ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জীবনসত্যের ব্যঞ্জনা

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২৫ নভেম্বর ২০১৬

জীবনসত্যের ব্যঞ্জনা

মাসুদ মুস্তাফিজ (জন্ম ২২ নবেম্বর ১৯৬৯, দিনাজপুর) নব্বই দশকের এক স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা আট, কবিতা ছয় আর প্রবন্ধ দুই। তিনি সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সাহিত্য পদক। সম্পাদনা করেছেন সাহিত্যের কাগজ- নাক্ষত্রিক আর অগ্নিসেতু। যার নাম উচ্চারণেই চোখের কার্নিশে ভেসে ওঠে তাঁর কবিতার নিজস্ববোধ আর বিশিষ্টতা যা তাঁকে নতুনভাবে পরিচিত করে তোলে। কেননা তাঁর কবিতায় রয়েছে পরিমিতবোধ, বিষয় আর শৈলীর নিবিড় কাজ যা পাঠককে নতুন চেতনায় ভাবিয়ে তোলে। পাঠক কবির নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের এই ব্যতিক্রমী ভাবনার নির্যাস আস্বাদনে সহায়ক হবে আর অন্বেষণের ভেতর বের করবেন কবিতায় পরিমিতবোধ, ছন্দ প্রয়োগের কুশলতা রকমারি অলঙ্কারিত্ব। মাসুদ মুস্তাফিজের কবিতায় রয়েছে ভিন্নমাত্রার ছন্দের কারুকাজ যা বিশ্লেষণের বিশিষ্টতা দাবি রাখে। তিনি কবিতায় ছন্দের বিচিত্রতায় আমাদের পরিচিত করেন নতুন শৈলীতে এবং তাঁর কবিতার চিত্রকল্প পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করে। তাঁর কবিতা নিরীক্ষাপ্রবণ- কবিতার ভেতর অসম্ভব কুশলতায় তিনি শব্দের চাষ করেন সুনিপুণ হাতে। আমরা তাঁকে কবিতার অঙ্গনে একজন শব্দসৈনিক হিসেবেই দেখি। যে কারণে তাঁর কবিতা এক আলাদা পথের সন্ধান করে এবং সময়ের পথিক বলে পরিচিত করে তোলে। কবি পথ হেঁটেছেন বহুদূর আর সে পথে পরির্দশন করেছেন বর্ণিল অভিজ্ঞতার বিচিত্র অন্তরলোক- তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের পরিচয়ে তা প্রকাশ পায়। দেখা যায়, তিনি ব্রিজ পেরোচ্ছি না স্বপ্ন পেরোচ্ছি কাব্যগ্রন্থে একটা স্বপ্নকে অতিক্রমণের চেষ্টা করেছেন। আবার কিছু সমুদ্র কিছু বিষণœতা কাব্যগ্রন্থে অন্য টার্ম নিয়েছেন যা আমাদের ভাবনার জগতে আরেক ধাপ এগিয়ে যায়। অন্যদিকে কবির ২০১৫-তে প্রকাশিত স্বভাবদুর্বৃত্ত বাতাসে কুয়াশার কৃষ্ণতীর্থ কাব্যগ্রন্থে আমরা সম্পূর্ণ আলাদা মাসুদ মুস্তাফিজকে দেখতে পাই। কাব্যের ব্যঞ্জনায় আর উপস্থাপনায় পাঠককে চমকে দেয়, উঠে আসে দেশ, রাজনীতি, প্রেমের অনবদ্য শৈল্পিক রূপায়ন। এই মাত্রা পাঠকের মনন-চেতনায় নাড়া দেয়। কবিতার ভাষা-ভাব-বিষয় এমনকি প্রকরণে যুক্ত হয় শিল্পের আরেক নতুন মাত্রা। যেন প্রেমের আরাধ্য তাঁর শব্দকলি যার ওপর ভর করে কাব্যের ফসল ফলান। এ কাব্যে গদ্য ফর্মের নিজস্ব স্টাইল আর মুক্তভঙ্গির নানা মাত্রা প্রকাশিত হয়েছে। কবি নিরন্তর এক পথিক, হেঁটে চলেন পৃথিবীর পথে, তাঁর কবিতায় রয়েছে এক ধরনের আত্মযাতনাবোধ যা তার কবিতা লেখার অনুভূতিকে আরও সক্রিয় করে তোলে। আত্মোপলব্ধি কবির কবিতাকে করেছে গতিময় এবং এ দেশের পাঠকের হৃদয়ে জাগিয়েছে আত্মবোধ যা কি-না একজন কবির জন্য বড় প্রাপ্তি। যদি এ আত্মবোধ নাই থেকে থাকে তাহলে কবিতা কি সত্যিই নিবিড় অনুভূতিপ্রবণ, কবিতায় রূপান্তরিত হতে পারে, হয়তোবা পারে, হয়তোবা পারে না। না হয় সে তর্কে নাই বা গেলাম আমরা। কবিতা মাত্রই ব্যক্তিকচিন্তা ফলে আমরা বলতে পারি এ কবিতা যুথবদ্ধতার মধ্য থেকে ক্রমেই ব্যক্তিগত প্রত্যাশার জনন থেকেই কবিতা হয়ে উঠেছে যা আমাদের অনুভূতিনির্ভর কবিতা ব্যক্তি সম্ভাবনাময় কবিতায় জন্ম সম্ভাবনাকে করে তোলে প্রত্যাশিত। মুস্তাফিজের কাব্যিকবোধ এক স্বতন্ত্র বিন্যাসের দৃষ্টিতে উপস্থাপিত এক নতুন চিন্তা আর রূপকল্পের কাব্যগুণে প্রকৃষ্ঠ। নিঃসন্দেহে দুর্লভ ক্ষমতার অনুশীলন হিসেবেই কাব্যগুণকে ঋদ্ধ করে তোলে। কল্পচিত্রে ব্যবহারে মাসুম মুস্তাফিজের রয়েছে এক যুক্তিসঙ্গত আঙ্গিকে উপস্থাপনা যা কাব্য তার্কিকদের বিচিত্র অনুসন্ধানে আগ্রহী করে তোলে। এ প্রসঙ্গে আমরা তাঁর কবিতার দিকে তাকাই- মানুষ তো আসলে ঘরে আসে না-/কিংবা যায়ও না শুধুই ঘর বানায়/আর রাত যাপনের দিন পার করে.../দিনের বনসাই হয়ে বেঁচে থাকে অথচ চাঁদরাই প্রথম প্রজ্ঞাল পাঠালো কালোছায়ার নীল বর্ণজলে (বনসাই হয়ে যাাই, স্বভাবদুর্বৃত্ত বাতাসে কুয়াশার কৃষ্ণতীর্থ)। কবির এসব বিচিত্র কবিতা পাঠকের সামনে এক আলাদা রসায়ন নিয়ে হাজির হয়। জাগিয়ে দেয় নতুন স্বপ্নদৃশ্য যা কবিকে কুরে কুরে খাওয়া নির্মম নির্যাস থেকে উৎসারিত। এই সুর নিরীহ সময় আর মাতাল পারিপার্শ্বিক আমাদের সমাজব্যবস্থা থেকেই জন্ম নেয় চেতনহীন সেই সব রক্তমাংসহীন পাথর মানুষ। তাঁর প্রাপ্তি বিশ্বাসে বলীয়ান। কবি অন্ধগলিতে নিজের অসহায়ত্বের জীবনকে কল্পনাচিত্তে বলীয়ান করে তোলে। এক কাক্সিক্ষত বাস্তবতার অসহায় নৃত্যে কাক্সিক্ষত উল্লাসের কলাকৌশল। দৃষ্টান্ত- অচেনা পথে অচেনা শরীরে হামাগুড়ি খাচ্ছি প্রতিদিন/ মৃতদের সাথে কথা বলতে বলতে আর আড্ডা দিতে দিতে জীবনের নান্দীপাঠ ভুলে গ্যাছি/ভুলে গ্যাছি চুক্তি রাজনীতির অপার প্রঘলতা মোগজের রঙিন অসুখ বিক্রি করছি চড়া দামে/এদিকে শরীর থেকে অন্ধকার খসে পড়লে প্রতিশোধের আগুনে শিখে যাচ্ছি মানুষ হত্যার সহজ কৌশল (বনসাই হয়ে যাই)। কবির আর্তনাদের কোন পরিসমাপ্তি হয় না। তিনি এক সিঃসঙ্গ চূড়ায় দাঁড়িয়ে জীবনের শূন্য হতাশাপ্রবণ চোখে পর্যবেক্ষণ করেছেন পৃথিবীর শুচিবায়ু আর বর্জনীয় প্রাসাদের রকমারি রুপালি চাঁদের ধ্রুপদী হেলেনার রূপ যা কবির নৈরাশ্যবোধের মধ্যেও সঞ্চালন করে প্রেমের দেবী আফ্রোদিতির অন্তরখচিত ব্যক্তির নিজস্ব আর আর্তনাদের প্রণায়বেশ। দৃষ্টান্তÑ ...গলে গলে পড়ে আমার শব্দের কাঠিন্য নয় প্রেমে/ ওগো নারী তুমি মানে এক পৃথিবী তুমি মানে এক/ ঈশ্বর- সৃষ্টির প্রথম পাঠ/ ...রাতের নির্বাহ আলো নিভে গেলে আমি আদি পুরুষের জলে মুখ ধুয়ে লুকোই মনের শরীরে বিলিয়ে বেআব্রু জীবনের গোপন বিহার (মহাসূর্যবেলার শব্দগুচ্ছ, জলবাতায়নে রঙঘুড়ি)। কবির হৃদয়নগরে ট্রেনের কম্পমান ভালোবাসার ক্রন্দনশীল তৃষ্ণা আর শঙ্কায় প্রকৃষ্ট নির্দশন যেন নিদারুণ করুণার আবেগকে উৎসারিত করে দেয়, দেহজ কামনার বহুমাত্রিক হাহাকার মুদ্রিত শরীর। সংসারলগ্ন ব্যক্তিমানুষও কখনও কখনও হয়ে যায় আত্মবিরহের আত্মপীড়াগ্রস্ত। এ যেন রাধার বিরহ-বিপর্যয় আর বিচ্ছিন্নতাই সবকালীন, সর্বগ্রাসী হয়ে চিরসঙ্গিনীকে ভুলে থাকার নিত্যনতুন ছলনা করা। তাঁর কবিতায় লক্ষ করিÑ আজকাল নিরামিশ চুমুর ভাঁজে কিছুই প্রত্যাশা করি না/শুধু বেঁচে থাকি বিপন্ন বিষণœ সিলেবাসনির্ভর চুমুর সংসারে (অহংকারের চুমুতে তুলে রাখি কিছু বিষণœবোধ, কিছু সমুদ্র কিছু বিষণœতা)। নৈরাশ্যবোধ, হতাশা, ক্লিষ্টতাময় জীবনের দৃশ্যমান অভিজ্ঞতা এ কবির কবিতায় সঙ্কটের সত্যমৌলিকতাকে বিকাশ ঘটায়। অস্তিত্ব সংসারবেদনা অপ্রাপ্তিবোধ মানুষের জীবন স্পন্দনকে নির্বিকারচিত্তে বিমূর্তের জাগরণ ঘটায়। রাষ্ট্রযন্ত্রের স্থূলতা, ঐতিহ্যের পর স্পর্শকে অস্বীকার করে নিজের জীবনযাপনের পথকে বৃত্তাবদ্ধ করে মনোজগতে স্থির নয় তবে মিশ্র স্থিরতায় রক্তীয় বীজের জাগরণ আমাদের হতাশা আর নৈরাশ্যপ্রবণ বা ক্রমশ আবেগপ্রবণহীন ভিন্ন মানুষ রূপে রূপান্তরিত করে, যা কিনা অস্থিত্ব সঙ্কটের এক দুঃখের তীব্র যন্ত্রণাবোধকে প্রাণিত করে তোলে। কবি সেই দুঃখ আর নৈরাশ্যবোধের চেতনা থেকেই ভুলে যান বাড়ি ফেরার প্রয়োজন। সুতীব্র সৃজন মমতাবলে কবি বলে ওঠেন- ১. জীবন সংস্করণের আলোয় জীবনের প্রেক্ষাপট বদলে যায় আমাদের মানবিক ঈশ্বর ভয় পান আনন্দ বৈভবে/ আসলে কতোটা দুর্ভাগ্য হলে নিরন্তর মানুষের ঘর ছাড়ে হয়ে যায়- গৃহহীন মানুষেরা পথে পথে খোঁজে কালান্তরে- বটবৃক্ষের ছায়া... (আজ খুব ঘৃণার প্রয়োজন, কিছু সমুদ্র কিছু বিষণœতা) ২. অমানবিক ঘৃণায় মৃত্যু জীবনের বিপরীত জলাধারে সেচে নতুন চৈতন্য ফেরে দ্রোহে আর শোকে (গোধূলির অন্তর্লোক আর বৃক্ষের বয়স, জলবাতায়নে রঙঘুড়ি)। কবির দেখা বাস্তবতা মিথ্যা নয় বা এ বাস্তবতার মধ্যে মেকি আভিজাত্যের বা পা-িত্যের কোন দৌরাত্ম্যতা নেই। যেখানে তীব্র হয়ে প্রতিফলিত হয় সমাজ বাস্তবতার তীর্যক রূপ, যা সমকালীন বাস্তবতায় ব্যথিত রূপায়ন। কবির উদ্দেশ্য শাশ্বত বাস্তব উপস্থাপিত চিত্র সবার সম্মুখে উপস্থাপিত করে পাঠক চিত্রকে জাগ্রত করা। কবি সেই চিত্রকেই ধরতে চেয়েছেন যা আমাদের ইন্দ্রিয় চেতনাকে প্রকাশিত করে-কন্যাকুমারীর কল্যাণী নৃশংস ধর্ষিতা হয়ে যায় যেখানে অন্তঃসত্ত্বায় দুর্ভয় ঝুঁকি অধিকাংশই হয়ত অবৈধ পূর্বের লজ্জায় লীন হয়ে থাকে... (পর্যটক প্রজাপতি, ব্রিজ পেরোচ্ছি না স্বপ্ন পেরোচ্ছি)। মুক্তিযুদ্ধের যাতনাবোধ কবির প্রাণচঞ্চল মনকে বারবার হতাশার পতিত জমিনের পথের রাস্তা মাপায়, চিন্তার শানিত অস্ত্র তখন দ্বান্দ্বিকতার বিশ্লেষণ কবির প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির দ্বন্দ্বকে সংমিশ্রণ ঘটায় স্ফুলিঙ্গের। তখন কবি বিদ্রƒপের স্বরে উচ্চারণ করেন ‘আজ শোকগুচ্ছ মেঘের দিন’। কবি ক্ষয়িষ্ণু সমাজের চোখে নিক্ষেপ করতে চেয়েছেন প্রত্মপ্রতীক, যা আমাদের সমকাল চেতনাকে উৎকর্ষিতসহ স্বাধীনতার সন্ধান করে দেয়, অসংখ্য পথ আর স্বাতন্ত্র্যম-িত করে স্ব স্ব কণ্ঠে উচ্চারণ করিয়ে তোলে- মায়ের নোনা দুধের স্বাদের মতন বেঁচে থাকি/প্রতিদিনের নোনা জলে শব্দবীজ পুঁতে তৃষ্ণায় জোনাকি হয়ে (মনের বন আর আগুনের কাঁপন, জলবাতায়নে রঙঘুড়ি)। কবি যাতনাবোধের জীবন অতিবাহিত করলেও স্বপ্নের পথে হেঁটেছেন, করেছেন সত্যের অন্বেষণ যা কবিকে কখনও মুহ্যমান করে তোলেনি। হয়তবা কখনও হয়েছেন স্বেচ্ছাচারী বা নৈরাশ্যতার তীব্র সঙ্কট কবিতে অস্তিত্বহীন করে তুলেছে তবুও তিনি স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে চেয়েছেন স্বপ্নের বাতিঘরে। স্বরগ্রাসে পৌঁছে দিতে চেয়েছেন উচ্চাভিলাষী স্বপ্নের লুপ্তপ্রায় সোনালীর স্বপ্নবাজ, স্বপ্নপ্রেম। মাসুদ মুস্তাফিজ নিজেকে নিরন্তর খুঁজে চলেছেন বয়সী আলোর পিঠে মাছিভ্রমণে আত্মনিমগ্ন কাব্যভাবনা খুঁজে ফেরেন বারবার চিন্তা সভ্যতা আন্তর্জাতিক সম্পর্কায়ন, যা ক্রমাগত স্বপ্ন হারিয়ে ফেরেন নিরন্ন মানবতার সঙ্কটময় অতীত আলোকায়নের পথ, হোঁচট খান চলমান সমাজ বাস্তবতার চতুর রাষ্ট্রযন্ত্রের পেতে রাখা কলাকৌশলময় বিদ্যার কাছে, তবুও বাঁচতে শেখা। বুনে যাওয়া স্বপ্ন বুননের স্বপ্ন, জোনাকির আলো হয়ে কিংবা অন্ধকার রাত্রে বিষাদের ছায়ার মধ্যেও সামান্য আলোর ঝলকানি কতটা যে হৃদয়ে শান্তি সঞ্চালন করে তা কবিই অনুভব করেছেন হৃদয়াঙ্গম করে। নতুন জন্মের প্রতীক্ষা কবির ঘুমকে ভাঙ্গিয়ে আবার নতুন করে জাগিয়ে তোলে, বাঁচতে শেখায়- বুদ্ধিমানেরা আয়নায় নিজেকে চিনে চিনে বহুমাত্রিক উপায় খোঁজে নিজের খুঁজবেই চিরকাল এভাবে শহরের/ লুকিয়ে থাকা অনুরন্ত কেউ হয়তো তুলে নেবে স্বপ্নের মুঠোজল... (প্রস্থান কিংবা বিচ্ছিন্নতার চিরকাল, কিছু সমুদ্র কিছু বিষণœতা)। মাসুদ মুস্তাফিজের কবিতায় দীপ্ত হয় মিথ- পুরাণের ব্যবহার যা অন্য কবিদের চেয়ে ভিন্নমাত্রায় এবং নবকৌশলে মাটির প্রজ্ঞায় বিশ্বাসী আমি... মাটিতে মরার গন্ধে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে বুদ্ধের যিশুবিষু সারা ভবিষ্যতের আশ্রয়বান (বিশ্বমাটির অনাদি শব্দ)। বেদনাকে জাগ্রত করলেও গভীর প্রত্যাশায় আবার পরিপুষ্ট হয়ে ওঠে মন। আবার সমকালীন রাজনীতি কবির মনোজগতে চিন্তার উন্মেষ ঘটায় যা নারী আর রাজনীতিকে এক এবং অভিন্নবোধনে পুনঃজন্ম ঘটায়, বৈরী পরিবেশে স্বার্থপরতার নীরব নির্জনতা সহ্য করাই যেন নিরুপায় মানুষের কাজ- কবিতার দৃষ্টান্ত- কী অদ্ভুত ফুটে যাচ্ছে- দিনরাত্রির এই নিসর্গের কবরের প্রেম লাটিমমগ্নতায় এই সব পূর্ণতার মগ্নরাত্রে আমাদের অনাকাক্সিক্ষত নীরবতাসমূহ (আয়ুষ্মান স্মৃতির ধ্রুপদী রহস্য, স্বভাবদুর্বৃত্ত বাতাসে কুয়াশার কৃষ্ণতীর্থ)। কবি মাসুদ মুস্তাফিজের কবিতায় অন্তরগভীরে রয়েছে দর্শন এবং জীবনযাপনের গূঢ় এষণার নিগূঢ় সংবেদনাময় চিন্তার জগত যা পাঠকের চিন্তার নন্দনবৃত্তিকে উদ্বুদ্ধ করে। মুস্তাফিজের কবিতার চিত্রকল্পের প্রগলতায় রয়েছে আমাদের জীবনের গ্রন্থিত রূপায়ন। কবি তাঁর কবিতায় গল্প উপস্থাপনের চেষ্টায় বলে যান তাঁর চোখে দেখা সমাজের ঘটমান বিচিত্র সৌন্দর্যবোধসম্পন্ন মানুষ ছাড়া আপাতদৃষ্টিতে অবলোকন করা সম্ভব নয়। তাঁর চিন্তা এবং আবেগের আলোছায়ায় বর্ণনার গভীরতা রূপায়ন করতে চেয়েছেন এক ক্রিয়াশীল কবিতায় যা মানুষকে ভাবতে শিক্ষা দেবে। সেখানে কল্পনার কোন আধার নেই- থাকবে জীবনসত্তের ব্যঞ্জনা। এ স্বপ্ন যেন আমাদের-দর্শন-বিজ্ঞান ও আর রাজনীতি ইতিহাসের বন্ধনে আবিষ্ট করে পৌঁছে দেবে চেতনার কাকদুপুর দিনে, সূর্যের ঠিকানা। আমরা এমন অপেক্ষায় থাকি একটি নিশ্চুপ ভোরের...। কবির জন্মদিনে শুভেচ্ছা। জয় হোক কবি এবং কবিতার। বঙ্গ রাখাল
×