ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নূরুল করিম নাসিম

উৎসব, উৎসব...

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২৫ নভেম্বর ২০১৬

উৎসব, উৎসব...

শুরু হয়েছিল ২০১১ সালে, তখন এই সাহিত্য-উৎসবের নাম ছিল ‘হে ভেস্টিভেল,’ লন্ডনের ‘হে মার্কেটের’ নামে সম্ভবত। অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে এখন ছয় বছর বয়স এই উৎসবের। আয়োজকরা মনে করেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় এই সাহিত্য আয়োজন। তিন দ্যনের এই সাহিত্য-উৎসব শুধুমাত্র সাহিত্যের গ-িতে আটকে রাখেননি তারা। আর্ট, ইতিহাস, গান, সমাজ, ঐতিহ্য, বিজ্ঞান, গবেষণা, সাংবাদ্যকতার নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় এই ঢাকা লিট ফেস্টিভেলে। দেশ-বিদেশ থেকে এবারের অনুষ্ঠানে প্রায় দু’শ’ জন অতিথি এসেছিলেন। ভাতীয় বংশোদ্ভূত নোবেল বিজয়ী লেখক ভিএস নাইপল তার স্ত্রী নাদ্যরাকে নিয়ে এই অনুষ্ঠানে এসেছেন। তিনি এই অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন। পুলিথজার এবং ম্যান বুকার বিজয়ী লেখকেরাও এই মিলনমেলায় সোৎসাহে অংশগ্রহণ করেন। মনে পড়ে সম্ভবত ২০১২ সালে লন্ডন প্রবাসী বামঘেষা লেখক তারিক আলি এই বাংলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে এক বক্তৃতায় বলেছিলেন : ‘ও ধস অমধরহংঃ ঈড়ৎঢ়ড়ৎধঃরুধরড়হ ড়ভ খরঃবৎধঃঁৎব. ডযু, ঐবু ঋবংঃরাবষ, ওঃ ঝযড়ঁষফ ইব উযধশধ খরঃবৎধৎু ঋবংঃরাবষ.’ তিনি সাহিত্যের বাণিজ্যিকীকরণের ঘোর বিরোধি ছিলেন। তিনিই প্রথম উদাত্ত আহ্বান জানান ‘হে ফেস্টিভেল’ নাম পরিবর্তন করে ঢাকা লিটারেচারি ফেস্টিভেল রাখা হোক। তার সেদিনের সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবে রূপান্তরিত হয়েছে। আগত বেশ ক’জন অতিথির সঙ্গে চা খেতে খেতে আলাপ হচ্ছিল ছায়াঘেরা বটতলায় অনেকেই বাইরের ভাল ভাল বই কেনার সুযোগ পেয়ে বেশ আনন্দিত। বেশ কিছু চমৎকার সাহিত্য শিল্প-সংস্কৃতি বিষয়ে আলোচনার আয়োজন করা হয়েছে এবার কিছু নতুন মুখ দেখা গেছে। কবিতা পাঠের আলোচনা প্রায় প্রতিবারের মতো এবারেও সুসংগঠিত ও সুনির্বাচিত ছিল না বলে কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন। আসলে বাংলাদেশে এত অসংখ্য কবি, কাকে রেখে কাকে জায়গা দেয়া যায়? তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ষাট দশক থেকে শুরু করে শূন্য দশক এবং তার বাইরেও অন্তত নির্বাচিত ৫-৬ জন কবিকে আমন্ত্রণ করা যেত। ছোটগল্প এবং উপন্যাসের ক্ষেত্রেও একটা সুসংবদ্ধ নীতিমালা থাকলে দর্শক-শ্রোতা এই উৎসব আরও উপভোগ করতে পারতেন। তবে এটা ঠিক গত কয়েক বছরের চেয়ে এবারের আয়োজন অনেক বেশি ব্যাপক, বিস্তৃত ও বৈচিত্র্যময়। সকালটা কিছুটা ঝিমিয়ে পড়লেও, লাঞ্চের পরে উৎসব জমে উঠেছিল। সন্ধ্যায় বেশ সরগরম মনে হতো এক দিকে নাচ-গান, অন্যদ্যকে ভারি ভারি গুরুগম্ভীর সব বিষয়ের ওপর আলোচনা। দর্শক-শ্রোতা যা যা খুশি, যার যেখানে খুশি, অংশগ্রহণ করতে পারছেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে এ দেশে আন্তর্জাতিক সাহিত্য অনুষ্ঠান, কিংবা নিছক কবিতার অনুষ্ঠান হয়েছে, তবে ঢাকা লিট ফেস্টিভেলের মতো এত ব্যাপক আকারে হয়নি। এ দিক দিয়ে আয়োজকরা একটি বড় কাজ করতে পেরেছেন, বলা চলে। আমরা আশা করব, আগামীতে এবারের ভুল-ত্রুটিগুলো শুধরে নিয়ে একটি পরিপূর্ণ ও সর্বজনগ্রাহ্য সাহিত্য-উৎসব আমাদের উপহার দেবে আয়োজকরা।
×