ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নাসিক নির্বাচন ॥ আজ ও কাল মনোনয়নপত্র বাছাই

সাখাওয়াত হোসেনের কৌশলী প্রচার- আইভী ব্যস্ত ঢাকায়

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৬ নভেম্বর ২০১৬

সাখাওয়াত হোসেনের কৌশলী প্রচার- আইভী ব্যস্ত ঢাকায়

মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ থেকে ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন শুক্রবার কৌশলী প্রচার চালিয়েছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী সাবেক মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী পারিবারিক কাজে ঢাকায় ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। এদিকে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থীরা কৌশলে প্রতীক দেয়ার আগেই প্রচারে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। তবে নির্বাচন কমিশনের বিধি অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রচার নিষিদ্ধ। তাই প্রার্থীরা বিভিন্ন মসজিদে নামাজ আদায়, নেতাকর্মী ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাত, অসুস্থ রোগী দেখতে যাওয়াসহ নানা উপায়ে কৌশলী প্রচার চালিয়েছেন। শনিবার ও রবিবার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে। এদিকে বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন শুক্রবার নগরীর ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় রেলওয়ে জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। সেখানে মুসল্লিদের সঙ্গে কুশলাদি করেন এবং ভোট চান। পরে তিনি মিশনপাড়া এলাকায় নারায়ণগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত যুবদল নেতা মমিন উল্লাহ ডেভিডের কুলখানির মিলাদ মাহফিলে অংশ নেন। এরপর তিনি সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল এলাকায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন প্রধান, মাজেদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সাখাওয়াত হোসেন জানান, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য আবারও সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়ে বলেন, আমার প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থী ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী বলেছেন সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন নেই। তার এই বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জবাসী উদ্বিগ্ন। সে গতবারের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি করেছিলেন। এবার তিনি সেনা মোতায়েন চাইছেন না- কারণ নিজের পক্ষে সরকারী দলের প্রভাব খাটানোর জন্য তিনি এখন সেনা চাইছেন না। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। দলবাজ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহারে দাবি জানান তিনি। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী ও সাবেক মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী পারিবারিক কাজে শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকায় ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। ওই তিনি নির্বাচনী কাজ নয়, পারিবারিক কাজে ব্যস্ত ছিলেন। সারাদিন কিভাবে কাটালেন জানতে চাইলে ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী বলেন, এখনও প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়নি। এখন নির্বাচনী প্রচারে কোন সুযোগ নেই। তাই তিনি পারিবারিক কাজে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। কাউন্সিলর প্রার্থীরা থেমে নেই ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ১৭৬ জন এবং ৯টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ৩৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। ২৬ ও ২৭ নবেম্বর যাচাই-যাছাই হবে। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর থেকেই সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীরা কৌশলে নানাভাবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। বসে নেই ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। শুক্রবার সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীর অনেকেই মুসল্লিদের সঙ্গে জুমা নামাজ আদায় করেন। পরে ভোটারদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন, দোয়া চান। এছাড়াও কাউন্সিলর প্রার্থীর রাস্তাঘাট, অলি-গলি ও বাসাবাড়ি গিয়েও ভোটারদের কাছে ভোট চান। নতুন কাউন্সিলর প্রার্থীরা দিচ্ছে নানা প্রতিশ্রুতি। কেউ কেউ নির্বাচিত হলে তার ওয়ার্ডকে মডেল ওয়ার্ডে পরিণত করারও ঘোষণা দেন। বর্তমান ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের প্রতিশ্রুত হচ্ছে, আবারও নির্বাচিত হলে অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করা হবে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুর রহিম জানান, মার্কা দেয়ার পর আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করব। তবে শুক্রবার উত্তর কান্দাপাড়া জামে মসজিদে জুমা নামাজ আদায় শেষে মসুল্লি ও ভোটারদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। মুসল্লি ও ভোটারদের কাছে দোয়া চেয়েছি। ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিল শফিকুল ইসলাম জানান, এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু করিনি। প্রতীক পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করব। তবে এখন আওয়ামী লীগ নেতা ও ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছি। আমি গত ৫ বছরে প্রায় ২২ কোটি টাকার উন্নয়ন করেছি। এবার আবারও জয়ী হলে অলি-গলির রাস্তাসহ ব্যাপক উন্নয়ন করব। ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর ও সাত খুনে নিহত নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি জানান, প্রতীক পাওয়ার পর প্রচার শুরু করব। তবে এখন ভোটারদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত করছি। এ ওয়ার্ডে গত ৫ বছরে প্রায় ৫০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করেছি। আবারও জয়ী হলে আমার স্বামীর ও আমার অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজগুলো আগে শেষ করব। সাধারণ ভোটাদের প্রতিক্রিয়া ॥ ৬নং ওয়ার্ডের ভোটার মোসলেম উদ্দিন জানান, যারা উন্নয়নের জন্য কাজ করবে। তাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করব। ২০ ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবুল হোসেন জানান, যে সন্ত্রাসী, মাদকমুক্ত, ইভটিজিং, এলাকায় উন্নয়ন করবে এমন প্রার্থীকে আমরা বেছে নেব। ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আলেয়া বেগম জানান, নারী উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে তাকেই ভোট দেব। ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা খোরশেদ জানান, আমাদের এ ওয়ার্ডে অন্যান্য ওয়ার্ড থেকে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। যে যোগ্য তাকেই আমরা নির্বাচিত করব। একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা হযরত আলী জানান, পাইনাদী পূর্বপাড়া এলাকায় এখন বৃষ্টি হলে পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। ওয়ার্ডের তেমন উন্নয়ন হয়নি। তাই আসন্ন সিটি নির্বাচনে আমরা বুঝেশুনেই ভোট দেব। ১৯নং ওয়ার্ডের ভোটার আসলাম জানান, নির্বাচনের দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরপেক্ষ দেখতে চাই। উল্লেখ্য, আগামী ২২ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আজ শনিবার ও কাল রবিবার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে। ৪ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারে শেষ দিন। প্রতীক বরাদ্দ ৫ ডিসেম্বর।
×