ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কবিতা

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ২৫ নভেম্বর ২০১৬

কবিতা

অনূঢ়া কথন [কবিতা প্রেমিক, কালীপদ হালদার, প্রীতিভাজনেষু] মাকিদ হায়দার বলিবার কিছু নাই, শুনিবার আছে। অযুত, নিযুত কথা শুনিয়াছি আগে, বলিয়াছি, শেষ কথাটুকু যদি বলিতেন তখনো বলে নাই, এখনো বলিল না। দেখিলাম, হাসিতে হাসিতে কখনো কুটি, কুটি হইয়া ধূলিতে, বালির কানে কানে তিনি কথা বললেন বারদুই। তবু আমাকে বলে নাই তাহার শেষ অভিলাষ। নয়নের সবটুকু জল ধূলিতে, বালিতে রাখিয়া দিয়া আমাকে বলিলেন, কামনা, বাসনা, যাহা কিছু ছিল, তার আর কিছু নাই বাকী। যাহা তোমাকে বলার চেয়ে না, বলাই ভালো। ঝাউতলা রোডে আসিতেই শুনিলাম অনূঢ়া ডাকিতেছে আমাকে, তাহার মাথার কালো চুলের বিনুনী আমাকেই বাঁধিয়া দিতে হইবে। ** সেই ছেলেটা শেখ আতাউর রহমান সেই দামাল ছেলেটা এখন কোথায়? ঘাসফড়িংয়ের সঙ্গে যার ছিলো বন্ধুতা? উড়িয়ে দিতো ঘুড়ি সুনীল আকাশে প্রজাপতি আর পাখিদের সঙ্গে ছিলো যার খেলাধুলা- সারাবেলা? এখন সে কোথায়? কোন আঁধার ঘরে হারিয়েছে? হুইলচেয়ারে এখন গুম মেরে বসে থাকে সে দাড়ি আর উস্কোখুস্কো চুলে তাকে চেনা তো যায় না আর হায়! কি তার অপরাধ? বন্দুক কাঁধে তুলে নিয়েছিলো বলে? স্বাধীনতার জন্য ভিজেছিলো চোখ লোনাজলে? এখন কোথায় সেই অলৌকিক জোনাকিরা? -তাকে বিমুগ্ধ করতো? খলখল কিশোরীরা কোথায়? -পালিয়েছে তারা ভীরু প্রেমিকার মতো? এখন আকন্দধুন্দুলের ঝোপে হাহাকার করে অদৃশ্য গুঁইসাপ থেকে থেকে ডাকে থেকে থেকে ডাকে, তক্-খ ! তক্-খ !! আঁধার আঁধার ! আঁধার চারিদিকে! জোনাকিরা নেই প্রজাপতি নেই পাখিরাও নেই নেই কিশোরীরা তাকে ছেড়ে গেছে ওরা- পাখি নারী আর প্রজাপতিরা। এখন সে নিঃসঙ্গ তীরন্দাজ এক উদোম উঠোনে হাওয়া হাহাকার করে- কানে কানে পাওয়া-না পাওয়ার কথা বলে! আর তখন বুকের মধ্যে তার অবরুদ্ধ স্বাধীনতা ধিকিধিকি জ্বলে! দ্রোহে-বিদ্রোহে- পলে পলে!! ** হাওয়ার সঙ্গীত সোহরাব পাশা ক্রমশ রং ওঠে জীবনের ধূসর হলুদ রক্তপাতে শীত লাগে হৃদয় গহীনে; অকৃপণ খুলে দেয় নিষেধের ঘর সৌন্দর্যের সকল দুয়ার ভালোবাসে সে উজ্জ্বল আগুনের খেলা ওপরে ওঠার সিঁড়ি বেপরোয়া হাওয়ার সঙ্গীত কখনও সে ভুলে যায় ছায়াবৃক্ষ ‘মানুষ’ বানান কী যে অসঙ্গতি-অঙ্গীকার অনিশ্চিত পথের অস্থির যাত্রা তার স্বরচিত গন্তব্যের আকাশ দেয়াল, মস্ত বড় পাথরপাহাড় জলের ভেতরে অগ্নিময় কাঁটাতার এই সব উপসর্গে অভ্যস্ত জীবন; পাখিদের ডানার প্রস্তুতি দেখে নেয় সময় তো উড়ে যায় ভাঁজ পড়ে দেহে তবু সে তেপান্তরের পাঠ নেয়, বড় প্রিয় এই ঘাস-ফুলের নদীর জীবন, প্রণয়ের মৌন ভাষা ফোটে নিরন্তর। -সোহরাব পাশা সহকারী অধ্যাপক ঈশ্বরগঞ্জ কলেজ ময়মনসিংহ-২২৮০ ০১৭১৮৫১০২৮৮ ** ফায়ারিং সৈয়দ রফিকুল আলম গ্রিক ট্র্যাজেডি ইলেক্ট্রা গল্পের মতো মানুষের জীবন অঙ্কুরে উদগম হয়- স্নেহ ভালবাসা মায়া- একাগ্র সান্নিধ্য বোধে, সঙ্গে থাকে আনুষঙ্গিক জীবনযাপনে অশালীন দুর্বিপাক, ভাটিটানে আত্মস্বার্থপরতা ঘটন অঘটনে হাত ধরে মিলে মিশে পথ চলে। চিরন্তন না হলেও কালো বিড়ালের সূচাগ্র দৃষ্টিতে নিরীহ খরগোসের প্রতি নেশাগ্রস্তর মতো মানুষের রক্তপানে দুর্দৈব আকর্ষণ/অমানুষের হাতে মানুষ যায়। কালিক প্রেক্ষাপটে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি, যা যুগ আধিক্যে নিউরনের খোপে জমা থাকা উচিত ছিল। অচ্ছুৎ ঘটনা ঘটলে নিগ্রহে তোড়পাড় অমারাত গ্রাস করে, আর- ভীরুতায় থম থমে ভাব: ক্ষণ ক্ষণে যেই কি সেই। ভালোবাসতে হবে দেশকে মাটিকে বিশ্বাস ও সৎ ও সত্যকে। দর্শন আদর্শকে বুকে ধারণ করে কুহক অজাচারীতাকে দ্ব্যর্থহীনে সামাল দিতে হবে। রক্তস্নাত হয় হৃদয়, এ পলি মাটির দেশে পাথরের চাঁই বুকে ধারণ করে রক্তের হোলিতে স্নান সেরে নিজেরা ও আত্মবলিদানে ভ-ামির ছাড়পত্রে বেহেস্ত কামনা করে/কিন্তু কেন? পবিত্র ধর্মগ্রন্থে অনুগ্র বাণী আছে কুফরী প্ররোচনাকে ঘৃণা করো মানুষ হও, ফিরে এসো দেশ মাতৃকার টানে। আত্মশ্লাঘায় ভোগে ভোগে তোমাদের পরিবারের মা-বাবা- ভাই-বোনেরা ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। ** আয় ঝেঁপে কবিতাবৃষ্টি মারুফ রায়হান সৃষ্টিখরায় মৃতপ্রায় উত্তরা নিভে নিভে আসে সুখতারা শুকতারা গান থেমে গেছে শয়তান আগুয়ান শুকোয় শিমুল, ফ্রেমে বাঁধা মুখ, উজাড় বাগান তুরাগতীরের হাহাকার কানে আসে এখনও সান্দ্র প্রেম আসে তালশাঁসে! নগরের কাঁধে চেপে বসা ভার আরেক নগর ছাদ ও দেয়াল মিলবে অঢেল, ঘর পাবো ঘর? পাথর-গদ্যে ভারি হয়ে আছে নাগরিক মন খুঁজে পাবে কোথা প্রাণ-প্রান্তর ধ্বনি-উন্মন সুরে সুরভিত বনের বদলে হাজার ভবন বাতাস রুদ্ধ ফিরে গেছে রোদ সবুজ শোভন পাতালের তলে তাল ঠোকে আজ বেহেড বেতাল মানবীর চোখে আর মায়া নেই মাশকারা হাসে এখানে এখন সন্ধ্যের আগে রাত নেমে আসে আলোঝলমল নেশানেশা জাগা অন্ধ অন্ধকার শান্তিখরায় শ্রান্তি জরায় মুমূর্ষু উত্তরা ** সত্যকাম তোমারই সন্তান দুখু বাঙাল দীর্ঘদিন রৌদ্রের ধেয়ানে থেকে এখন আমি রৌদ্রস্নাত তপোবন ছেড়ে আজ পৌঁছে গেছি বৃন্দাবন পূর্ণচন্দ্র ঋষি সারা অঙ্গে ভাষালিপি হয়তো বা আগুনের লকলকে জিভ আলোয় মথিত বীর্যে তোমার দেহের খাদে ঢেলে দিলাম জীবনের সিদ্ধিলব্ধ সবটুকু কাঁচাসোনা রোদ যদি আসে নতুন মানুষ এই পৃথিবীতে! সূর্যসন্তানের বিস্তৃতি হোক দিকে দিকে স্বগোত্রের রক্ত ছাড়া কাটে না যে মানুষের তৃষার হুতাশ জাবালার আনন্দ চিৎকারে আজ ধন্য হোক পিতৃপরিচয়- দ্যাখো দ্যাখো দধীচি এসেছে ঐ, সত্যকাম তোমারই সন্তান নতুন মানুষ হোক পৃথিবীতে আঁধারের হোক অবসান।
×