ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ২৫ নভেম্বর ২০১৬

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত

বাংলাদেশ ২০২১ সাল নাগাদ বিদ্যুত উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়। ইতোমধ্যে রামপাল, বাঁশখালী, মহেশখালী ও পায়রায় একাধিক কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্মিত হয়েছে ছোট ছোট একাধিক জ্বালানি তেলনির্ভর বিদ্যুত কেন্দ্র। সর্বোপরি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের ব্যাপক প্রস্তুতি তো চলছেই। বর্তমানেও বিদ্যুত উৎপাদন রয়েছে আশাব্যঞ্জক পর্যায়। উদ্বৃত্ত না হোক, চাহিদা ও যোগান প্রায় সমান সমান বলা চলে। পল্লী এলাকায় অল্পবিস্তর লোডশেডিং তথা বিদ্যুতের রেসনিং চললেও রাজধানী ও শহরাঞ্চলে এর উৎপাত কম। মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হতে হলে অব্যাহত বিদ্যুত উৎপাদন ও প্রাপ্তি অবশ্যই নিরবচ্ছিন্ন ও নির্বিঘœ রাখতে হবে। বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম থাকায় সার্বিক পরিস্থিতি বর্তমানে অনুকূলই বলা চলে। তবে সমস্যা রয়েছে অন্যত্র ও নানাবিধ। অনেক বিদ্যুত কেন্দ্র পুরনো ও জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। কোন কোনটির আয়ুষ্কাল প্রায় সমাপ্তির পথে। এ সবের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ও বেশি। সেক্ষেত্রে এগুলোর সংস্কার এবং অনেকক্ষেত্রে নবায়ন জরুরী ও অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। সর্বাধিক পুরনো ও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে সঞ্চালন লাইনগুলো। যে কারণে প্রায়ই ‘ট্রিপ’ করে বিঘœ ঘটায় বিদ্যুত সঞ্চালন ও সরবরাহে। সমস্যা রয়েছে জাতীয় গ্রিডেও। পাঠকের হয়ত স্মরণে আছে যে, কয়েক বছর আগে ঢাকার বাইরে সীমান্তবর্তী একটি সাবস্টেশনে বিদ্যুত লাইনে ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় গোটা দেশই হয়ে পড়েছিল বিদ্যুতবিহীন, অন্ধকারাচ্ছন্ন, যার জের ছিল প্রায় ৪৮ ঘণ্টা। দেশের বিদ্যুত সঞ্চালন, সরবরাহ লাইন সর্বোপরি সাবস্টেশনগুলো রয়েছে নাজুক অবস্থায়। এর বাইরেও সিডর-আইলার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায়ই বিদ্যুত ব্যবস্থা হয় ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপর্যস্ত। সার্বিক অবস্থা ও পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে রাজধানীসহ সারাদেশে বিদ্যুত সঞ্চালন অবকাঠামো নির্মাণ, সম্প্রসারণ ও সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় তিনটি বৃহৎ প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে, ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা। এতে সরকারের নিজস্ব তহবিলের পাশাপাশি বাস্তবায়নকারী সংস্থাসহ বৈদেশিক সহায়তাও পাওয়া যাবে। ‘পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক স্ট্রেনদেনিং প্রজেক্ট আন্ডার পিজিসিবি’ শীর্ষক এই প্রকল্পে পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা দেবে চীন। জুলাই ২০১৬ থেকে জুন ২০২১ পর্যন্ত মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বিদ্যুত বিভাগ। এর বাইরেও বিদ্যমান বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থা সক্ষমতা বর্ধন, পুনর্বাসন ও নিবিড়করণে গৃহীত হয়েছে দুটি প্রকল্প, যাতে উপকৃত হবে বিভাগগুলো। এই দুটো প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে গ্রামীণ এলাকায় সঞ্চালন লাইনস সম্প্রসারণের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটবে বিদ্যুত বিতরণে। গ্রামাঞ্চলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প-কারখানার পাশাপাশি সাড়ে নয় লাখ পরিবার পাবে নতুন সংযোগ। দেশে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে কথা আছে। প্রধান অভিযোগ অধিকাংশ প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়িত হয় না। ফলে জনসাধারণের দুর্যোগ ও ভোগান্তি বাড়ে, বৃদ্ধি পায় প্রকল্প ব্যয়, সর্বোপরি বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান হয় প্রত্যাহৃত। জাতীয় বিদ্যুত গ্রিড ও সঞ্চালন লাইন শক্তিশালীকরণ ও সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটবে না বলেই প্রত্যাশা। দেশের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ প্রাপ্তি ও ব্যবহার আকাক্সিক্ষত বৈকি।
×