ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ককপিট ও কেবিন ক্রুরাই মানছেন না সেলফি তোলার নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৬ নভেম্বর ২০১৬

ককপিট ও কেবিন ক্রুরাই মানছেন না সেলফি তোলার নিষেধাজ্ঞা

আজাদ সুলায়মান ॥ উড্ডয়ন ও অবতরণের সময় বিমানের ভেতরে সেলফি ও ছবি তোলার নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ককপিট ও কেবিনক্রুুরা সেটা মানছেন না। তাদের দেখাদেখি যাত্রীরাও অমান্য করছেন এ আইন। সিভিল এ্যাভিয়েশনের আইন লঙ্ঘন করে প্রায়ই ওই সময়টায় ছবি তুলতে দেখা যায়। বিমানসহ অন্যান্য দেশী-বিদেশী এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটগুলোতে সেলফি ও ছবি তোলার ঘটনা ঘটছে। বিমান টেক অফের আগ মুহূর্তে যাত্রীদের সিট বেল্ট বাঁধাসহ সেলফি না তোলার বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা যিনি করেন, তিনিই পরমুহূর্তে তা অমান্য করছেন। ইদানিং প্রায়ই ককপিট ও কেবিনক্রুদেরও সেলফি তুলতে দেখা যায়। উল্লেখ্য, সম্প্রতি কক্সবাজারে সাকিবকে বহনকারী একটি হেলিকপ্টপারে সেলফি তোলার সময় দুর্ঘটনায় একজনের প্রাণহানির পর সিভিল এ্যাভিয়েশন নড়েচড়ে বসে। বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে সিভিল এ্যাভিয়েশন সব ধরনের বিমানের অভ্যন্তরে সেলফিসহ যে কোন ধরনের ছবি তোলাসহ মোবাইল ফোন ব্যবহারে বেশকিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। বিমানযাত্রী, বিমানচালক ও কেবিনক্রুসহ সবার জন্য এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য। এটা নিশ্চিত হওয়ার পরও সম্প্রতি বিমানের একজন ক্যাপ্টেন ককপিটে বসে ম্যাকডোনাল্ডের বার্গার ও কোক রেখে সেলফি তোলার ঘটনা সিভিল এ্যাভিয়েশনের নজরে আসে। কিন্তু সিভিল এ্যাভিয়েশন এখনও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এ সম্পর্কে সিভিল এ্যাভিয়েশনের সদস্য এয়ার কমোডর মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিমান চলাকালে যাত্রী, চালক, ক্রু কেউ মোবাইল ব্যবহার করতে পারবেন না। বিশেষ করে বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের সময় অবশ্যই মোবাইল ফোন বন্ধ রাখতে হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে বিমানচালক ও কেবিনক্রুরা অনেক সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন, সেলফি তুলছেন, যা সমস্যা তৈরি করছে বলে অভিযোগ আসছে। আর এ কারণেই সবাইকে মনে করিয়ে দিতে আবারও এই নিষেধাজ্ঞার নির্দেশনা দেয়া হলো। এই নির্দেশনা অমান্যকারী বিমান সংস্থা ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে সিভিল এ্যাভিয়েশনের ৩৩৩ রুল অনুযায়ী কারাদ-, জরিমানা, লাইসেন্স ও সনদ বাতিল করা হতে পারে। বেবিচকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে- বিমান চলার সময় বিমানচালক ও কেবিনক্রুরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে সেলফি, ছবি কিংবা ভিডিও ধারণ করতে পারবেন না। এছাড়া বিমানের যাত্রীরা বিমানে ওঠানামার সময় মোবাইল ফোনে সেলফি, ছবি বা ভিডিও চিত্র ধারণ করতে পারবেন না, মোবাইল ফোন বন্ধ রাখতে হবে। তবে বিমান আকাশে ওড়ার পর যাত্রীরা স্থির চিত্র ধারণ করতে পারবেন। এছাড়া স্যামসাং গ্যালাক্সি নোট সেভেন যেটির ব্যাটারি বিস্ফোরিত হওয়ার কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে, সে কারণে স্মার্টফোন বন্ধ রেখে বিমানে চলাচল করতে হবে, চার্জও দেয়া যাবে না। সম্প্রতি বিশ্বে ঘটে যাওয়া কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্দেশনা দিয়েছে সিভিল এ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। এদিকে এটা আইনত দ-নীয় অপরাধ জেনেও ককপিটে ছবি ও সেলফি তোলার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সিভিল এ্যাভিয়েশনের ফ্লাইট সেফটি শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়- সম্প্রতি জয়নাল নামের বিমানের এক ক্যাপ্টেন ককপিটে বসে পেডেসটেল (দুই সিটের মাঝখানের কমিউনিকেশনের জায়গায়) ম্যাকডোনাল্ডের কোক আর বার্গার রেখে সেলফি তুলে সেটা তিনি নিজেই ফেসবুকে আপলোড করেন। এরপর বিষয়টি বিমানের এক বোর্ড মেম্বারের নজরে এলে সেটা তদন্তের জন্য পাঠানো হয় সিভিল এ্যাভিয়েশনে। এ দিকে ককপিটের পেডেসটেলে তরল জাতীয় পদার্থ রাখাটা খুবই বিপজ্জনক উল্লেখ করে একজন পাইলট বলেনÑ এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। পেডেসটেল এরিয়ায় তরল পদার্র্থ রাখাটা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কারণ পেডেসটেলের নিচেই থাকে নেভিগেশান ও কমিউনিকেশন সিস্টেম। তাতে যে কোন তরল পদার্থ পড়লেই, সেটা নষ্ট বা পুড়ে যেতে পারে। চল্লিশ হাজার ফুট ওপরে এমন একটি কমিউনিকেশন সিস্টেম নষ্ট হওয়াটা শুধু আর্থিক ক্ষতিই নয় বিমানের জন্যও বিপজ্জনক। এ জন্য এটা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাইলট ও ফার্স্ট অফিসার যদি পানি জুস বা ড্রিংঙ্কস পান করতে চান, সেটা ডান বামের নির্দিষ্ট এরিয়াতে রেখেই করবেন। কিন্তু পেডেসটেলে রাখার দরকার কি? ওই পাইলট যেটা করেছেন সেটা নিজের অজান্তেই ভুল করে সেটা আবার নিজেই ফাঁস করেছেন। বিমানের একজন পাইলট জানান, যাত্রীদের নিষেধ করলে সেলফি বা ছবি তোলা থেকে বিরত থাকে। কিন্তু ককপিট ও কেবিনক্রুরা সেটা মানেই না। উল্টো একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে ছবি তুলেন। বিশেষ করে আফগানিস্তানের ওপর দিয়ে চলার সময় নিচে পাহারের ছবি সংবলিত সেলফি তোলার প্রবণতা খুবই বেশি। এগুলো দেখভাল করার দায়িত্ব ক্রুদের। কিন্তু তারাই যদি আইন অমান্য করেন, সেটা সিভিল এ্যাভিয়েশনের নজরে আসবে কি করে।
×