সাজু আহমেদ ॥ বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের অন্যতম অগ্রগামী সংগঠন থিয়েটার। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের নাট্য ও সংস্কৃতির যে ফল্গুধারার সুধায় সিক্ত হয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। তার অন্যতম অংশীদার থিয়েটার। রামেন্দু মজুমদার, আব্দুল্লাহ আল মামুন, ফেরদৌসী মজুমদার কেরামত মওলাসহ আরও বিশিষ্ট নাট্য ও সংস্কৃতিজনের হাত ধরে এই থিয়েটার বাংলাদেশের নাট্যঅঙ্গনকে এগিয়ে নিয়েছে। দলের বেশিরভাগ প্রযোজনা যেমন জনপ্রিয় হয়েছে তেমনি বাংলাদেশের নাট্য ঐতিহ্যকেও সমৃদ্ধ করেছে। দলের অন্যতম নন্দিত ও প্রশংসিত প্রযোজনা ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’। নানা কারণেই আলোচিত এই প্রযোজনা। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট বা তার পরবর্তী সময়ের গল্পগুণে এই নাট্যটি সমৃদ্ধ একটি প্রযোজনা। এছাড়া কাব্যনাট্য হিসেবে বাংলাদেশের নাট্যজগতে ঐতিহ্যগত দিক থেকে নিরীক্ষার মানদ-ও তৈরি করতে পেরেছিল নাটকটি।
সৈয়দ শামসুল হক রচিত ও আবদুল্লাহ আল-মামুন নির্দেশিত থিয়েটারের মুক্তিযুদ্ধের নাটক ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ অভিনয়ের ৪০ বছর পূর্তি হবে আগামীকাল। চার দশক আগে অর্থাৎ ১৯৭৬ সালের এই দিনে মহিলা সমিতি মঞ্চে প্রথম অভিনীত হয়েছিল কালজয়ী এ কাব্যনাট্যটি। মঞ্চায়নের পরপরই এর রচনাশৈলী, বিষয়বস্তু ও প্রকাশনা সৌহর্য্যরে জন্য দর্শকমহলে ব্যাপক সাড়া জাগাতে সক্ষম হয় নাটকটি। এক বছরের মধ্য নিয়মিত অভিনয়ে বাংলাদেশে প্রথম সুবর্ণজয়ন্তী পালনের গৌরব অর্জন করে ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’। এ যাবত নাটকটির ১৭৩টি প্রদর্শনী হয়েছে। একমাত্র ফেরদৌসী মজুমদারই নাটকের সব প্রদর্শনীতে অভিনয় করেছেন। নাটকের প্রথম প্রদর্শনীর কেরামত মওলা এখন আবার নিয়মিত অভিনয় করছেন। আগামীকাল ২৫ নবেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় সেই মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে নাটকটির ১৭৪তম প্রদর্শনী হবে। প্রদর্শনী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতে থাকবে ৪০ বছর পূর্তির সংক্ষিপ্ত আনুষ্ঠানিকতা।
জানা যায় ২০ মার্চ ১৯৮১ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে আইটি আই আয়োজিত পঞ্চম তৃতীয় বিশ্ব নাট্যোৎসবে নাটকের দুটি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ভারতের বাইরে বহির্বিশ্বে এটি ছিল প্রথম কোন বাংলাদেশের নাট্যদলের অভিনয় প্রদর্শন। ১৯৮৭ সালে ২৫ মার্চ সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধের পাদদেশে নাটকটির একটি অভিনয় বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। ১৯৯০ সালের ২৩ মার্চ নাটকটির শততম অভিনয় হয়। স্বাধীনতা দিবসের বিশেষ নাটক হিসেবে থিয়েটারের ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে প্রচার হয়। যদিও মাঝে প্রায় বছর দশেক নাটকটির অভিনয় হয়নি, বাংলাদেশে ৪০ বছর ধরে কোন নাটক মঞ্চায়নের ইতিহাস নেই। বিরতির পরে নতুন করে প্রযোজনায় নির্দেশনা দিয়েছেন সুদীপ চক্রবর্তী। বর্তমানে এ নাটকে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন ফেরদৌসী মজুমদার, কেরামত মওলা, তোফা হোসেন, ত্রপা মজুমদার, মারুফ কবির, পরেশ আচার্য, সমর দেব, খুরশিদ আলম, নুরুল ইসলাম সানি, রাশেদুল আওয়াল শাওন, জোয়ারদার সাইফ, তামান্না ইসলাম, রুণা লাইলা, তানভীর হোসেন সামদানী, কল্যাণ চৌধুরী, তানজুম আরা পল্লী, কাওসার রাজীব, আতিকুর রহমান ও এরশাদ হাসান। এদের বাইরে গত ৪০ বছরে প্রায় ৭০ অভিনেতা বিভিন্ন পর্যায়ে এ নাটকে অভিনয় করেছেন। এদের মধ্যে আবদুল্লাহ আল-মামুন, মোহাম্মদ জাকারিয়া, জহিরুল হক, আবদুল কাদের, তারিক আনাম খান, মিতা চৌধুরী, তারানা হালিম, রেখা আহমেদ, খায়রুল আলম সবুজ, আরিফুল হক, কাজী তামান্না, গোলাম রব্বানী, ঝুনা চৌধুরী, তবিবুল ইসলাম বাবু, আফরোজা বানু, শিরিন বকুল, শান্তা ইসলাম, তৌকির আহমেদ, আসিফ মুনীর প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
