ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ূম

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ মুন্কার ও নকীর দুই ফেরেশ্তা

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ২৫ নভেম্বর ২০১৬

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ মুন্কার ও নকীর দুই ফেরেশ্তা

ফেরেশ্তা আল্লাহ্র খাস সৃষ্টি। আল্লাহ্ জিন সৃষ্টি করেন আগুন থেকে। মানুষ সৃষ্টি করেন মাটি থেকে এবং ফেরেশ্তা সৃষ্টি করে নূর থেকে। ফেরেশ্তাগণ আল্লাহ্র দেয়া নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করেন। মুন্কার ও নকীর এই দুই ফেরশ্তোর দায়িত্ব হচ্ছে মানুষ মারা গেলে তার আলমে বরযাখে বা কবরের জগতে প্রবেশকালে তাকে রীতিমতো প্রশ্ন করার মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখা। হাদিস শরীফে আছে যে মুন্কার নকীর এই দুই ফেরেশ্তার তাদের অদ্ভুত চেহারা ও ভীতি উদ্রেককারী অবয়ব নিয়ে কবরে এসে মৃত ব্যক্তির কাছে জানতে চান : মান্ রব্বকা-তোমার রব্ কে? মান্-দীনুকা-তোমার দীন কি? মান্ নবীওকা-তোমার নবী কে? যখন মৃত ব্যক্তি ঠিক ঠিক জবাব দেবে তখন তার কবর সত্তর হাত প্রশস্ত হয়ে যায় এবং নূর দ্বারা পূর্ণ করা হয় (তিরমিযী শরীফ)। বুখারী শরীফে আছে, তাকে জানিয়ে দেয়া হয় যে, তার ঠিকানা জান্নাত তা দেখিয়ে দেয়া হয়। অন্য এক তথ্য থেকে জানা যায় যে তার জন্য রেশমের বিছানা বিছিয়ে দেয়া হয় এবং জান্নাতের হাওয়া পরিবেশন করা হয়। কিয়ামত দিবসে উত্থিত হওয়া পর্যন্ত সে শান্তিপূর্ণ গভীর নিদ্রায় থাকে। (তিরমিযী শরীফ)। যে ব্যক্তি উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর দিতে ব্যর্থ হয় তাকে ফেরেশ্তা দু’জন চাবুক প্রহার করতে থাকে আর মৃত ব্যক্তি যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকে, তার কবরকে এমনভাবে সঙ্কীর্ণ করা হয় যে, তার দুই পাঁজরের হাড় একটার ভেতরে অন্যটি ঢুকে পড়ে (তিরমিযী শরীফ)। এমনকি জাহান্নামের মধ্যে তার ঠিকানাও দেখিয়ে দেয়া হয়। (বুখারী শরীফ)। মুন্কার-নকীরের ওপর বিশ্বাস রাখা মৌলিক আকিদার অন্তর্ভুক্ত। কবরে জিজ্ঞাসাবাদ মূলত তাকে কিয়ামত পর্যন্ত কোন্ অবস্থানে রাখা যাবে তা নির্ধারণ। তবে মূল বিচার হবে হাশরের ময়দানে। নবী (সা), সিদ্দীক, শহীদ ও নেক বান্দাদের ক্ষেত্রে খাস ব্যবস্থা রয়েছে। দুনিয়াতে বিচারের পূর্বে হাজীদের যেমন সাধারণ কয়েদী হিসেবে রাখা হয় এবং কোন কোন কয়েদী ডিভিশনপ্রাপ্ত হয় এটা থেকে কিছুটা উপলব্ধি করা যেতে পারে। এ সবই আল্লাহ্ জাল্লা শানুহুর ব্যবস্থাপনা। মানুষ যেমন কর্ম করবে পরকালে তেমন ফল পাবে। পৃথিবীটা হচ্ছে আখিরাতের শস্যক্ষেত্র। এখানে যে যেমন কর্ম করবে আখিরাতে প্রতিদানস্বরূপ তাকে দেয়া হবে যথাযোগ্য স্থান। সৎ কর্ম পরায়ণকে দেয়া হবে জান্নাত আর মন্দ কর্ম যারা করবে তাদের দেয়া হবে জাহান্নাম। মানুষ মৃত্যুপ্রাপ্ত হলে তার মরদেহ পুড়িয়ে ফেলা হোক, কিংবা পানিতে ফেলে দেয়া হোক কিংবা উঁচু স্থানে রাখা হোক তার রুহুকে যেতে হয় আলমে বারযাখ অর্থাৎ কবরের জগতে। সেই কবরের জগতে প্রবেশকালে তাকে মুন্কার-নকীর ফেরেশ্তা দুই জনের পরীক্ষার সম্মুখীন হতেই হয়। আমাদের স্মরণে রাখতে হবে আল্লাহ্ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তারই ইবাদত করার জন্য। ইবাদত মানে দাসত্ব। মানুষ হচ্ছে আল্লাহ্র দাস, আল্লাহ হচ্ছেন মাবুদ। আল্লাহ্ তার রসূলের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে কেমন করে ইবাদত করতে হবে। পৃথিবীতে প্রচুর ধন-সম্পদের অধিকারী হলেই সুখের মুখ দর্শন করা সম্ভব হয় না আসল জীবন হচ্ছে আখিরাতের জীবনে। সেই জীবন সুখের করতে হলে সুনির্দিষ্ট ইবাদত করা জরুরী। কুরআন মজীদে ইরশাদ মন্দ ও ভাল এক নয় যদিও মন্দের আধিক্য তোমাকে চমৎকৃত করে। সুতরাং হে বোধশক্তিসম্পন্নরা আল্লাহ্কে ভয় কর যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা মায়িদা : আয়াত ১০০)। আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু শহীদগণকে বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে : আল্লাহ্র পথে যারা নিহত হয় তাদের মৃত বলো না, বরং তারা জীবিত, কিন্তু তা উপলব্ধি করতে পারো না। (সূরা বাকারা : আয়াত ১৫৪), শহীদগণকে কবরে জীবিকা দেয়া হয়। ইরশাদ হয়েছে : যারা আল্লাহ্র পথে নিহত হয়েছে তাদের কখনও মৃত মনে কর না বরং তারা জীবিত এবং তাদের রবের নিকট থেকে তারা জীবিকাপ্রাপ্ত। (সূরা আল্ ইমরান : আয়াত ১৬৯) আল্লাহ্র ওলীগণ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে : নিশ্চিত জেনে রাখ, নিশ্চয়ই ওলীগণের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিত হবে না। লেখক : পীর সাহেব দ্বারিয়াপুর শরীফ, উপদেষ্টা ইনস্টিটিউট অব হযরত মুহম্মদ (সা), সাবেক পরিচালক ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
×