ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মার্চে অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে

শীঘ্র কার্গো রফতানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হচ্ছে না ॥ যুক্তরাজ্যের বারবার শর্তারোপ

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৬ নভেম্বর ২০১৬

শীঘ্র কার্গো রফতানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হচ্ছে না ॥ যুক্তরাজ্যের বারবার শর্তারোপ

আজাদ সুলায়মান ॥ শীঘ্র প্রত্যাহার হচ্ছে না বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে সরাসরি কার্গো রফতানির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা। একের পর এক শর্তারোপ করছে ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা। বিমান ও সিভিল এ্যাভিয়েশন বেশ কিছু উন্নয়ন করলেও যুক্তরাজ্য তাতে সন্তুষ্ট হতে পারছে না। এখনও নিরাপত্তা ঘাটতি রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা। গত সপ্তাহে ব্রিটিশ ইন্টিলেজেন্স কমনওয়েলথ শাখার এডিজি জনাথন এলেনের নেতৃত্বে একটি টিমে চারদিনের সফরে ঢাকায় এসে আরও কিছু নতুন শর্ত আরোপ করেছে। ব্রিটিশ টিম পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে- এখনো শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভবনের ব্যবস্থাপনা শতভাগ নিরাপদ নয়। আরও উন্নতি করতে হবে। কোথায় কোথায় উন্নতি করতে হবে সেটাও জানিয়ে দেয়া হয়েছে। জনাথন এলেন সচিবালয়ে বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের সঙ্গে সাক্ষাতকারে জানান, কার্গো ভবনের কেজ পয়েন্ট থেকে এয়ারক্রাফট পর্যন্ত মালামাল পৌঁছানোর প্রক্রিয়ায় নিরাপত্তা ঘাটতি রয়েছে। এই পয়েন্টে নিরাপত্তা আরও জোরদারের পাশাপাশি কর্মকর্তা কর্মচারীদের আরও উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। উল্লেখ্য গত নয় মাস ধরে শাহ জালাল বিমানবন্দরে নিরাপত্তার উন্নয়নে প্রশিক্ষণের কাজ করছে রেড লাইন। এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ প্রদান ও বিমানবন্দরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি স্থাপন করা হয়েছে। আগের তুলনায় যথেষ্ট উন্নতি করার পরও যুক্তরাজ্য কেন সন্তুষ্ট হতে পারছে না সেটা রহস্যজনক। গত ১৭ নবেম্বর ওই টিম সচিবালয়ে মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের সঙ্গে তাদের শর্তাবলী আরোপ করলেও সিভিল এ্যাভিয়েশনের পক্ষ থেকে এ যাবত নেয়া কার্যকর পদক্ষেপ সম্পর্কে অবহিত করা হয়। এ সময় কার্গোর ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হলেও জনাথন এলেন সুস্পষ্ট বলে দিয়েছেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আরও উন্নতি করতে হবে। এদিকে ব্রিটিশ পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকেও তাগিদ দেয়া হয়েছে নিরাপত্তা ঘাটতি দ্রুত দূর করতে। কেননা কার্গো হাউসের রফতানি শাখা থেকে যেভাবে কার্গোর কার্টনগুলো উড়োজাহাজে নিয়ে তোলা হয়, তাতে কিছু ফাঁক ফোকর রয়ে গেছে। মূলত বার বার তাগিত দেয়ার পরও বিমান ও সিভিল এ্যাভিয়েশন ইডিএস চালু করতে পারছে না। পেলেট আনা হলেও তা বসানো হয়নি এখনও। এ সব কারণেই নিরাপত্তা বিঘিœত হবার মতো আশঙ্কা রয়ে গেছে। এ সব ঘাটতির বিষয় উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার তাগিদ দিয়েছে যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ পরিবহনমন্ত্রী ক্রিস গ্রেইলিং বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননকে লেখা এক চিঠিতে এ তাগিদ দেন। যদিও এ সম্পর্কে মন্ত্রণালয় থেকে বার বার আশ্বস্ত করা হয়েছে-পরিস্থিতি অনেক উন্নতি হয়েছে এবং আরও উন্নতি করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। চলতি বছরের শুরুতে শাহজাহাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ঘাটতির অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্য সরাসরি কার্গো চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানবন্দরে নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের একটি কোম্পানিকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আশাকরি, শীঘ্রই এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে। এদিকে সেপ্টেম্বরে পৃথিবীর সব দেশের বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন বিমানবন্দরে সংঘটিত সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে। গত বছর মিসরে সন্ত্রাসী হামলায় একটি রাশিয়ান বিমান ধ্বংস হয়ে যায়। এ বছর বেলজিয়ামের বিমানবন্দরে সন্ত্রাসীরা বোমা হামলা চালালে অনেকে হতাহত হন। এ ধরনের ঘটনা ঠেকাতেই নিরাপত্তা পরিষদে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘সিদ্ধান্ত যে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশই বাংলাদেশ পূরণ করেছে। বাকিগুলো পূরণের জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।’ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা আরও জানান রেজ্যুলেশনটিতে বিমানবন্দরে নিরপত্তা চেকিং বাড়ানোসহ যাত্রী পরিবহনের আগে যে গন্তব্যে বিমান যাচ্ছে, সেখানে যাত্রীদের তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে। এছাড়া আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ও আইনশৃঙ্খলা বহিনীর মধ্যে সমন্বয় সাধনের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের রেজ্যুলেশন মেনে চলা প্রতিটি দেশের জন্য বাধ্যতামূলক। এদিকে যুক্তরাজ্যের দেয়া সব শর্ত পূরণ করা হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে বিমানের একজন কর্মকর্তা বলেন, রেড লাইন গত নয় মাস ধরে কাজ করছে। তাদের শর্তমতে, ইতোমধ্যে কার্গো রফতানি হাউসে স্থাপন করা হয়েছে ইটিডি, আলাদা আলাদা স্ক্যানার, আর্চওয়ে, আলাদা খাঁচা ও স্টাফদের পিন কোড। এখন শুধু বাকি রয়েছে এক্সপ্লোসিভ ডিটেকটিং সিস্টেম (ডিএস)। জানুয়ারি মাসেই এটা স্থাপন করা যাবে। তারপর যুক্তরাজ্য আর কোন শর্ত আরোপের সুযোগ পাবে না। ব্রিটিশ গোয়েন্দা টিমের আরোপিত শর্তাবলী কতটা বাস্তবায়ন করা হয়েছে- সেটা সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, কার্গো হাাউসের মালামাল লোড করার প্রক্রিয়ায় নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য আলাদা স্ক্যানার, কেজ ও ট্রেকিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে। স্টল থেকে এয়ারক্রাফট পর্যন্ত কার্টনগুলো বিশেষ নিরাপত্তায় পাঠানো হয়। তবে বিমানের প্রয়োজনীয় জনবল ও যন্ত্রপািত না থাকায় কার্গো সার্ভিস বিঘিœত হচ্ছে। কার্গো হাউস থেকে বার বার শ’ দুয়েক হেলপার নিয়োগের জন্য তাগিদ দেয়া হলেও বিমান সেটা এখনও দিতে পারছে না। বিমানের সিদ্ধান্তহীনতা ও ধীরগতির জন্য গত সাত মাসেও এ নিয়োগ দিতে পারছে না। রেডলাইন অবিলম্বে এ সব জনবল বাড়ানোর তাগিদ দিলেও বিমান তা বাস্তবায়ন করতে পারছে না। একইভাবে জিএসই শাখায় নেই প্রয়োজনীয় লিফটার, পুস কার্ট ও ট্রলি। গত এক বছরেও বিমান এ সব কেনাকাটা করতে পারছে না। এ ছাড়া সিভিল এ্যাভিয়েশন পেলেট সংগ্রহ করলেও তা বসাতে পারেনি এখনও। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কার্গোর উপ-মহাব্যবস্থাপক ইফতেখার জানিয়েছেন, দরপত্র হয়েছে। খুব শীঘ্র এ সব যন্ত্রপাতি চলে আসবে। বিশেষ করে জানুয়ারি মাসেই ইডিএস চালু করা গেলে যুক্তরাজ্যের আস্থা অর্জন করা সম্ভব হবে। তারপর মার্চে এসএসসি ও ডিএফটি টিম পরিদর্শনে আসবে। তখন ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
×