ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলছেই, বলির পাঁঠা যাত্রী

অটোরিক্সাচালক ও যাত্রী নিরাপত্তার সিদ্ধান্ত দু’মাসেও কার্যকর হয়নি

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৬ নভেম্বর ২০১৬

অটোরিক্সাচালক ও যাত্রী নিরাপত্তার সিদ্ধান্ত দু’মাসেও কার্যকর হয়নি

রাজন ভট্টাচার্য ॥ অটোরিক্সার চালক ও যাত্রী নিরাপত্তায় নেয়া সিদ্ধান্ত দু’ মাসেও কার্যকর হয়নি। ঢাকা ও চট্টগ্রামে নিবন্ধিত ৩১ হাজার অটোরিক্সা নিরাপত্তার স্বার্থে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত কার্যকর করার কথা ছিল। পাশাপাশি অটোরিক্সা চালকদের ভাড়া নৈরাজ্য রোধে নেয়া সিদ্ধান্ত ও পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। এ কারণে দিন দিন মিটারে না চলার প্রবণতা বাড়ছে। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা চালক ও যাত্রী নিরাপত্তার স্বার্থে নেয়া সকল সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে মালিক-শ্রমিকসহ পরিবহন সেক্টরের নেতৃবৃন্দ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তারা। বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ আগস্ট বিআরটিএ কার্যালয়ে এক বৈঠক হয়। সিএনজি/ পেট্রোল চালিত ফোর স্ট্রোক থ্রি হুইলার অটোরিক্সার পুনঃনির্ধারিত ভাড়া কার্যকর নিশ্চিতকরণ, সিএনজি চালকদের নির্ধারিত পোশাক ও ছবিসহ আইডি কার্ড গলায় ঝোলানো ও মিটারে যাত্রী পরিবহন সংক্রান্ত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক (প্রশাসন) মশিয়ার রহমান। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১ অক্টোবর থেকে অটোরিক্সা চালকদের নির্ধারিত রঙের পোশাক বাধ্যতামূলক করা হয়। পাশাপাশি চালকদের বৈধ লাইসেন্স, পরিচয়পত্র, ব্যাজধারণ নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া গাড়িতে চালকের ছবিসহ পরিচয়পত্র যাত্রীদের অবলোকনের উপযোগী করে গাড়িতে প্রদর্শন করা সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এছাড়া প্রাইভেট অটোরিক্সাসহ ঢাকা মহানগরীতে চলাচলরত অটোরিক্সা চালকদের বাড়তি ভাড়া আদায়সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনাসহ চিঠি দেয়া হয়েছে বিআরটিএর পক্ষ থেকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআরটিএ কর্মকর্তারা বলছেন, আমরা চেষ্টা করছি সকল সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার। এজন্য মালিক ও শ্রমিক সংগঠনসহ সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। শ্রমিক নেতারা বলছেন, যাত্রী ও চালকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে নেয়া সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নে বড় বাধা হলো মালিকরা। তারা এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন চান না। যে কারণে মালিকদের পক্ষ থেকে কোন রকম সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। তবে মালিক সমিতি নেতৃবৃন্দ বলছেন, তারা এ ব্যাপারে যে কোন সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। পাশাপাশি বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে বিআরটিএর পক্ষ থেকে তেমন কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। ঢাকা অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হানিফ খোকন জনকণ্ঠকে বলেন, গত ১ অক্টোবর থেকে এই নীতিমালা কার্যকর হবার কথা ছিল। তিনি বলেন, যাত্রী ও চালকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এই পদক্ষেপ নেয়া হলেও সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তিনি বলেন, আমরা সমিতির পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে আামাদের সমিতির পক্ষ থেকে চালকদের কিছু পরিচয়পত্র বিতরণ করা হয়েছে। এজন্য বিআরটিএ থেকে শুরু করে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সহযোগিতা প্রয়োজন। সমিতির হিসাব বলছে, রাজধানীতে নিবন্ধিত অটোরিক্সার সংখ্যা ১৩ হাজার। মিশুকের পরিবর্তে ইতোমধ্যে আরও নেমেছে প্রায় এক হাজার গাড়ি। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদীসহ আশপাশের এলাকা মিলিয়ে ১৫ হাজারের বেশি অটোরিক্সা রাজধানীসহ আশপাশের সড়কে নিয়মিত চলাচল করছে। পুরো প্রক্রিয়াটি অবৈধ হলেও এ নিয়ে কারও কোন মাথাব্যথা নেই। এদিকে মিটারে নয়, মনগড়া ভাড়ায় চলছে ঢাকা-চট্টগ্রামের নিবন্ধিত প্রায় ৩১ হাজার সিএনজিচালিত গাড়ি। যাত্রীদের জিম্মি করে ভাড়া নেয়া হচ্ছে কয়েকগুণ। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। শত চেষ্টার পরও অটোরিক্সার নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। বাড়তি ভাড়া আদায় ও চালকদের নানা নৈরাজ্য নিয়ে আগস্টের বৈঠকেও বিস্তারিত আলোচনা হয়। গাড়ির জমা নেয়ার ক্ষেত্রে বেপরোয়া মালিকরাও। দিনে ৯০০ টাকা জমার স্থলে আদায় করা হচ্ছে সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা। দুই বেলায় দেয়া হচ্ছে গাড়ি ভাড়া। অটোরিক্সা সেক্টরের চলমান নৈরাজ্য থামাতে একটি পরিবহন সংগঠনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জমা ও ভাড়া আদায়কারী প্রায় আড়াই হাজার গাড়ির তালিকা সংশ্লিষ্টদের হাতে দেয়া হয়েছে। অটোরিক্সার নৈরাজ্য রোধে বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে গঠিত মনিটরিং কমিটিও রয়েছে। জানতে চাইলে বিআরটিএ মনিটরিং কমিটির এক সদস্য জনকণ্ঠকে জানান, দেশে চলমান সন্ত্রাস, জঙ্গী তৎপরতার প্রেক্ষিতে ও সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আমরা সবাইকে সিদ্ধান্ত জানিয়েছি। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অটোরিক্সা সেক্টরে সরকারী নিয়ন্ত্রণ না থাকায় চালক, মালিক উভয়েই বেপরোয়া। মাঝখানে বলির পাঁঠা হচ্ছেন যাত্রীরা। অটোরিক্সা চালকরা বলছেন, সরকারের নির্ধারিত জমার নিয়ম মানছে না মালিক পক্ষ। দিনে ৯০০ টাকার স্থলে একবেলা জমা দিতে হচ্ছে এক হাজার টাকারও বেশি। বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। তাই বাড়তি ভাড়া আদায়ের কথা স্বীকার করেছেন চালকদের অনেকে। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সচিব শওকত আলী বলছেন, পরিবহন সেক্টরে অরাজকতা বন্ধে মোবাইল কোর্ট চলছে। এসব সমস্যা সমাধানে যাত্রীদের সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি। রাজধানীতে অন্তত ৫০ অটোরিক্সা চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যাত্রী ও চালকের নিরাপত্তার যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সেসব বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। তবে নির্ধারিত পোশাকে গাড়ি চালানোর সিদ্ধান্ত অনেক পুরনো। যা কিছুটা হলেও এখনও কার্যকর। চালকদের বক্তব্য, বিআরটিএ, পুলিশ কিংবা মালিকপক্ষ থেকে নির্দেশনা দিলে তারা তা মানবেন। পরিচয়পত্র ও চালকের সামনে দৃশ্যমান নাম ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর ঝোলানো কঠিন কোন কাজ নয়। তারাও নিরাপত্তার স্বার্থে এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন।
×