ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কলাপাড়া পৌরসভা

ফ্রি-স্টাইলে চাঁদাবাজি

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ২৫ নভেম্বর ২০১৬

ফ্রি-স্টাইলে চাঁদাবাজি

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ২৪ নবেম্বর ॥ ফরিদপুর থেকে ৫৭ সিটের একটি বাস রিজার্ভ করে কুয়াকাটায় পিকনিকে এসেছেন একদল শিক্ষার্থী। কলাপাড়ার আন্ধারমানিক নদীর ওপরে নির্মিত শেখ কামাল সেতু পার হওয়ার প্রাক্কালে এ বাস থামিয়ে সেতুর টোল বাবদ ২০০ টাকা রাখা হয়েছে। এছাড়া কলাপাড়া পৌরসভার টোলের এবং শ্রমিক সংগঠনের কথা বলে আরও ১৫০ টাকা আদায় করা হয়েছে। অথচ কলাপাড়া পৌরসভার এক ইঞ্চি সড়ক মাড়ায়নি এ বাসটির চাকা। বুধবার খুব প্রত্যুষে কুয়াকাটায় গেছেন এ পর্যটক দল। এভাবে প্রতিনিয়ত শতাধিক পর্যটকবাহী বাস কিংবা কুয়াকাটাগামী মালবাহী ট্রাক থেকে পৌরসভার নামে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি চলছে। এসব চলছে ফ্রি-স্টাইলে। পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভায় প্রবেশ করলে কিংবা পৌর এলাকায় অবস্থান করলে পৌর টোল হিসাবে বড় ট্রাকপ্রতি এক শ’ টাকা, মাঝারি ট্রাক ৭৫ টাকা, ছোট পিকআপ-ট্রাক পঞ্চাশ টাকা, মাহেন্দ্র ৩০ টাকা, টমটম কুড়ি টাকা, অটোবাইক কুড়ি টাকা, হোন্ডা ১০ টাকা আদায় করার কথা। কিন্তু পৌরসভায় প্রবেশ না করলে কোন ধরনের পৌরটোল আদায়ের নিয়ম নেই। কিন্তু এসব উপেক্ষা করে এক ধরনের চাঁদাবাজি চলছে ফ্রি-স্টাইলে। শেখ কামাল সেতুর উত্তর অংশে টোল পয়েন্টের সামনের সংযোগ সড়কে এমন চাঁদাবাজিতে শুধু পর্যটক-দর্শনার্থীবাহী বাস নয়, মাইক্রো থেকে শুরু করে প্রাইভেটকারসহ সব ধরনের যানবাহন থেকে ফ্রি-স্টাইলে চাঁদাবাজি চলছে। রাজা এবং সোহেল নামের দুই ব্যক্তি এসব চাঁদা আদায় করছে। একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, সোহেল ও রাজা পৌরসভার প্রবেশদ্বারে যানবাহন আটকে এসব চাঁদা আদায় করছে। সূত্রমতে, ট্রাকপ্রতি এক শ’ টাকা। ছোট যাত্রীবাহী পিকআপ (স্থানীয় ভাষায় হাঁসের ছাও) এক শ’ টাকা। মোটরসাইকেলপ্রতি কুড়ি টাকা। পরিবহন বাস থেকে পঞ্চাশ টাকা। লোকাল বাস প্রতি ত্রিশ টাকা। গেটলক বাসপ্রতি ত্রিশ টাকা। টমটম ত্রিশ টাকা। মাহেন্দ্র পঞ্চাশ টাকা। এছাড়া পৌরসভায় প্রবেশ না করলেও কুয়াকাটাগামী রিজার্ভ বাসপ্রতি আদায় করছে এক শ’ টাকা। অথচ পৌরসভার ধার্য টোলরেট মানা হয় না। এমনকি কুয়াকাটাগামী পর্যটকবাহী বাসসহ কোন যানবাহন থেকে কলাপাড়া পৌরসভার নামে টোল আদায়ের নিয়ম নেই। তা মানা হয় না। ফ্রি-স্টাইলে চলছে চাঁদাবাজি। ওই সব খাত ছাড়াও শ্রমিক ইউনিয়নের নামে ট্রাকপ্রতি ৫০ টাকা। পরিবহন বাসপ্রতি ৩০ টাকা। লোকাল বাসপ্রতি কুড়ি টাকা এবং গেটলক বাসপ্রতি কুড়ি টাকা। এছাড়াও টমটম প্রতি মাসে দেড় শ’ টাকা। মাহেন্দ্র প্রতি মাসে আরও ৫০ টাকা, টমটম প্রতি সপ্তাহে ২০ টাকা। এভাবে সব ধরনের যানবাহন আটকে বছরের পর বছর ফ্রি-স্টাইলে লাখ লাখ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এক ধরনের জিম্মিদশা করে কুয়াকাটাগামী সব ধরনের যানবাহন থেকে চাঁদাবাজি চলছে। এ নিয়ে কলাপাড়া উপজেলা পরিষদের আইনশৃঙ্খলার সভায় একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। কিন্তু চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। এ ব্যাপারে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক একেএম শামীমুল হক সিদ্দিকী জানান, জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। কলাপাড়া পৌর মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার জানান, পৌরসভার নির্ধারিত টোলরেট রয়েছে। এর বাইরে কোন টাকা আদায়ের সুযোগ নেই। এছাড়া কুয়াকাটাগামী বাস-ট্রাকসহ কোন ধরনের যানবাহন থেকে পৌরটোল আদায় করা যাবে না। কলাপাড়া পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর আল-আমিন সরদার জানান, শ্রমিক ইউনিয়নের নামে কোন যানবাহন থেকে টাকা আদায় করা নিষিদ্ধ। যে আদায় করবে এর দায়দায়িত্ব তার বহন করতে হবে।
×