ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিলেটের রাগীব আলী জেল হাজতে

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৫ নভেম্বর ২০১৬

সিলেটের রাগীব আলী জেল হাজতে

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ জামিন নামঞ্জুর করে শিল্পপতি রাগীব আলীকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে আদালতে তোলা হয়। এ সময় সিলেট মহানগর অতিরিক্ত মুখ্য হাকিম উম্মে সরাবন তহুরা তারাপুর চা বাগান দখলের দুটি মামলায় জামিন আবেদন নাকচ করে রাগীব আলীকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। দুটি মামলায় জামিন আবেদন নাকচ করা হলেও ‘সিলেটের ডাক’ প্রকাশনা সংক্রান্ত আরেকটি মামলায় তাকে জামিন দেয়া হয়। গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে ভারত পালিয়ে যাওয়া শিল্পপতি রাগীব আলীকে বৃহস্পতিবার সকালে আটক করে ভারতের করিমগঞ্জ ইমিগ্রেশন পুলিশ। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অবৈধভাবে বসবাসের কারণে ভারতীয় পুলিশ তাকে আটক করে। এরপর বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে সিলেটের শেওলা সীমান্ত দিয়ে রাগীব আলীকে বাংলাদেশ পুলিশের কাছে হন্তান্তর করা হয়। বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চন্দন চক্রবর্তী জানান, দুপুরে অসমের পুলিশ ও বিএসএফ ভারতে আটক রাগীব আলীকে বিজিবির কাছে হন্তান্তর করে। এরপর বিজিবি রাগীব আলীকে বিয়ানীবাজার থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। তিনি জানান, রাগীব আলীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা বিশ্বনাথ থানায় হওয়ার কারণে তাকে বিশ্বনাথ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে বিয়ানীবাজার থানা পুলিশ। এরপর রাগীব আলীকে আদালতে নিয়ে আসে বিশ্বনাথ থানা পুলিশ। ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জালিয়াতি ও প্রতারণা করে সিলেটের দুই হাজার কোটি টাকার দেবোত্তর সম্পত্তি তারাপুর চা বাগান দখলের অভিযোগে করা দুটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সাড়ে ৩ মাস পর আটক হলেন রাগীব আলী। জালিয়াতি ও প্রতারণার দুটি মামলায় গত ১০ আগস্ট রাগীব আলী ও তার একমাত্র ছেলে আবদুল হাইসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। পরোয়ানা জারির দিনই সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে গোপনে সপরিবারে ভারত পালিয়ে যান তিনি। গত ১২ নবেম্বর সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় রাগীব আলীর ছেলে আব্দুল হাইকে গ্রেফতার করে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন পুলিশ। আব্দুল হাই বর্তমানে কারাগারে আছেন। বিএসএফের অসম অঞ্চলের আইজি পাওয়ান কুমার দুবেরের বরাত দিয়ে সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা জানান, ১০ নবেম্বর রাগীব আলীর টানা ৯০ দিন ভারতে অবস্থানের মেয়াদ শেষ হয়। অতিরিক্ত ১৩ দিন অবৈধভাবে বসবাসের পর ভিসার মেয়াদ বাড়াতে বৃহস্পতিবার সকালে করিমগঞ্জ ইমিগ্রেশন অফিসে হাজির হন তিনি। এ সময় ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটক করে। তারাপুর চা বাগানসংক্রান্ত দুটি মামলার নথি থেকে জানা যায়, সিলেটের পাঠানটুলা এলাকার দেবোত্তর সম্পত্তি তারাপুর চা বাগান পুরোটাই। ১৯৯০ সালে ভুয়া সেবায়েত সাজিয়ে ৪২২ দশমিক ৯৬ একরের বাগানটির দখল নেন রাগীব আলী। এ ঘটনার দায়েরকৃত দুটি মামলায় গত ১০ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারোয়ার জাহান। অভিযোগপত্রে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জালিয়াতির ঘটনায় রাগীব আলী ও ছেলে আবদুল হাইকে আসামি করা হয়। আর প্রতারণার অপর মামলায় রাগীব আলী, তারাপুর চা বাগানের সেবায়েত পংকজ কুমার গুপ্ত, রাগীব আলীর আত্মীয় মৌলভীবাজারের রাজনগরের বাসিন্দা দেওয়ান মোস্তাক মজিদ, রাগীব আলীর ছেলে আবদুল হাই, জামাতা আবদুল কাদির ও মেয়ে রুজিনা কাদিরকে আসামি করা হয়। এ মামলায় পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে স্থায়ী জামিন দিয়েছে আদালত। অপরদিকে দেবোত্তর সম্পত্তির কথিত সেবায়েত দেওয়ান মোস্তাক মজিদ ও রাগীব আলীর পুত্র আব্দুল হাইকে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করে আদালত। উল্লেখ্য, গত ১৯ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে হাইকোর্টের আপীল বিভাগের একটি বেঞ্চ তারাপুর চা বাগান রাগীব আলীর দখল করাকে প্রতারণামূলক আখ্যা দিয়ে পুরো বাগান সেবায়েত পঙ্কজ গুপ্তকে বুঝিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে বাগান দখল করে গড়ে ওঠা সব স্থাপনা ছয় মাসের মধ্যে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়। এ নির্দেশনার পর গত ১৫ মে চা বাগানের বিভিন্ন স্থাপনা ছাড়া ৩২৩ একর ভূমি সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে বুঝিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন। ২৬ বছর পর রাগীব আলীর দখলমুক্ত হয় তারাপুর চা বাগান। তবে এখনও বাগান দখল করে গড়ে ওঠা স্থাপনা উচ্ছেদ করা যায়নি।
×