স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল টি২০) চতুর্থ আসরে স্পিনারদের সঙ্গে পেসারদের লড়াই বেশ জমে উঠেছে। ধীরগতির উইকেটে স্পিনাররা দারুণ বোলিং করে ব্যাটসম্যানদের বেশ সংগ্রামের মধ্যে ফেলেছেন। তবে ক্রমেই জেগে উঠেছেন পেসাররা। এখন পর্যন্ত চিটাগাং ভাইকিংসের আফগানিস্তানের অফস্পিনার মোহাম্মদ নবি ১৪ উইকেট নিয়ে সবার ওপরে বোলিং গড়ে এগিয়ে আছে। এক ম্যাচ কম খেলে তার সমান ১৪ উইকেট শিকার করেছেন জাতীয় দলের পেসার, ঢাকা ডায়নামাইটসের মোহাম্মদ শহীদ। তার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার দারুণ লড়াই জমে উঠেছে জাতীয় দলের আরেক পেসার শফিউল ইসলামের। ৭ ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়ে তিনে খুলনা টাইটান্সের এ পেসার। এরপরই আছেন আরেক স্পিনার রংপুর রাইডার্সের শহীদ আফ্রিদি- ৬ ম্যাচে ১১ উইকেট। সমান ১১ উইকেট নিয়ে তাকে পেছনে ফেলার লড়াই খুলনা টাইটান্সের পাকিস্তানী পেসার জুনাইদ খান ও চিটাগাং ভাইকিংসের তাসকিন আহমেদের।
পাক পেসার জুনাইদ নিজের নৈপুণ্যে খুশি হয়ে বড় কিছুর প্রত্যাশা জানাননি। কিন্তু শহীদ প্রত্যয় জানিয়েছেন অন্তত ২৫/৩০ উইকেট নিয়ে আসর শেষ করার। সেক্ষেত্রে বিপিএলের নতুন রেকর্ড হবে, কারণ এর আগের তিন আসরে কোন বোলার ২২ উইকেটের বেশি দখল করতে পারেননি। গত আসরে বিপিএল ইতিহাসে এক টুর্নামেন্টে সর্বাধিক ২২ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েছেন ক্যারিবীয় পেসার কেভন কুপার। তার ঠিক পেছনেই ছিলেন তরুণ উদীয়মান পেসার আবু হায়দারা রনি ২১ উইকেট নিয়ে। বোলারদের নৈপুণ্যে এ দুটিই এখন পর্যন্ত বিপিএলে রেকর্ড পরিমাণ উইকেট শিকারের ঘটনা। ২০১২ সালের প্রথম বিপিএল আসরে ১১ ম্যাচে ১৭ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থেকে শেষ করেছিলেন পাক পেসার মোহাম্মদ সামি। সেবার বাঁহাতি স্পিনার ইলিয়াস সানি ১৭ উইকেট নিয়ে সেরা হয়েছিলেন বোলিং গড়ে এগিয়ে থাকায়। ২০১৩ সালের দ্বিতীয় আসরে ছিলেন পেসাররাই সেরা। দক্ষিণ আফ্রিকার আলফোনসো থমাস ২০ এবং পাকিস্তানের আজহার মাহমুদ ১৯ উইকেট নিয়ে ছিলেন শীর্ষ দুই উইকেটশিকারি। এসব পরিসংখ্যান বলছে স্পিনারদের সঙ্গে পেসারদের বেশ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে প্রতি বিপিএলে।
যদিও উইকেটগুলো অনেকটাই স্পিনারদের সহায়ক। এবারও ধীরগতির উইকেটে রান না হওয়া নিয়ে প্রথমদিকে সমালোচনা হয়েছে অনেক। প্রথমদিকে স্পিনাররা এগিয়ে থাকলেও এবার পেসাররা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। ৮ ম্যাচে ১১.৮৫ গড়ে ১৪ উইকেট নিয়ে শীর্ষে নবি। কিন্তু ৭ ম্যাচে ১২.৯২ গড়ে সমান ১৪ উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন আসরে দুর্দান্ত বোলিং করা শহীদ। কিন্তু তিনি আরও উইকেট পেতে চান। ইনজুরির কারণে ইংল্যান্ড সিরিজে খেলতে না পারা ডায়নামাইটসের পেসার শহীদ বলেন, ‘লক্ষ্যটা এ রকমই। লক্ষ্য আছে ২৫ থেকে ৩০ উইকেট নেয়ার। আশা করি ইনশাল্লাহ যদি হয়। গত ম্যাচগুলো যেমন ছিল আশা করি ও রকমই ভূমিকা রাখতে চাই। নিজের যেটা সেরা আছে ওটাই দেয়ার চেষ্টা করব।’ তবে অন্তত চারটি সহজ ক্যাচ মিস হওয়ার কারণে উইকেট কিছুটা কম জমা হয়েছে তার ঝুলিতে। এ বিষয়ে শহীদ বলেন, ‘হ্যাঁ অবশ্যই। কারণ ৭ ম্যাচে ১৮ উইকেট অনেক। চারটা থেকে দুইটা ক্যাচ আসলেও ভাল হতো। একটু আক্ষেপ তো আছেই। এটা নিয়ে চিন্তা করে লাভ নেই।’
শহীদের সঙ্গে যুদ্ধ চলছে খুলনা টাইটান্সের ৭ ম্যাচে ১৩ উইকেট শিকার করা শফিউল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে নতুন করে জাতীয় দলে ফেরা এ পেসার আসন্ন নিউজিল্যান্ড সফরের দলেও আছেন। তিনিই এখন দলের অন্যতম ভরসায় পরিণত হয়েছেন রুবেল হোসেন ও আল-আমিন হোসেন দল থেকে ছিটকে পড়ার কারণে। দারুণ বোলিং করে সেই আস্থার প্রতিফলনও ঘটাচ্ছেন তিনি। রংপুর স্পিনার আফ্রিদি ৬ ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়েছেন। তার সঙ্গে লড়াই চলছে ৬ ম্যাচে ১৬.১৮ গড়ে ১১ উইকেট নেয়া চিটাগাংয়ের তাসকিন এবং ৭ ম্যাচে খুলনার পাক পেসার জুনাইদের ১৪.৩৬ গড়ে ১১ উইকেট। জুনাইদ বলেন, ‘প্রথমত আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। আমি খুশি। যেমন পারফর্মেন্স হচ্ছে তাতে দলের অন্য খেলোয়াড়রাও খুশি।’ ঢাকায় তৃতীয় ও শেষ পর্বে তাই লড়াই হবে এগিয়ে যাওয়ার। এগিয়ে যাওয়ার জন্য স্পিনারদের সঙ্গে যেমন লড়াইটা আছে তেমনি পেসারদের নিজেদের মধ্যেও আছে লড়াইটা।