ছুটির এই দিনে চাহিদা বেশি থাকায় বাজারে সব ধরনের পণ্যের সরবরাহ বাড়িয়ে থাকেন ব্যবসায়ীরা। কাপ্তান বাজারের সবজি ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, সবজির দাম কমে আসছে। সরবরাহ বাড়ায় সামনের দিনগুলোতে আরও দাম কমবে। তিনি বলেন, শুক্রবার ক্রেতা বেশি থাকায় সাধারণত দাম একটু বাড়ে, কিন্তু আজ কোন সবজির দাম বাড়েনি। শুক্রবার বাজারে ফুলকপি, বাঁধাকপি আকারভেদে ২৫-৩০ টাকা, মুলা ২০, শিম ৬০, টমেটো ৭০-৮০ টাকা কেজি। লাউ বিক্রি হয়েছে ৩০-৪০ টাকায়। ঢেঁড়স, ঝিঙা, জালি কুমরো, করলা, বরবটি, ধুন্দল ও পটল বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৬০ টাকা করে। বেগুন প্রতিকেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কচুরমুখি ৩৫, পেঁপে ২৫, শসা ৩০, কাঁচাকলা ৩০ টাকা হালি, লেবু ২৫ টাকা হালি, পুরনো আলু বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি ২৮-৩২ টাকায়। যদিও প্রতিকেজি নতুন আলু বিক্রি হয়েছে ৮০-১০০ টাকা। এছাড়া প্রতিকেজি পেঁয়াজ (দেশী) ৩৫-৪০ টাকা, আমদানি করা পেঁয়াজ ২৫-৩০ টাকা, রসুন ১৮৫-২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আদা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। মাছে স্বস্তি, মাংস স্থিতিশীল ॥ বাজারে দেশীয় মাছের সরবরাহ বেড়েছে। পাওয়া যাচ্ছে ইলিশ মাছ। এছাড়া সামুদ্রিক মাছেরও কমতি নেই। আর এ কারণে মাছের বাজারে স্বস্তি পাচ্ছেন ক্রেতারা। মাছের বাজারে রুই মাছ (ছোট) ১৮০ টাকা, রুই (বড়) ২২০ টাকা কেজি। ছোট কাতলা ১৪০-২৫০, চিংড়ি (ছোট) ৪০০ টাকা কেজি, চিংড়ি মাঝারি ৬০০-৭০০, তেলাপিয়া ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ছোট সাইজের ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকায়। এছাড়া মাঝারি সাইজের ইলিশ জোরা বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায়। পলাশী বাজারের মাছ বিক্রেতা কাজল জানালেন, নদ-নদী, ডোবা, নালা, পুকুর, হাওড়-বাঁওড় এবং জলাশয়ের পানি কমতে শুরু করায় বাজারে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের সরবরাহ বেড়েছে। দেশী প্রজাতির শৌল, শিং এবং কৈ মাছ পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে দামও কিছুটা কম। এছাড়া গরু এবং খাসির মাংসের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। অপরিবির্তত রয়েছে ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগির দাম। ১৩৫ টাকা কেজি করে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার। লেয়ার ১৬০ টাকা। আকারভেদে দেশী মুরগি কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৪০ টাকা। কমছে না লবণ এবং চিনির দাম ॥ গত দু’মাস ধরে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে লবণ ও চিনি। রাজধানীতে ১৮-২০ টাকার প্রতিকেজি লবণ বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকা এবং প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭২ টাকায়। এক বছর আগেও এই চিনি ৪২-৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আপাতত দাম কমার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বাড়তি দামে এই দুটো পণ্য বিক্রি হওয়ায় ভোক্তাদের অস্বস্তি রয়েছে। ক্রেতারা জানতে চান-কবে নাগাদ এ দুটি পণ্যের দাম স্বাভাবিক হবে। চিনির উপর থেকে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার না হওয়ায় আপাতত চিনির দাম আর কমছে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে-সব খরচ সমন্বয় করার পর প্রতিকেজি চিনি ৫৮ টাকায় বিক্রি করলেও ব্যবসায়ীরা মুনাফা করতে পারবেন। কিন্তু বাড়তি দামে চিনি বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফা করছেন। এছাড়া লবণের দাম কমাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হলেও দাম কমেনি। দু’ দফায় আড়াই লাখ টন লবণ আমদানি করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু মাদার ভেসেল ভাড়া বৃদ্ধি ও লাইটার জাহাজের সঙ্কটের কারণে সেই লবণ দেশে আনতে বিলম্ব করছেন ব্যবসায়ীরা। সঙ্কট কাটাতে আরও এক লাখ টন লবণ আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু লবণের দাম কমছে না।
×