ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সব্যসাচী দাশ

ঢাকায়জয়ার ব্যস্ততা

প্রকাশিত: ০৬:২১, ২৪ নভেম্বর ২০১৬

ঢাকায়জয়ার ব্যস্ততা

অভিনয়, নাচ-গান শিল্পের বহুমাত্রিকতার মধ্যে অন্যতম। এসব ক্ষেত্রে খুব কম জনই পারেন নিজের ভৌগোলিক সীমানা জয় করে অন্য সীমানায় নিজের শিল্প গুণ প্রতিষ্ঠা করতে। দৃঢ় বিশ্বাস, শিল্পকর্মের প্রতি অগাধ ভালবাসা, গভীর শ্রদ্ধাবোধ তবেই সম্ভব দিগবিজয়ী হওয়া। আমাদের দেশে এমন শিল্পী অহরহ তৈরি হয়নি। বিশেষ করে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের ক্ষেত্রে। তবে দেশ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ববিতা, গুশানারা চম্পা ছিলেন তাদের সময়ে অতিউজ্জ্বল। তাদের পরে অমন অলোক শিখা আর কেউ জ্বালায়নি। তবে কেউ কেউ ছিলেন ভিন্ন। এমনি এক আলাদা শিল্প সত্তার গুনী শিল্পী জয়া আহসান। নিজের সুশ্রী সৌন্দর্য, সার্বক্ষণিক মুখে লেগে থাকা আঠালো মিষ্টি হাসি ও সুভাষিনী তিনি। দীর্ঘ সময় ক্যামেরা বন্দী হয়ে আমাদের নজর কেড়ে আসছেন। তিনি এখন মডেল তারকা কিংবা নাট্যাভিনেত্রীর উর্ধ্বে। তিনি এখন বিগ স্ক্রীনের বড় তারকা। ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশেই সমানতালে বড় পর্দায় অভিনয় করছেন। সত্য বলতে তিনি এখন আর কেবল বাংলাদেশের দর্শকের অভিনেত্রী নন। তিনি এখন পুরোদস্তুর ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রেরও গুণী অভিনেত্রী। কোয়েল মল্লিক, শুভশ্রীরা শ্রাবন্তী এমন বহুল জনপ্রিয় বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের নায়িকাদের থেকে আলাদা। নিজের জাত অল্পতেই চিনিয়েছেন। টি-টাউনের সমৃদ্ধ দর্শক মহলে। সৃজিত মুর্খাজি, কৌশিক গাঙ্গুলী, ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরী, অরিন্দম শীল এর মত আন্তর্জাতিক পুরস্কার জয়ী মেধাবী চলচ্চিত্র পরিচালকের নির্ভরযোগ্য আর্টিস তিনি। বলতে গেলে সারা বছর ব্যস্ত থাকেন এপার ওপার দুই বাংলার বড় ক্যানভাসে। তিনি আত্মবিশ্বাসী, দৃঢ়চেতা ও উচ্চ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ। দেশ, কালের সীমানা পেরোতে যতখানি সাহস ও যোগ্যতা থাকা চাই সবটাই তার কাছে গচ্ছিত আছে। যখন যেখানে যতটুকু দরকার ঠিক ঠিক প্লে করেন তিনি। জয়ার প্রথম বড় পর্দায় পর্দাপন ছিল একেবারে অন্যরকম। ২০০০ সালে ঢাকা শহরের কয়েকজন তরুণ ব্যাচেলদের জীবনযাপন, তাদের কল্পরাজ্যের ভাবনা চিন্তার সঙ্গে বাস্তব সমাজ-সামাজিকতা। এমন ভিন্ন গল্পের সারথি ছিলেন জয়া আহসান। এরপর অর্ধযুগের দীর্ঘ বিরতি। দর্শক কিংবা পরিচালক কার মনেই ধুলের আস্তরণ জমেনি তার এই লম্বা বিরতিতে। এক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অন দ্য রাইট ওয়ে। অর্থাৎ ২০১০ সালে দ্বিতীয়দফা করলেন ‘ডুব সাঁতার’ ১১তে করলেন ‘ফিরে এসো বেহুলা’। একই বছর সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস নিষিদ্ধ লোবান এর কাহিনী অবলম্বনে নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু নির্মাণ করেন ‘গেরিলা’ চলচ্চিত্র। বিলকিস বানু ছিল ওই গল্পের মূল চরিত্র। তিনি করেছিলেন বিলকিস বানুর চরিত্র। এই ছবিতে তার অর্জন ছিল আকাশচুম্বি। ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী, জাতীয় চলচিত্র পুরস্কার। পাশাপাশি আরো একাধিক পুরস্কার তুলে ফেলেন তার শোকেজে। উজ্জ্বল আলো পড়ে তার চলচ্চিত্রে অভিনয় ক্যারিয়ারে। পরের বছর চোরাবালির ফাঁদে ফেলে আবারও সোকেজ সাজান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর ক্রেস্ট দিয়ে। সঙ্গে অন্যান্য মনিহারতো আছেই। ভাগ্য তার সুপ্রসন্ন। এমনটা সত্যই বিরল। তবে এসব অর্জন তার যোগ্যতা সম। তা বলার অপেক্ষা রাখেনা । জয়ার ডাক আসে সুদুর ওপার থেকে তুলনামূলক বড় প্লাটফর্মে। জয়া ভাবেনি, পিছুও হাটেনি। সোজা অগ্রসর হন পশ্চিমে। নতুন আখ্যান রচনায়। অর্বত, একটি বাঙালি ভূতের গপ্পো, রাজকাহিনী ঈগলের চোখের মত সমসাময়িক সমৃদ্ধ গল্পের ছবিতে অনন্য অভিনয় করে নিজস্ব ইমেজ ইতোমধ্যে তৈরি করেছেন। টি-টাউনে তিনি এখন রীতিমতো সেলিব্রেটি। বহিরাঙ্গনে যতই নাম যশ কিংবা খ্যাতি থাকুক না কেন ঢাকার চলচ্চিত্র তাকে সব সময় আকৃষ্ট করে। হয়তো এটা তার নারীর দুর্বলতা! কোলকাতা থেকে ঢাকার প্রাইওরিটি জয়ার কাছে অন্যরকম। তাইতো ব্যস্ত টি টাউন ছেড়ে তিনি এখন ব্যস্ত ঢাকায়। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্প নির্দেশক সামুরাই মারুফের আপকামিং চলচ্চিল মেসিডোনার শুটিংয়ে। প্রথমে অবশ্য এই ছবির নাম ছিল পারলে ঠেকা। পরর্বতীতে নাম বদলে রাখা হয় মেসিডোন। শিল্প নির্দেশক ও পরিচালক সামুরাই মারুফের সঙ্গে এর আগে ‘বারাক ওবামা’ নামে একটি নাটকে কাজ করেছেন জয়া আহসান। নাটকটি অবশ্য মুক্তি পায় নি। টালিউডে ইন্দ্রনীল রায় চেীধুরীর ভালবাসার সুবাস, কৌশিক গাঙ্গুলীর নতুন চলচ্চিত্রের টাইট সিডুলের ফাঁকে জায়া ঢাকার সিনেমায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। অভিনয় ক্যরিয়ারে জয়ার প্রাপ্তি অসামান্য । বাংলাদেশের মত ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রে ও পেয়েছেন যথাযথ সম্মান। কুড়িয়েছেন শ্রেষ্ঠ নবীন চলচ্চিত্র অভিনয় শিল্পীর পুরস্কার, ফেয়ার ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড ইস্ট এবং শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়ের জন্য টেলি সিনে পুরস্কারে মত অ্যাওর্য়াড। এসব পুরস্কার তার আভিনয় ক্যারিয়ার অতিউজ্জ্বল করেছে। তিনি জাতিসংঘের শুভেচ্ছা দূত। কান আর্ন্তজাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সম্মানিত অতিথি। সবমিলে একটি সফল সমৃদ্ধ ক্যরিয়ার তার । এসবের সুবাদে হয়তো তাকে আরো বড় কোন প্লাটফর্মে পেয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। এমনটাই আশা তার ভক্তদের।
×