ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কলাপাড়ায় ফ্রিস্টাইলে কোচিং বাণিজ্য ॥ নীতিমালা মানছে না কেউ

ব্যয় মেটাতে অভিভাবকরা দিশাহারা

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৪ নভেম্বর ২০১৬

ব্যয় মেটাতে অভিভাবকরা দিশাহারা

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ২৩ নবেম্বর ॥ চলছে ফ্রি স্টাইলে জমজমাট কোচিং বাণিজ্য। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষিত নীতিমালার তোয়াক্কা না করে শিক্ষকদের চিহ্নিত সিন্ডিকেট পৌরশহরসহ গ্রামের হাট-বাজারে গড়ে তুলেছে কোচিং সেন্টার। কলাপাড়া উপজেলায় অর্ধশতাধিক কোচিং সেন্টার গড়ে উঠেছে। কোচিং সেন্টার পরিচালনাকারী শিক্ষকদের কাছে শিক্ষার্থীরা জিম্মি হয়ে আছে। ক্লাসে নামেমাত্র পাঠদান চলে। তাই সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষকের কাছে ওই বিষয় ফের ১২ মাস কোচিং ক্লাস করতে বাধ্য হচ্ছে। কলাপাড়ায় দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ুয়াদের কোচিং সেন্টার নির্ভরশীল হতে হচ্ছে। ফলে কলাপাড়ার সর্বত্র শিক্ষার্থীদের ভরসা রাতের স্কুল। আইন-কানুনের তোয়াক্কা নেই এসব বন্ধে। শিক্ষার্থীরা থাকছে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দৌড়ের ওপর। প্রাইভেট কিংবা কোচিং সেন্টারের শিক্ষকদের ধাওয়ার ওপর। গড়ে শিক্ষার্থী পিছু ১০০০-১৫০০ টাকা হারে আদায় করে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও রহস্যজনক কারণে এদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এছাড়া কোচিং বাণিজ্য বন্ধে কলাপাড়ায় নেই কোন মনিটরিং কমিটি। ফলে প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে এসব কোচিংবাজ শিক্ষকরা নিজেদের বাসায় ব্যাচ করে প্রাইভেটের আদলে কিংবা বাড়ি ভাড়া করে সকাল থেকে রাত দশটা পর্যন্ত নির্বিঘেœ চালিয়ে যাচ্ছে কোচিং বাণিজ্য। জানা গেছে, নাচনাপাড়া এলাকায় মর্নিং সান কোচিং সেন্টার, উম্মুলকুরা কোচিং সেন্টার, এতিমখানা এলাকায় রোজ গার্ডেন কোচিং সেন্টার, সমাজকল্যাণ রোডে এসএইচ টিচিং হোম, ইসলামপুর রোডে প্রতিভা কোচিং সেন্টার, কুমারপট্রি এলাকায় কলাপাড়া কোচিং সেন্টার ছাড়াও রহমতপুর, নজরুল ইসলাম সড়ক, চিংগড়িয়া, আখড়াবাড়ি সড়ক, কর্মকার পট্টি, কুমার পট্টি, সবুজ বাগ, কলেজ রোড, অফিস মহল্লাসহ শহরের বেশ কয়েকটি আবাসিক এলাকায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের একাধিক শিক্ষক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা উপেক্ষা করে চালাচ্ছে কোচিং বাণিজ্য। একই চিত্র মহিপুর থানা শহর ও কুয়াকাটা পৌরশহরে। এছাড়া লালুয়ার বানাতিপাড়া, বালিয়াতলীর বাবলাতলা, চাপলী বাজারসহ অধিকাংশ স্কুল-কলেজের আশপাশে গড়ে তোলা হয়েছে কোচিং সেন্টার। শিক্ষকদের পরিচালিত কোচিং সেন্টারে না পড়লে শ্রেণিকক্ষে শারীরিক-মানসিক নির্যাতনসহ পরীক্ষার খাতায় ও ব্যবহারিক বিষয়ে নম্বর কমিয়ে দেয়া হয়-এমন এন্তার অভিযোগ রয়েছে। এতে দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিদ্যালয় বিমুখ হয়ে পড়ছে। এছাড়া শহরের আবাসিক এলাকায় রাত দশটা পর্যন্ত চলমান এসকল কোচিং সেন্টারের উঠতি বয়সের শিক্ষার্থীরা যথাযথ নজরদারির অভাবে বিপথগামী হয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ছে। মেয়ে শিক্ষার্থীরা বখাটেপনার ঝুঁকিতে চলাচল করছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ রুহুল আমিন জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে কোচিং বাণিজ্য বন্ধে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। যে সমস্ত শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন তিনি।
×