ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আয়কর সপ্তাহ উদ্বোধন ও সেরা করদাতাদের ট্যাক্সকার্ড প্রদান অনুষ্ঠান

কর প্রদান এখন আর ভোগান্তির বিষয় নয় ॥ অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৫ নভেম্বর ২০১৬

কর প্রদান এখন আর ভোগান্তির বিষয় নয় ॥ অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কর প্রদান এখন আর ভোগান্তির বিষয় নয় বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। চলতি অর্থবছরে করদাতার সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়িয়ে ২০ লাখ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন করছেন অর্থমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে জাতীয় আয়কর সপ্তাহের উদ্বোধন ও সেরা করদাতাদের ট্যাক্স কার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এই আশার কথা জানান। অনুষ্ঠানে তিনি সেরা করদাতাদের হাতে সম্মাননাপত্রও তুলে দেন। মুহিত বলেন, এই সরকারের শেষ সময় ৫ লাখ কোটি টাকার বাজেট দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমান যুব সমাজ যেভাবে কর প্রদানে এগিয়ে আসছে তাতে এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা অসম্ভব কিছু নয়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার সময় ৯২ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করে। সেই বাজেটের আকার প্রায় পাঁচগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমান ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার বাজেট বাস্তবায়ন হচ্ছে। আর এ ক্ষেত্রে করদাতাদের অবদানই সবচেয়ে বেশি। তিনি বলেন, বর্তমানে ১১ লাখ মানুষ কর দিচ্ছেন। আশা করছি, চলতি অর্থবছর শেষে তা ১৮ লাখ ছাড়িয়ে ২০ লাখ হবে। তবে বছর শেষে করদাতার সংখ্যা ২৫ লাখের মতো যাতে হয় সেই লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত করদাতারা বলছেন, সবার আগে শতভাগ করবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হওয়া প্রয়োজন। এখনও মানুষ কর প্রদানে এনবিআরের হয়রানিকে ভয় পায়। ভয়ভীতি ও হয়রানির উর্ধে থেকে যাতে সাধারণ মানুষ কর প্রদান করতে পারে, এনবিআরকে সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। করদাতারা যাতে কোনভাবেই হয়রানির শিকার না হোন সেদিকে সবচেয়ে বেশি নজর দেয়া প্রয়োজন। বৃহস্পতিবার বিকেলে আয়কর সপ্তাহ উদ্বোধন এবং সেরা করদাতা সম্মাননা অনুষ্ঠান-২০১৬ শেরেবাংলা নগর ঢাকাস্থ নির্মাণাধীন জাতীয় রাজস্ব ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। এনবিআর চেয়ারম্যান মোঃ নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। দেশে প্রথমবারের মতো ২৪-৩০ নবেম্বর আয়কর সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে। এবার সেরা করদাতা হিসেবে ১৪১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ ও দীর্ঘমেয়াদী করদাতাকে ট্যাক্স কার্ড দেয়া হয়েছে। এবারে ব্যক্তি পর্যায়ে ৭৬ জন, কোম্পানি পর্যায়ে ৫৭টি এবং অন্যান্য পর্যায়ে আটজন করদাতাকে ট্যাক্স কার্ড দেয়া হয়। এছাড়া সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে মোট ৬৫৯ জনকে সম্মাননা জানিয়েছে এনবিআর। এর মধ্যে ৫১৮ জন জেলা ও সিটি কর্পোরেশন পর্যায়ের। এদিকে জাতীয় আয়কর সপ্তাহ এবং ট্যাক্স কার্ড প্রদান অনুষ্ঠান উপলক্ষে আগারগাঁওয়ের নতুন এই রাজস্ব ভবনে সকাল থেকে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছিল। দুপুর ১২টার পর থেকে আমন্ত্রিত অতিথিরা আসতে থাকেন। এই অনুষ্ঠান কাভার করতে গণমাধ্যম কর্মীদের ভিড়ও ছিল চোখে পড়ার মতো। দুপুরে মধ্যাহ্ন ভোজের পর মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। সাদা ভাতের সঙ্গে ইলিশ মাছ, মুরগির মাংস, সবজি, আইর মাছের কোপ্তা, দই, কোমলপানীয় এবং পানসুপারী দিয়ে অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়। করদাতারা বলছেন, তাদের জন্য এ ধরনের অনুষ্ঠান সম্মান ও গৌরবের। এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভবিষ্যতে করদাতারা কর প্রদানে আরও বেশি উৎসাহিত হবেন। করবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে এনবিআরকে আরও বেশি উদ্যোগী হতে হবে। তারা বলছেন, এখনও মানুষের মধ্যে এক ধরনের ভীতি কিন্তু আছে। একবার করজালে আটকা হলে আর বেরনোর বুঝি সুযোগ নেই। এছাড়া কর কর্মকর্তাদের হয়রানি থেকে সাধারণ মানুষ যাতে রক্ষা পায় সেদিকে নজর দিতে হবে। শুধু তাই নয়, রিটার্ন ফরম পূরণ অনলাইনে করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু জটিলতা এখনও কাটেনি। এসব জটিলতা কাটিয়ে রিটার্ন আদায় আরও সহজ করতে হবে। ব্যারিস্টার রফিক উল হক বলেন, ১৬ কোটি মানুষের দেশে মাত্র ১১ লাখ কর দেন এটা লজ্জার। আর বেশি মানুষকে করনেটে আবদ্ধ করা প্রয়োজন। এজন্য করবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। পুরস্কার প্রাপ্ত করদাতা মিসেস জেবা আলী বলেন, মানুষ কর দিতে চায়, এটা অনেক সম্মান ও গৌরবের। কর প্রদানের মাধ্যমে দেশ সেবা করা হচ্ছে। তবে বেশিসংখ্যক মানুষকে করজালে নিয়ে আসতে হলে করবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে সরকারকে আরও মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। অর্থমন্ত্রী বলেন, কর বিভাগ সম্পর্কে জনগণের ধারণা আমূল বদলে দিয়েছে আয়কর মেলা, তৈরি হয়েছে করদাতাবান্ধব পরিবেশ। আয়কর মেলার কারণে করদাতাদের মধ্যে সচেতনতা এবং দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকেই এখন স্বেচ্ছায় কর দিতে আসছেন। মেলার পরিবেশ আমরা সারাবছর ধরে রাখতে চাই। এছাড়া ব্যাপক সংস্কারমুখী এবং সৃজনশীল কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। জনসাধারণকে আয়কর বিষয়ে সচেতনতা করা ও দেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের সারিতে আসীন করার লক্ষ্যে এবার নতুন সংযোজন হচ্ছে আয়কর সপ্তাহ। তিনি বলেন, আগামী ৩০ নবেম্বরের মধ্যে রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা শেষ হচ্ছে। বর্তমানে ৩০ নবেম্বর জাতীয় আয়কর দিবস। এখন করদাতাকে প্রতিবছর ওই সময়ের মধ্যে কর দিতে হবে। তবে কেউ চাইলে সময় বৃদ্ধি করতে পারবেন। আজ আয়কর সপ্তাহ করা হচ্ছে যাতে মানুষ ৩০ নবেম্বরের মধ্যে আয়কর দেয়। দেশসেবা করতে মানুষ কর দেবে, এটাই আমার প্রত্যাশা। তবে করদাতাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও সময়সীমা বাড়ানো হতে পারে। আমির হোসেন আমু বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু দেশকে এগিয়ে নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গঠন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা গড়া। তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ করতে হলে সরকারের আয় এবং ব্যয় দুটোই বাড়াতে হবে। আর সরকারের আয় বৃদ্ধির জন্যই রাজস্ব আদায় বাড়ানো প্রয়োজন। বর্তমান সরকারের এই যে উন্নয়ন তা সম্ভব হয়েছে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির মাধ্যমে। এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান রহমান বলেন, করবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে এনবিআর কাজ করছে। মানুষ যাতে হয়রানি ও ভয়ভীতির উর্ধে থেকে কর প্রদান করতে পারেন এনবিআর থেকে তা নিশ্চিত করা হবে।
×