ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ’১৬ মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৫ নভেম্বর ২০১৬

বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ’১৬ মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ছেলের ২১ এবং মেয়ের ১৮ বছর বয়সের সীমারেখা রাখলেও বিশেষ প্রেক্ষাপটে আদালতের অনুমতি নিয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের সর্বোত্তম স্বার্থে বিয়ে দেয়ার বিধান রেখে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৬’ র চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পুরুষের ক্ষেত্রে ২১ এবং নারীর ক্ষেত্রে ১৮ বছরের নিচে বিয়ে দেয়া যাবে না। ২১ বছর পূর্ণ করেনি এমন কোন পুরুষ এবং ১৮ বছর পূর্ণ করেনি এমন কোন নারী অপ্রাপ্ত বয়সের মধ্যে পড়বে। বা উভয়পক্ষ অপ্রাপ্ত বয়স্ক হলে তা বাল্যবিয়ে হিসেবে গণ্য হবে। ক্ষেত্রবিশেষে বিয়ের বয়সের এই আইন প্রযোজ্য হবে না। আইনের ১৯ ধারায় বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব বলেন, এই আইনের অন্যান্য বিধানে যা কিছুই থাকুক না কেন, কোন বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্ত বয়স্ক কোন নারীর সর্বোত্তম স্বার্থে আদালত কর্তৃক নির্দেশনাক্রমে এবং মাতা-পিতার সম্মতিক্রমে বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে বিয়ে সম্পাদিত হলে তা এই আইনে অপরাধ বলে গণ্য হবে না। ‘এটা একটা ডিপারচার রাখা হয়েছে, স্পেশাল কেস।’ তিনি বলেন, ‘ ১৮ বছরের নিচে নারীর বিয়ে হলে অপরাধ হলেও এই স্পেশাল কেসের ক্ষেত্রে অপরাধ হবে না। কোন বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্ত বয়স্ক কোন নারীর সর্বোত্তম স্বার্থে, যেমন আনম্যারেড মাদার কিন্তু তার বাচ্চা আছে। এ রকম কেস যদি হয়, এসব ক্ষেত্রে তাকে প্রটেকশন দেয়ার জন্য এই বিধান করা হয়েছে।’ এই বিশেষ বিধানযুক্ত এবং তা আদালত কর্তৃক নির্ধারণ করে আইনের নতুন পরিবর্তন আনা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব বলেন, বিশেষ প্রেক্ষাপটের আর কোন সংজ্ঞা নেই, তবে এটা আদালত নির্ধারণ করবে। বিশেষ প্রেক্ষাপটে বয়সের কোন সীমা নেই। সচিব বলেন, ১৯৩৪ সালের চাইল্ড ম্যারেজ আইনের পুনর্বিন্যাস করে আইনটি বাংলায় করা হয়েছে। ২১ ও ১৮ বছরের নিচে বিয়ে হলে শাস্তির বিধান সন্নিবেশিত হয়েছে আইনে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব বলেন, বাল্যবিয়ের ওপর আদালত সহ-উদ্যোগে বা কোন ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে। বাল্যবিয়ের শাস্তি হিসেবে বলা হয়েছে, অনধিক ৬ মাস করাদ- বা ১০ হাজার টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন। বাল্যবিয়ে সম্পর্কে কেউ মিথ্যা অভিযোগ করলে তার বিরুদ্ধে অনধিক ৬ মাস কারাদ- বা ৩০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দ-ে দ-িত হবেন। বাল্যবিয়ের ছেলে- মেয়ের শাস্তি অনধিক ১৫ দিনের আটকাদেশ বা অনধিক ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। প্রাপ্ত বয়স্ক কোন নারী বা পুরুষ বাল্যবিয়ে করলে তার জন্য বড় শাস্তি রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব বলেন, তার জন্য অনধিক ২ বছর কারাদ- বা ১ লাখ টাকা অর্থদ-ের বিধান রয়েছে। বাল্যবিয়ের সঙ্গে পিতা-মাতাসহ সহযোগীরা সংযুক্ত থাকলে সর্বনিম্ন ৬ মাস থেকে অনধিক ২ বছর কারাদ- বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ে দ-িত হবে। বাল্যবিয়ে বন্ধের উদ্যোগী হওয়ার শর্তে বাল্যবিয়ে থেকে অব্যাহতি পাওয়া যাবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব। বাল্যবিয়ের নিবন্ধনের জন্য নিবন্ধকের শাস্তি ও লাইসেন্স বাতিল হবে। কাজী বা নিবন্ধকের অনধিক ২ বছর কারাদ- বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ে দ-িত হবে। বয়সের দলিল জন্ম নিবন্ধন সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, প্রাথমিক স্কুল সনদ, জেএসসি-জেডিসি সনদ বা পাসপোর্ট হিসেবে গণ্য হবে। বাল্যবিয়ের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ক্ষতিগ্রস্তপক্ষকে ক্ষতিপূরণ দেয়া যাবে। অর্থাৎ যে অর্থদ- আরোপিত হয় তা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে দেয়া যাবে। এই আইন লঙ্ঘন করলে অপরাধের বিচার অন্য বিচারের মতোই হবে। মোবাইল কোর্ট এই আইনে পরিচালিত হবে। ‘বিশেষ ক্ষেত্র’ সম্পর্কে ব্যাখ্যায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমাদের সমাজে এমন কিছু পরিস্থিতি তৈরি হয় যখন কম বয়সী ছেলেমেয়েকে বিয়ে দেয়া প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে বিয়ের অনুমতি পেতে যে কোন এক পক্ষকে আদালতে আবেদন করতে হবে। আদালতের অনুমোদন সাপেক্ষে অভিভাবকদের সম্মতিতে ওই বিয়ে হবে। সেক্ষেত্রে এটি আইন অনুযায়ী সাজার আওতায় আসবে না। রবিবার মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেছিলেন, মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর রেখেই বিশেষ পরিস্থিতির ক্ষেত্রে তা ১৬ বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ওই আইনের একটি উপধারায় বিশেষ পরিস্থিতিতে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৬ বছর করার প্রস্তাব করা হয়। বিশেষ পরিস্থিতির ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, মেয়ে প্রেমঘটিত কারণে ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গেলে বা মেয়ে ছেলের বাড়িতে চলে যাওয়ার পর নিজের বাড়িতে ফিরে আসতে অস্বীকৃতি জানালে বা বিয়ের আগে গর্ভবতী হলে- এ রকম পরিস্থিতিতে ১৬ বছর করা যায় কিনা, তা সরকার চিন্তা-ভাবনা করছে। রবিবার ঢাকায় ‘বাল্যবিবাহ; পরিস্থিতি পর্যালোচনা’ শিরোনামে একটি মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন। অনুমোদন পায়নি সরকারী কর্মচারী আইন ॥ এদিকে অভিযোগপত্র হওয়ার আগে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অনুমতি নেয়ার বিধান রেখে আইন করার প্রস্তাব চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় তোলা হলেও তাতে সাড়া মেলেনি। মন্ত্রিসভা আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ‘সরকারী কর্মচারী আইন-২০১৬’র খসড়া ফেরত পাঠিয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সরকারী কর্মচারী আইনে মন্ত্রিসভা চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়নি। সিদ্ধান্ত হয়েছে, আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পুনরায় পেশ করা হবে। সরকারী দায়িত্ব পালনসংক্রান্ত ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র হওয়ার আগে গ্রেফতারে সরকারের অনুমতি নেয়ার বিধান রেখে গত বছরের ১৩ জুলাই এই আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব তখন বলেছিলেন, আইনে গ্রেফতার বিষয়ে বলা আছে চার্জশীট হলে গ্রেফতারে কোন সমস্যা নেই, আদালত কর্তৃক চার্জশীট গৃহীত হওয়ার আগে যদি কাউকে গ্রেফতারের প্রয়োজন হয়, তাহলে সরকারের অনুমোদন লাগবে। গ্রেফতারের আগে অনুমোদনের প্রয়োজন হলেও সরকারী কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগের তদন্ত বা মামলা করতে দুনীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বাধা থাকবে না। বর্তমানে সরকারী কর্মচারীরা রাষ্ট্রপতির প্রণীত বিধিমালা দিয়ে পরিচালিত হন। এর বাইরে সরকারী কর্মচারীদের চাকরি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিধিমালাও রয়েছে।
×