ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মীম নোশিন নাওয়াল খান

হাস্যকর ইগ নোবেল

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২৫ নভেম্বর ২০১৬

হাস্যকর ইগ নোবেল

নোবেল নামটা শুনলেই অন্যরকম শ্রদ্ধা, অন্যরকম ভাললাগা কাজ করে। কিন্তু এই নোবেল শব্দটার আগে যদি ‘ইগ’ শব্দটা লাগিয়ে দিই? কেউ কেউ হয়ত নাম শুনে চিনে ফেলবেন। বাকিরা অবাক হয়ে ভাববেন, ইগ নোবেল আবার কী? তাদেরকে জানাই, ইগ নোবেলও একটি পুরস্কার। এটিও একটি আন্তর্জাতিক ও সম্মানজনক পুরস্কার। এই পুরস্কারটি দেয়া হয় সাহিত্য, চিকিৎসাশাস্ত্র, পদার্থবিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে অসামান্য অবদান রাখার জন্য। কিন্তু এই পুরস্কারের একটি বিশেষত্ব আছে। সেটা হলো, এটা দেয়া হয় শুধু হাস্যকর এবং অদ্ভুত আবিষ্কার বা অবদানের জন্য। বিষয়টা জটিল লাগছে? আরেকটু বললেই বুঝে ফেলবেন এর বিশেষত্ব। ১৯৯১ সালে ‘অ্যানালস অব ইম্প্রবাবল রিসার্চ’ ম্যাগাজিনের সম্পাদক মার্ক আব্রাহামস এই নোবেলের প্রচলন ঘটান। আগে এই ইগ নোবেলের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান আয়োজিত হতো ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির একটি হলরুমে, কিন্তু বর্তমানে এটি দেওয়া হয় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যান্ডার্স হলে। এই আয়োজনটির যৌথ স্পন্সর হার্ভার্ড কম্পিউটার সোসাইটি, হার্ভার্ড র‌্যাডক্লিফ সাইন্স ফিকশন এ্যাসোসিয়েশন এবং হার্ভার্ড র‌্যাডক্লিফ সোসাইটি অব ফিজিক্স স্টুডেন্টস। ইগ নোবেল প্রদানের ক্ষেত্রগুলোও বিস্তর। ১০টি বিষয়ের জন্য এই পুরস্কার দেয়া হয়। এরমধ্যে সত্যিকারের নোবেলের বিষয়গুলোও রয়েছে। ইগ নোবেলের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান নোবেলের মতো ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ হয় না, বরং এর ঠিক উল্টোটা হয়। ঠাট্টা আর হাস্যরসে ভরপুর থাকে অনুষ্ঠান। পুরস্কার পাওয়া নিয়ে কারও মাথাব্যথা থাকে না, আনন্দ আর ঠাট্টা করাটাই এখানে সবার কাছে মুখ্য বিষয়। প্রতিবারই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে একটি বাচ্চা মেয়ের কণ্ঠে শোনা যায়, ‘এগুলো বন্ধ করো! আমি বিরক্ত হচ্ছি!’ এমন আরও মজার মজার আয়োজন ইগ নোবেলের অনুষ্ঠানকে অনেক বেশি প্রাণবন্ত ও আনন্দদায়ক করে তোলে। অদ্ভুত গবেষণা ও আবিষ্কারের জন্য ইগ নোবেল দেওয়া হলেও এটিকে তুচ্ছ করে দেখার কোন কারণ নেই। গোটা বিশ্বের কাছে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আয়োজন। ইগ নোবেলের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান সরাসরি প্রচার করে ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও। অনুষ্ঠানটি ইন্টারনেটেও সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। এই মজার পুরস্কার নিয়ে বেশ কিছু বইও লেখা হয়েছে। সবচেয়ে মজার কথা হচ্ছে, অদ্ভুত এবং হাস্যকর আবিষ্কারগুলোকে ইগ নোবেল দেয়া হলেও এগুলোও কিন্তু মানবসভ্যতার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহনকারী এ্যানোফিলির মশা লিমবার্গারের পনির এবং মানুষের পায়ের দ্বারা সমানভাবে আকৃষ্ট হয়- এমন একটি গবেষণা ২০০৬ সালে ইগ নোবেল লাভ করে। এই তথ্য কাজে লাগিয়ে আফ্রিকার বেশ কিছু অঞ্চলে মশার উপদ্রব কমানো হয়। প্রতিবছরের মতো এ বছরও ইগ নোবেল প্রদান করা হয়েছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যান্ডার্স হলে গত ২২ সেপ্টেম্বর ইগ নোবেলের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। চলুন, জেনে নেয়া যাক বিভিন্ন বিষয়ে এ বছর পুরস্কারপ্রাপ্ত কিছু উদ্ভট গবেষণার কথা। প্রজনন : মিসরের আহমেদ শফিক এই পুরস্কারটি পেয়েছেন। পলিয়েস্টার, সুতি এবং উলের ট্রাউজার কীভাবে ইঁদুরের প্রজননের ওপর প্রভাব ফেলে- এ বিষয়ে গবেষণার জন্য তাকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। পদার্থবিজ্ঞান : পদার্থবিজ্ঞানে এ বছর ইগ নোবেল জিতেছেন হাঙ্গেরি, স্পেন, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ডের একদল গবেষক। মাছি কেন সাদা ঘোড়ার প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয় এবং গঙ্গাফড়িং কেন সমাধির উপরের কালো রঙের পাথরের প্রতি আকৃষ্ট হয়- এ বিষয়ে গবেষণার জন্য তাদেরকে এই পুরস্কার দেয়া হয়। রসায়ন : বিশ্বখ্যাত অটোমোবাইল তৈরির কোম্পানি ভক্সওয়াগেন জিতে নিয়েছে রসায়নে ইগ নোবেল। যানবাহনের কারণে হওয়া অত্যধিক পরিবেশ দূষণ রোধে যানবাহন পরীক্ষা করার সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে বৈদ্যুতিক পদ্ধতিতে সামান্য পরিমাণ ধোঁয়া নিঃসরণের পদ্ধতি আবিষ্কার করে তারা এই পুরস্কার লাভ করে। চিকিৎসাবিজ্ঞান : জার্মানির একদল গবেষক জিতেছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানের এ বছরের ইগ নোবেল। তাদের আবিষ্কারটি ছিল, আপনার শরীরের বাম দিকে যদি কোনো কারণে চুলকানি হয়, আর আপনি যদি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শরীরের ডানপাশ চুলকাতে শুরু করেন, তাহলেই বামপাশের চুলকানি থেকে রেহাই পেয়ে যাবেন। মনস্তত্ত্ব : বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক এই পুরস্কার পেয়েছেন। তারা ১০০০ জন মিথ্যেবাদীকে প্রশ্ন করেছিলেন তারা কতটুকু মিথ্যে বলে এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মিথ্যেবাদী মানুষগুলোর দেয়া উত্তর বিশ্বাস করা উচিত কিনা। এজন্য তাদের ইগ নোবেল দেয়া হয়েছে। সাহিত্য : সাহিত্যে ইগ নোবেল পেয়েছেন সুইডেনের ফ্রেডরিক জোবার্গ। তার তিন ভলিউমের আত্মজীবনীর জন্য তিনি এই পুরস্কার পান, যেখানে মূলত মৃত এবং জীবিত মাছি ধরার আনন্দের কথা লেখা হয়েছে। উপলব্ধি : জাপানের আতসুকি হিগাশিয়ামা ও কোহেই আদাচি এই পুরস্কার পেয়েছেন। আপনি যদি নিচু হয়ে দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে কোনকিছুকে দেখেন, তাহলে সেটা স্বাভাবিকের চেয়ে অন্যরকম লাগে কিনা- এ বিষয়ে গবেষণার জন্য তাদেরকে এই পুরস্কার দেয়া হয়েছে।
×