ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শীর্ষে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ২৫ নভেম্বর ২০১৬

শীর্ষে বাংলাদেশ

শনৈঃশনৈঃ উন্নতি আর অগ্রগতির সোপান ধরে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সকল বাধা-বিঘœকে মাড়িয়ে, প্রতিবন্ধকতাকে এড়িয়ে এক উজ্জ্বল সম্ভাবনার দিকে তার অগ্রযাত্রা ক্রমশ উন্নতির শিখরে ধাবিত হচ্ছে। এমনটাই দেখা যাচ্ছে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) লক্ষ্য অর্জনে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে অবস্থান নেয়া বাংলাদেশের প্রাগ্রসরতা। ২০০০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত এমডিজি লক্ষ্য অর্জনে নিজস্ব সীমিত সম্পদ দিয়ে বাংলাদেশ তার অবস্থানকে সুদৃঢ় করা শুধু নয়, অন্য দেশগুলোকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে। জাতিসংঘভুক্ত ১৮৯টি দেশ এমডিজির সিদ্ধান্ত সামষ্টিকভাবে নিলেও এর বাস্তবায়নের দায়িত্ব ছিল দেশগুলোর একক প্রচেষ্টার মাধ্যমে। অবশ্য সকল দেশের জন্য আর্থিক ও কারিগরি সাহায্য প্রদানের আশ্বাস প্রদান করা হয়েছিল। বাংলাদেশকে প্রতিবছর তিন বিলিয়ন ডলার করে পনেরো বছরে পঁয়তাল্লিশ বিলিয়ন ডলার প্রদান করার কথা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ পেয়েছে গড়ে এক দশমিক ঊনআশি বিলিয়ন ডলার। তবে তা লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের জন্য প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়নি। লক্ষ্য বাস্তবায়নে তাই নিজস্ব সম্পদের ওপরই নির্ভর করেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ একই শ্রেণীর দেশগুলোর তুলনায় অনেক এগিয়ে গেছে। এমডিজির আটটি লক্ষ্যের অন্তর্ভুক্ত একুশটি টার্গেটের মধ্যে তেরোটি নির্ধারিত সময়ের আগেই অর্জন করেছে বাংলাদেশ। কেবল বনায়ন ছাড়া সবক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে দেশটি। এসব ক্ষেত্রে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান ও আফগানিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশের প্রয়াস। বুধবার প্রকাশিত পরিকল্পনা কমিশনের মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। দারিদ্র্যের হার নেমে এসেছে চব্বিশ শতাংশের বেশি। সুষম খাদ্য গ্রহণের হার বৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণের কাছাকাছি ছিল বাংলাদেশ। সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চতকরণ লক্ষ্য অনুযায়ী প্রাথমিক বিদ্যালয় শিশুদের শতভাগ ভর্তির লক্ষ্য পূরণ হয়েছে গত বছর। প্রাথমিক শিশু ভর্তির হার ছিল আটানব্বই শতাংশ। এক্ষেত্রে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ভুটানকে ছাড়িয়ে গেছে। এমডিজিতে সাক্ষরতার লক্ষ্য ছিল শতভাগ। নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গভিত্তিক সমতা অর্জনের লক্ষ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য ব্যাপক। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করা গেছে। এমন কি উভয়ক্ষেত্রে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা এখন বেশি। মাধ্যমিক পর্যায়ে লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে অবস্থান করছে। তবে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে লক্ষ্য এখনও পূরণ হয়নি। কৃষি বাদে অন্যান্য খাতে নারীর মজুরি হারের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস লক্ষ্যের ক্ষেত্রে নবজাতক ও পাঁচ বছর বয়সী শিশুমৃত্যুর হার হ্রাসে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। মাতৃ স্বাস্থ্যের উন্নতির পাঁচ নম্বর লক্ষ্যের ক্ষেত্রে অবশ্য বাংলাদেশ কিছুটা পিছিয়ে আছে। মাতৃমৃত্যু হার প্রতি হাজারে ১৪৩ জনে নামিয়ে আনার লক্ষ্য থাকলেও বাংলাদেশে এ হার এখনও ১৮১ জন। মাতৃস্বাস্থ্য পরিচর্চার নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করা যায়নি অবশ্য। এইডস প্রতিরোধের ক্ষেত্রে নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণ করা গেছে। এইডস প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রয়াস দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে। সাত নম্বর লক্ষ্যের অধীনে ওজন হ্রাস এবং সুপেয় পানির উন্নত উৎস ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। তবে বনায়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায়নি। দেশের মোট আয়তনের ২০ শতাংশ বন ভূমিতে উন্নীত করার ক্ষেত্রে অর্জিত হয়েছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। অপরদিকে শতভাগ উন্নত স্যানিটেশন নিশ্চিত করার লক্ষ্যমাত্রার ক্ষেত্রে অর্জন করা গেছে ৭৩ দশমিক ৫ শতাংশ। যা আফগানিস্তান, ভারত, নেপাল, ভুটান ও কলোম্বিয়ার তুলনায় অবস্থান ভাল। তবে অষ্টম লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বাংলাদেশে উন্নত দেশগুলোর দেয়া প্রতিশ্রুতি আর্থিক সহায়তা মেলেনি। নির্ধারিত সময়ের তিন বছর আগেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। এমডিজি অর্জনের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় পনেরো বছর মেয়াদী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা তথা এসডিজি অর্জনেও বজায় থাকবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। ২০৩০ সালের মধ্যে এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব বলে দেশবাসীও মনে করে।
×