ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অতিরিক্ত স্মার্টফোনপ্রীতি ডেকে আনছে ভয়াবহ বিপদ!

প্রকাশিত: ২১:১৩, ২৫ নভেম্বর ২০১৬

অতিরিক্ত স্মার্টফোনপ্রীতি ডেকে আনছে ভয়াবহ বিপদ!

অনলাইন ডেস্ক॥ প্রযুক্তি মানুষের কল্যানেই তৈরি। কিন্তু এই প্রযুক্তির অপব্যবহার ডেকে আনতে পারে বিপদ। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যে প্রযুক্তিগুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে তার মধ্যে স্মার্টফোন অন্যতম। এটি যেমন দরকারি, তেমনি এর প্রতি আসক্তি আপনাকে নানা বিপদে ফেলতে পারে। এমনকি নিজের অজান্তে আপনি হয়ে উঠতে পারেন মানসিক বিকারগ্রস্থ। স্মার্টফোনের ওপর এই অতিরিক্ত নির্ভরতা আমাদের স্বাস্থের, সম্পর্কের এবং জীবন যাপনের প্রতি ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আসুন জেনে নিই স্মার্টফোনের কিছু নেতিবাচক দিক সম্পর্কে- সেক্স লাইফ: স্মার্টফোন জীবনের প্রতিটা পর্ব থেকেই সময় কেড়ে নিয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে স্মার্টফোনের নেশায় সেক্স লাইফও অনেকে অবহেলা করেন। সঙ্গী যখন আপনার সঙ্গ পেতে মরিয়া, আপনি তখন হয়ত স্মার্টফোনের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরিচিত অসংখ্য মানুষের সঙ্গে চ্যাটিংয়ে ব্যস্ত। হয়ত সেলফি তুলে তা এডিট করছে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে। অথবা খেলছেন গেম। এমন নানা কায়দায় স্মার্টফোন আপনার জীবন থেকে সময় কেড়ে নিচ্ছে, যে সময়টা আপনার সঙ্গীর প্রাপ্য ছিল। এতে দূরত্ব বাড়ে সম্পর্কে। টেক্সট নেক: ক্রমাগত মাথা ঝুঁকিয়ে টেক্সট করতে করতে টেক্সট নেকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে ঘাড়ের টিস্যুর গুরুতর ক্ষতি হতে পারে। বিচ্ছিন্নতা: কোথায় বেড়াতে গেছেন, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। অথচ আপনি শুধু স্মার্টফোনে নিজের সঙ্গেই ব্যস্ত। এতে সকলের থেকে আপনি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। যা মানসিকভাবে আপনাকে ধীরে ধীরে একা করে দেয়। এক সময় হয়ত দেখবেন বন্ধুরাও আপনাকে এড়িয়ে চলছে। দুর্ঘটনা: সারা বিশ্বে প্রতি দিন যত দুর্ঘটনা ঘটে তার মধ্যে একটা বড় অংশ ঘটে ফোনে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালাতে গিয়ে বা কানে ফোন রেখে রাস্তা পার হতে গিয়ে। চোখ: স্মার্টফোন আসার পর থেকে সারা বিশ্বে মায়োপিয়ার প্রকোপ ৩৫ শতাংশ বেড়ে গেছে। এটি চোখের একটি ব্যাধি। একটানা দীর্ঘক্ষণ ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকার কারণে চোখের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এ কারণে এখন চোখের ডাক্তারের কাছে দৌড়ঝাপও বেড়ে গেছে। ইনসমনিয়া: অনেকেই স্মার্টফোন নিয়ে ঘুমোতে যান। রাতে শোওয়ার সময়ও ফোন চেক করার অভ্যাস ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়। ফলে ইনসমনিয়ার প্রকোপ বাড়ছে। এছাড়া ঘুমের সময় ফোন থেকে বের হওয়া তরঙ্গ আপনার স্নায়ুবিক নানা ক্ষতি করে থাকে। তাই ঘুমাতে যাওয়ার সময় ফোন দূরে রাখা বা বন্ধ রাখাই মঙ্গল। নমোফোবিয়া: ফোনের প্রতি এতটাই নির্ভরশীল যে এক ঘণ্টা ফোন না থাকলেই বা হঠাৎ খুঁজে না পেলেই পাগল পাগল লাগে। এটাও কিন্তু এক ধরনের মানসিক অসুখ। একে বলা হয় নমোফোবিয়া। এক্সারসাইজ: ফোনের নেশা সারা দিন আমাদের এতটাই ব্যস্ত রাখে যে বসে বসে ফোনের পেছনেই সময় কেটে যায়। কীভাবে যে দিনের পর দিন এ ভাবেই কেটে যাচ্ছে তা নিজেরাই বুঝতে পারি না। এর ফলে চলাফেরা কমে যায়। ব্যায়ামের অভাবে দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা। ত্বক: স্মার্টফোনে ব্যবহৃত নিকেল, ক্রোমিয়াম, কোবাল্টের কারণে বিভিন্ন রকম ত্বকের সমস্যা, অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। অবসাদ ও উৎকণ্ঠা: সঙ্গী কেন উত্তর দিচ্ছে না? ঠিক কতগুলো হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে রয়েছি আমি? ইনবক্সে নতুন কোন মেসেজ আসলো কিনা- এই সব অযথা চিন্তায় অকারণ উত্কণ্ঠায় ভোগেন অনেকে। যা অবসাদ ডেকে আনতে পারে। সম্পর্কের বন্ধন: স্মার্টফোনপ্রীতির কারণে সব ধরণের সম্পর্কের বন্ধনগুলো ঢিলা হয়ে যাচ্ছে। কোথাও বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিচ্ছেন, হয়ত দেখা যাচ্ছে সবাই ব্যস্ত ফোন নিয়ে। ফোন না থাকলে হয়ত এতক্ষণে গল্প-হাসি-ঠাট্টায় মেতে উঠতেন। এতে আপনার মন থেকে অবসাদ-দুঃশ্চিন্তা দূর হয়ে যেত। শরীর-মন চাঙ্গা হয়ে উঠতো। এখন সেটা হচ্ছে না। অর্থাৎ, আপনার সম্পর্কগুলোকে গলা টিপে হত্যা করছে স্মার্টফোন। আপনার জীবন থেকে স্বাভাবিক হাসি-খুশি কেড়ে নিয়েছে বিজ্ঞানের এ কল্যানজনক আবিস্কারটি। পর্নোগ্রাফি: এখন হাতে হাতে স্মার্টফোন। আর এর বদৌলতে স্কুলপড়ুয়া শিশুটির সামনেও উন্মুক্ত হয়ে গেছে পর্নোগ্রাফির বিশাল বাজার। তরুণ সমাজ মত্ত পর্নোগ্রাফিতে। এর নেশায় পড়ে নতুন প্রজন্মের শুধু শারীরিক, মানসিক বা স্বাভাবিক জীবনের ক্ষতিই হচ্ছে না, সমাজে বাড়ছে নানা অপরাধ।
×