ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘উবার’ সেবা অবৈধ ঘোষণা করেছে বিআরটিএ

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৬ নভেম্বর ২০১৬

‘উবার’ সেবা অবৈধ ঘোষণা করেছে বিআরটিএ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এ্যাপভিত্তিক ট্যাক্সি সেবার নেটওয়ার্ক উবার বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরুর তিন দিনের মাথায় ওই সেবাকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা- বিআরটিএ। শুক্রবার পত্রিকায় প্রকাশিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অনলাইন ভিত্তিক ট্যাক্সি সার্ভিস ‘উবার’ সম্পূর্ণ অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। যা মোটরযান আইন ও বিধির পরিপন্থী। এ ধরনের বেআইনী কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট ‘উবার’ মালিক ও চালকগণকে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। অন্যথায়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিআরটিএ কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে বিআরটিএ পর্যন্ত কারও কোন অনুমতি ছাড়াই উবার রাজধানীতে যাত্রী সেবা শুরু করেছে। তাছাড়া এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে কারো সঙ্গে কোন যোগাযোগও করা হয়নি। এছাড়া ঢাকা মহানগর ট্রাফিক বিভাগ থেকে শুরু করে সরকারের কোন পক্ষই প্রতিষ্ঠানটির সেবা সম্পর্কে অবগত নয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেই তারা এই সেবা কার্যক্রম চালু করেছে বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্যান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক অনলাইন ট্র্যান্সপোর্টেশন নেটওয়ার্ক কোম্পানি উবারের দাবি, বিশ্বের ৭৪টি দেশের ৪৫০টি শহরের মানুষ তাদের এ্যাপ ব্যবহার করে প্রতিদিন গড়ে ৫০ লাখের বেশি মানুষ ট্যাক্সিতে চড়ছে। এই সেবার জন্য উবারের নিজস্ব কোন ট্যাক্সি নেই। ব্যক্তিগত গাড়ি আছে এমন যে কেউ এ্যাপ ডাউনলোড করে ইমেইল ও ফোন নম্বর ব্যবহার করে নিবন্ধনের মাধ্যমে উবারের চালক হয়ে যেতে পারেন। একই এ্যাপ ব্যবহার করে সেবা নেন যাত্রীরা। উবার ম্যাপে যাত্রীরা চালকদের তাৎক্ষণিক অবস্থান জেনে নিয়ে তাকে ডাকতে পারেন। গাড়ির গতি, দূরত্ব, সময় অনুযায়ী উবার ম্যাপ তাদের মানদ- অনুযায়ী ভাড়া হিসাব করে দেয়। যাত্রা শেষে নগদ টাকা বা ক্রেডিট-ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে ভাড়া মেটানো যায়। উবার নিয়ে সতর্ক করে বিআরটিএর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ট্যাক্সিক্যাব সেবা দিতে হয় ‘ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস গাইডলাইন, ২০১০’ অনুযায়ী। কোন কোম্পানি ট্যাক্সিক্যাব চালাতে চাইলে তাকে অবশ্যই বিআরটিএর মাধ্যমে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অনুমতি নিতে হবে। ভাড়ায় চালিত বা রেন্ট-এ-কার হিসেবে পরিচালিত মোটরকার ও মাইক্রোবাসের জন্য আলাদা সিরিজে (প/ছ) রেজিস্ট্রেশন নিতে হয়। এ ছাড়া মোটরযান বিধিমালা, ১৯৪০-এর বিধি-‘১৬২ এ’ অনুযায়ী ভাড়ায় চালিত প্রতিটি মোটরগাড়ি ও মাইক্রোবাসের আলাদা রঙ (কালো বডি ও হলুদ টপ) থাকা এবং মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩-এর ৫১ ধারা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় রুট পারমিট নেয়া বাধ্যতামূলক। ‘স্মার্টফোনে ট্যাক্সিসেবা উবার বেআইনীভাবে ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস প্রদান হতে বিরত থাকা সংক্রান্ত বিআরটিএর বিজ্ঞপ্তি’ শিরোনামে জনস্বার্থে ওই বার্তায় বলা হয়, সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় ‘স্মার্টফোনে ট্যাক্সিসেবা উবার চালু হল ঢাকায়’ শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদের প্রতি বিআরটিএর দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। বিআরটিএ তথা সরকারের অনুমোদন ব্যতীত কোন ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস পরিচালনা করা সম্পূর্ণ বেআইনী, অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ঢাকা থেকে উবারের নিকটতম অফিস ভারতে। সেখান থেকে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার মাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশে এ এ্যাপ চালুর ঘোষণা দেয় উবার। সেখানে বলা হয়, গ্রামীণ ফোনও বাংলাদেশে উবারের এই উদ্যোগের সঙ্গে আছে। উবারের ব্যতিক্রমী এই সেবা বাংলাদেশে চালু হওয়ার খবরে অনেকেই আগ্রহী হয়ে ওঠেন। সেদিনই এ্যাপল স্টোর বা গুগল প্লে-থেকে উবার এ্যাপ ডাউনলোড করে ট্যাক্সি চড়েন অনেকে। প্রথম গাড়িতে চড়েন ক্রিকেটার শাকিব আল হাসান। সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, যাত্রীদের জন্য সেবা পাওয়া সহজ হওয়ায় পাশাপাশি অন্য পেশায় থেকেও সুবিধাজনক সময়ে ভাড়ায় গাড়ি চালিয়ে বাড়তি রোজগারের সুযোগ করে দেবে উবার। উবারের ভারত ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট অমিত জেইন ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, “বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রযুক্তির শক্তিকে চালক, যাত্রী এবং শহরের সুবিধার্থে কাজে লাগানোর সুযোগ পেয়ে আমরা রোমাঞ্চিত। ঢাকায় উবারের সেবাকে স্বাগত জানিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের একটি উদ্ধৃতিও ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছিল। সেখানে বলা হয়, উবার দৈনন্দিন পরিবহন ব্যবস্থাকে আরও সহজ করে তুলবে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার সূচনা ঘটাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন। প্রচারের কৌশল হিসেবে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসানের একটি ছবিও সংবাদমাধ্যমে পাঠানো হয়। সেখানে বলা হয়, উবার এ্যাপ ব্যবহার করে ঢাকায় সাকিবই প্রথম ট্যাক্সিতে চড়েছেন। তবে ব্যক্তিগত গাড়ি ভাড়ায় খাটানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আইনী বিষয়গুলো উবার কীভাবে সামাল দেবে এবং বাংলাদেশে এর অনুমোদনের বিষয়গুলো কবে কীভাবে সমাধা হয়েছে সে বিষয়ে কোন তথ্য সেখানে ছিল না।
×