ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিয়ের বয়সসীমা আঠারোই বাঞ্ছনীয়

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ২৫ নভেম্বর ২০১৬

বিয়ের বয়সসীমা আঠারোই বাঞ্ছনীয়

বাল্যবিয়ে এদেশের একটি প্রাচীনতম সামাজিক অভিশাপ। সুদূর পুরাকাল থেকে আজ অবধি এই নির্মম প্রথা অসংখ্য কন্যাশিশুর জীবন শুরুতেই বিভীষিকাময় করে তোলে। যুগের পরিবর্তন, সময়ের দাবিতে এই দুর্ভেদ্য সংস্কার ভেঙ্গে অনেকেই বের হয়ে আসলেও এই জঘন্য বিধিকে এখনও শেকড় থেকে উপড়ে ফেলা সম্ভব হয়নি। দেশে-বিদেশে, অসংখ্য গবেষণা, প্রতিবেদন ও জরিপে স্পষ্ট হয় বাল্যবিয়ে এখনও সমাজ ব্যবস্থার এক নির্দয় অভিঘাত। যা অধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যার চরম সমৃদ্ধির যুগে একেবারেই বেমানান। এই সামাজিক অপসংস্কার থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য বিভিন্ন চেষ্টা করা হলেও তা আজও সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গেছে। আগে তো বাল্যবিয়ের ওপর কোন আইনগত বিধিনিষেধ ছিল না। বর্তমানে আইনী ব্যবস্থায় মেয়ের বিয়ের বয়স ধরা হয়েছে ১৮ বছর। এ শর্ত না মানলে বিচারিক ব্যবস্থায় শাস্তিরও বিধান দেয়া আছে। কন্যাসন্তানের পরিবার এ আইন মানেও না আর বিধি ভাঙ্গকারীকে শান্তিও দেয়া হয় না। ফলে সংখ্যায় কমলেও আজও বাল্যবিয়ে একটি সামাজিক ব্যাধি। সময়ের যৌক্তিক দাবিতে মেয়েরা উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে নিজেদের সম্পৃক্ত করলেও এই ভয়ঙ্কর অব্যবস্থা থেকে নিজেদের বের করে আনতে ব্যর্থ হচ্ছে। এর ওপর আবার নতুন এক উপসর্গের মাত্রা যোগ হওয়ার খবর শোনা যাচ্ছে। যেখানে ১৮ বছর কন্যা সন্তানের বিয়ের বয়স নির্ধারণ করা হলেও বাল্যবিয়ের গতিরোধ করা যাচ্ছে না সেখানে যদি আরও দু’বছর কমিয়ে ১৬ করা হয় তাহলে এই অশুভ সংস্কারটি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে কল্পনাই করা যায় না। তা যদি আবার আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করা হয়। এ ধরনের নতুন কোন ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিবাদস্বরূপ জাতীয় কন্যাশিশু এ্যাডভোকেসি ফোরাম ও বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে এক গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুল আরা হক মিনুর সঞ্চালনায় সংগঠনের বক্তারা বাল্যবিয়ের নেতিবাচক প্রভাব-প্রতিক্রিয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বয়স কমানো নয় বরং তা বাড়ানোর সুপারিশ করেছেন। এই গোল টেবিল বৈঠকের আলোচকরা অভিমত ব্যক্ত করেন নিদেনপক্ষে এই বয়স শর্তহীনভাবে ১৮ তেই রাখতে হবে। যে বয়সে ব্যাগ হাতে কন্যাসন্তান স্কুলে যাবে সে সময়ই তাকে বিয়ের পিঁড়িতে বউ সেজে বসতে হয় তা যেমন অমানবিক তেমনই লজ্জাজনক। এই বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে কন্যা সন্তানদের অবশ্যই বের করে আনতে হবে। গ্রামে-গঞ্জে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে বাল্যবিয়ের সংখ্যা বেশি সেখানে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে হবে। সুশিক্ষিত হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে উদ্যোগী করে তুলতে হবে। শিক্ষার পাঠ সমাপ্ত করে কর্মজীবনে নিজের স্থান গড়ে নিতে হবে। বাবা-মার সঙ্গে সঙ্গে কন্যাশিশুদেরও এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। কোনভাবেই সামাজিক অপসংস্কারের কাছে নিজেকে বলি দেয়া যাবে না। নিজের পায়ে নিজেকেই শক্তভাবে দাঁড়াতে হবে। শুধু আইনী ব্যবস্থাই নয়, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে নিজেদের বাঁচাতে হবে। শরীর ও মনকে পরিপূর্ণ করে জীবনের প্রতিটি অধ্যায়কে সযতেœ পার করতে হবে। কোন রকম ঝুঁকি নেয়া কিংবা বিপন্ন অবস্থার শিকার হওয়া যাবে না। অপরাজিতা ডেস্ক
×