ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রিজার্ভ চুরির অর্থ ফেরত আনতে

কাল ফিলিপিন্স যাচ্ছে প্রতিনিধি দল

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ২৫ নভেম্বর ২০১৬

কাল ফিলিপিন্স যাচ্ছে প্রতিনিধি দল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংকের রিজার্ভের চুরি হওয়া অংশের ১ কোটি ৫২ লাখ ডলার ইতোমধ্যে ফেরত পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি ৬ কোটি ৫৮ লাখ ডলার ফেরত পেতে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বিএফআইইউসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ। বাকি টাকা উদ্ধারের জন্য আগামীকাল শনিবার ফিলিপিন্স যাচ্ছে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বিএফআইইউ-এর মহাব্যবস্থাপক দেবপ্রসাদ দেবনাথ জনকণ্ঠকে বলেন, ৯ মাসেরও কম সময়ের মধ্যে রিজার্ভ চুরির ১ কোটি ৫২ লাখ ডলার ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে। আশা করি, বাকি ৬ কোটি ৫৮ লাখ ডলারও ফেরত আনা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, টাকা ফেরত আনতে সব ধরনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। চলতি মাসেই উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল ফিলিপিন্সে যাবে। ইতোমধ্যে সেখানে বাকি টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়ে কাজ চলছে। এজন্য কোর্টের বাইরেও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। জানা গেছে, আগামীকাল শনিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল ফিলিপিন্স যাবে। ২৮ নবেম্বর থেকে আগামী ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ফিলিপিন্স থাকবেন। তারা ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট রডরিগো দুতের্তে ছাড়াও দেশটির আইনমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, সিনেটের চেয়ারম্যান ও গবর্নরের সঙ্গে বৈঠক করবেন। আইনমন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে থাকছেন অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক, বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির, এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান। এছাড়া এ দলে যুক্ত হবেন ফিলিপিন্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান জানিয়েছিলেন, ফিলিপিন্সের বিভিন্ন এ্যাকাউন্টে বেশকিছু টাকা ফ্রিজ করা আছে, যা প্রায় ৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এর মধ্যে ফ্রিজ করা আছে ২ কোটি ৯০ লাখ ডলারের কিছু বেশি। এছাড়া চুরির অর্থ ভাঙিয়ে দেয়ার অপরাধে লাইসেন্স বাতিল হওয়া মুদ্রা বিনিময়কারী প্রতিষ্ঠান ফিলরেমের কাছে রয়েছে আরও এক কোটি ৭০ লাখ ডলার। ক্যাসিনো ব্যবসায়ী কিম অংয়ের কাছে আরও ৬০ লাখ ডলার রয়েছে। এ টাকা ফেরত পেতে আইনী প্রক্রিয়া চলছে। এসব বিষয়ে আলোচনার জন্য দেশটির দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে একটি উচ্চপর্যায়ের দল ম্যানিলা সফর করবে। উল্লেখ্য, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার পাঠানো হয়েছিল ফিলিপিন্সে। ওই অর্থের দেড় কোটি (১৫ মিলিয়ন) ডলার ফেরত দিয়েছে ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে নিউইয়র্ক ফেড থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় এক বিলিয়ন ডলার সরানোর চেষ্টা হয়েছিল। একটি মেসেজের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার একটি ‘ভুয়া’ এনজিওর নামে ২০ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেয়া হলেও বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়। অন্যদিকে চারটি মেসেজের মাধ্যমে ফিলিপিন্সের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকে (আরসিবিসি) সরিয়ে নেয়া হয় ৮১ মিলিয়ন ডলার। এর একটি বড় অংশ ফিলিপিন্সের জুয়ার আসরে চলে যায়। বিশ্বজুড়ে তোলপাড় করা এ ঘটনাটি তদন্তের উদ্যোগ নেয় ফিলিপিন্সের সিনেট কমিটি। সে দেশের আদালতেও গড়ায় বিষয়টি। সে দেশের আদালতের রায় অনুযায়ী, ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রাখা পেসো ও ডলার ফেরতের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউর মহাব্যবস্থাপক দেবপ্রসাদ দেবনাথ ও যুগ্ম-পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রব গত ৭ নবেম্বর ফিলিপিন্স যান। এরপর ৯ নবেম্বর দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক, এফআইইউ, ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস ও রিজিওনাল কোর্টের শেরিফের সঙ্গে ম্যানিলায় বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা সভা করেন। ওই সভায় অর্থ হস্তান্তরের বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনার পর ১৫ নবেম্বর মঙ্গলবার ১ কোটি ৫২ লাখ ৫০ হাজার ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে জমা হয়।
×